এডিবির কৌশলপত্রে গুরুত্ব পাচ্ছে সড়ক, রেল ও বিদ্যুৎ খাত

২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ পাঁচ বছরে বাংলাদেশের কোন কোন খাতে বিনিয়োগ করা হবে, প্রতিবারের ধারাবাহিকতায় এবারও তার একটি কৌশলপত্র তৈরি করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ২০১১ সাল থেকে শুরু হওয়া পাঁচ বছর মেয়াদি কান্ট্রি প্রোগ্রাম স্ট্র্যাটেজির (সিপিএস) মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে। সে জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি নতুন কৌশলপত্র প্রণয়ন করতে যাচ্ছে দেশের উন্নয়নে অন্যতম অংশীদার ম্যানিলাভিত্তিক সংস্থাটি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানান, সরকারের সপ্তম পঞ্চমবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে মিল রেখেই নতুন কৌশলপত্র তৈরি করা হচ্ছে। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সরকার যেসব খাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, এডিবিও সেসব খাতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। কর্মকর্তারা জানান, আসছে কৌশলপত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে সড়ক, রেল ও বিদ্যুৎ খাত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে সংযোগ বাড়ানোর বিষয়টি। এ ছাড়া গত ১৫ জুন থিম্পুতে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে চুক্তি হওয়ায় এর গুরুত্ব বেড়েছে বহুগুণ। এসব কারণে আঞ্চলিক যোগযোগ খাতেই বেশি বিনিয়োগ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে ইআরডির এডিবি শাখার প্রধান (যুগ্ম সচিব) সাইফুদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই নতুন কৌশলপত্র প্রণয়ন করছে এডিবি। আগামী সিপিএসে সংযোগ খাত গুরুত্ব পেতে পারে বলে জানান তিনি। আর সেটি হতে পারে আঞ্চলিক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে। সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী পাঁচ বছরে এডিবি কোন কোন খাতে ঋণ দেবে, সে বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেসব বৈঠকে সবার মতামত নেওয়া হয়েছে। চলতি সিপিএসে এডিবি থেকে যে ঋণ সহায়তা পাওয়ার আশা করা হচ্ছে, আগামী কৌশলপত্রে তার চেয়ে বেশি ঋণ পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। সংস্থাটির কৌশলপত্রে বাংলাদেশের বর্তমান চাহিদার বিষয়টি প্রতিফলিত হবে বলে জানান সাইফুদ্দিন আহমেদ।

ইআরডি কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী পাঁচ বছর মেয়াদি কৌশলপত্রে সংস্থাটির কাছ থেকে বেশি ঋণ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এ ঋণের পরিমাণ ৬০০ কোটি ডলার বা তারও বেশি হতে পারে। যদিও চলতি কৌশলপত্রে ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করা আছে ৫০০ কোটি ডলার। সে হিসাবে এডিবি থেকে ১০০ থেকে ১৫০ কোটি ডলার বেশি ঋণ পাওয়ার আশা করছে সরকার।

এডিবির ঢাকা কার্যালয়ের সূত্রগুলো বলছে, আসছে কৌশলপত্রে আঞ্চলিক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সক্ষমতা বাড়ানোসহ সাতটি খাতে ৬০০ কোটি ডলারেরও বেশি ঋণ দেওয়া হতে পারে বাংলাদেশকে। এডিবির অর্থায়নে আগামীতে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলো হলো-দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেল সংযোগ, সাসেক কানেকটিভিটি প্রোগ্রাম দুই-এর আওতায় হাতিকামরুল থেকে রংপুর পর্যন্ত ১৫৭ কিলোমিটার পাঁচ লেন সড়ক। এর মধ্যে চার লেন থাকবে বড় যানবাহন চলাচলের জন্য। আর এক লেনে থ্রি হুইলার, অটোরিকশাসহ অন্যান্য ছোট যানবাহনের চলাচলের জন্য থাকবে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে সিলেট পর্যন্ত পাঁচ লেন সড়ক নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে। রেলের ঢাকা-চট্টগ্রাম ২৩০ কিলোমিটার দ্বৈত গেজ উন্নয়ন, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি, এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আধুনিকায়ন, মহেশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতেও বড় আকারে বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে এডিবির।

এ ছাড়া দেশের পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করতে বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন, দক্ষ জনশক্তি তৈরি, মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়ন, আর্থিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, সুশাসন এবং পরিবেশন উন্নয়ন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সেচব্যবস্থার উন্নয়ন, বন্যা থেকে রক্ষা পেতে নদী তীর সংরক্ষণে বিশেষ পরিকল্পনা থাকছে এডিবির কৌশলপত্রে। প্রসঙ্গত, বর্তমানে এডিবির অর্থায়নে দেশে সাসেক প্রোগ্রাম এক, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন, তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

– See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/industry-business/2015/08/07/253343#sthash.c5XBLr5N.dpuf