দারিদ্র্য বিমোচনে আসছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক

অক্টোবর মাসে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। ৩১ অক্টোবর এ ব্যাংকের কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প কার্যক্রম পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে স্থানান্তরের খসড়া রোডম্যাপের ওপর অনুষ্ঠিত পর্যালোচনা সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিতে সভার সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি মিললে ওই দিনই পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের তারিখ চূড়ান্ত করা হবে।

জানা গেছে, এ ব্যাংকের কার্যক্রম একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সমিতির সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সমিতির সদস্যদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা ও তাদের উদ্যোক্তা তৈরিতে প্রয়োজনীয় ঋণ দিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহিতের মাধ্যমে গ্রামীণ দারিদ্র্য দূরীকরণই হবে এ ব্যাংকের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এজন্য ব্যাংকের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে সমিতির সদস্যদের প্রতিদিন বাধ্যতামূলক ২ টাকা জমা রাখতে হবে। ওই টাকার বিপরীতে বছর শেষে লভ্যাংশ পাবেন তারা। এছাড়া ব্যাংক থেকে সমিতির সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় ঋণ সুবিধা পাবেন। পাশাপাশি যে কোনো ব্যবসায়িক পরামর্শ পাবেন তারা।

এ বিষয়ে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান মিহির কান্তি মজুমদার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প কার্যক্রম পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে স্থানান্তরের যে রোডম্যাপ করা হয়েছে তাতে এ ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে ৩১ অক্টোবর। আমরা সে অনুযায়ী কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করতে চাই। সে অনুযায়ী ব্যাংকের জনবল কাঠামো, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতাধীন সমিতির সদস্যদের মধ্য থেকে পরিচালক নির্বাচন, ব্যাংক পরিচালনার ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ও কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচালনার চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। এরই মধ্যে বেশকিছু অগ্রগতিও হয়েছে। গত মাসে ব্যাংকের জনবল কাঠামো অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সমিতির সদস্যদের থেকে পরিচালক নির্বাচনে পরিচালক নির্বাচন বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা শিগগিরই অনুমোদন হবে। এছাড়া ব্যাংক পরিচালনার জন্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ও কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচালনার প্রবিধান তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরও জানান, সারা দেশের ৪৮৫ উপজেলায় ক্রমান্বয়ে ব্যাংকের শাখা খোলা হবে। এজন্য ১০০ উপজেলায় ব্যাংকের ভবন করা হয়েছে। আরও ২০০ উপজেলায় ভবন নির্মাণ কাজ চলছে, যা এ বছরের মধ্যেই শেষ হবে।

জানা গেছে, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় ৪০ হাজার ২০০টি সমিতি রয়েছে। এসব সমিতির সদস্য সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। তবে ব্যাংক গঠনের পরও নতুন করে সমিতি আসতে পারবে। এজন্য নতুন কোনো সমিতিকে ব্যাংকের ২৪০টি শেয়ার কিনতে হবে। প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ১০০ টাকা হিসাবে একটি সমিতিকে এজন্য পরিশোধ করতে হবে ২৪ হাজার টাকা। এদিকে গত মাসে ব্যাংকটির জনবল কাঠামো অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ব্যাংকটি থেকে ১০ হাজার জনবল চাওয়া হলেও শেষমেশ তা ৮ হাজার ৮২৫টিতে সীমাবদ্ধ রেখে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে প্রকল্প নিয়োজিত জনবলের মধ্য থেকে যোগ্য ও অভিজ্ঞদেরই পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে স্থানান্তর করা হচ্ছে। অবশিষ্ট জনবল সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে নিযুক্ত হবে। তবে প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাংক পরিচালনায় অভিজ্ঞ না হওয়ায় ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগ থেকে দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১৫ সিনিয়র ব্যাংকারকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে প্রেষণে পদায়নের কথা ভাবছে সরকার।

অন্যদিকে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়ধীন ৪৮৫ উপজেলায় ব্যাংকের শাখা খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০ অক্টোবরের মধ্যে নূ্যনতম ২০ উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ব্যাংকের শাখা খোলা হচ্ছে। ১ নভেম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে অন্য উপজেলাগুলোতে শাখা খোলা হবে। তবে শাখা খোলার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেবে ব্যাংকটি।

২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর প্রকল্পের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ৮ জুলাই পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আইন পাস হয়। একই বছরের ৩১ আগস্ট এসআরও জারির মাধ্যমে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পকে স্থায়ী দানরূপে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়।

জানা গেছে, প্রায় ৩ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ৪৮৪ উপজেলা চার হাজার ৫০৩টি ইউনিয়নের ৪০ হাজার ৫২৭ গ্রামে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। এর মাধ্যমে ২২ লাখ দরিদ্র পরিবার তথা এক কোটির অধিক জনগণ উপকৃত হচ্ছে।