দেশের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিতার শিকার। যাদের মধ্য ৪৩ শতাংশ তরুণ। এছাড়া ২৭ শতাংশ কিশোর প্রতিবন্ধী রয়েছে। প্রবীণদের মধ্যে প্রতিবন্ধীর হার মাত্র ৪ শতাংশ। প্রতিবন্ধী তরুণদের বেশিরভাগই অনেকটা বন্দী জীবন কাটায়। যেন পুরো পৃথিবীতেই তারা অবাঞ্ছিত, কোথাও তাদের ঠাঁই নেই। এদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজে মূল স্রোতে না আনতে পারলে দেশের স্বাভাবিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে।
কাওরান বাজারের ডেইলি স্টার মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে গতকাল রবিবার এ তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন ও গবেষণা সংস্থা (ডিআরআরএ) যৌথভাবে সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে ‘স্বাস্থ্যসেবার প্রতিবন্ধীদের প্রবেশগম্যতা’ শীষক ধারণাপত্র তুলে ধরেন আয়োজক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ মানসিক, ২৩.৭৬ শতাংশ কানে কম শোনে ও কথা বলতে পারে না, ২১.৭৩ শতাংশের বুদ্ধি নেই, ১০.৪১ শতাংশ শারীরিক, ৭.৩৮ শতাংশ অন্ধত্বের শিকার। বাকিরা বিভিন্ন ধরনের জটিলতার কারণে প্রতিবন্ধী।’ প্রতিবন্ধিতার শিকার হওয়ার কারণগুলোও তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ১১.৪১ শতাংশ অপুষ্টি, ১৩.৮৬ শতাংশ বয়সের কারণে, ১২.২৪ শতাংশ জন্মগত জটিলতায়, ৩০.৭ শতাংশ দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক পরিশ্রম ও বাকিরা দুর্ঘটনাজনিত কারণে প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়েছেন।’
ধারণাপত্রে বলা হয়, নারীদের তুলনায় পুরুষরা বেশি প্রতিবন্ধিতার শিকার। দেশের প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ৫৭.৫০ শতাংশ পুরুষ ও ৪২.৫০ শতাংশ নারী প্রতিবন্ধী। জেলা শহরের মধ্যে চট্টগ্রামে প্রতিবন্ধীদের হার সবচেয়ে বেশি। এখানে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ৬৩.৯ শতাংশ পুরুষ ও ৩৬.১০ শতাংশ নারী। এরপর রয়েছে রাজধানী ঢাকা। ঢাকায় প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ৬১.৫০ শতাংশ পুরুষ ও বাকিরা নারী। এরপর মানিকগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধী রয়েছে।’
গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল-ইসলাম।
সায়মা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, প্রতিবন্ধীদের সাধারণ মানুষের মতো বাঁচার অধিকার রয়েছে। তাদের সমস্যা দূরীকরণে পারিবারিক পর্যায় থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহলের বিশেষ মনোযোগই মূল হাতিয়ার। শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের অবহেলা না করে তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন।’ তিনি বলেন, শারিরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনে বাংলাদেশ সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধীদের চিহ্নিতকরণ, তাদের কাউন্সিলিং প্রদান, তাদের জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা, কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করাসহ বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। আরো বক্তব্য রাখেন, সংসদ সদস্য নাইমুর রহমান দুর্জয়, মীর মোশতাক আহমদ রবি, কবি কাজী রোজী প্রমুখ।