জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশ

অপার সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিবেচনায় বাংলাদেশকে এশিয়ার ‘রাইজিং টাইগার’ বা উদীয়মান বাঘ হিসাবে দেখা হইতেছে। বিশ্বের ১১টি উদীয়মান অর্থনীতির দেশের তালিকায়ও আছে বাংলাদেশ। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকা সত্ত্বেও আমরা কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি ধরিয়া রাখিতে সক্ষম হইয়াছি। তৈরি পোশাক শিল্প এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স দুঃসময়েও আমাদের আলোর পথ দেখাইয়াছে। ইহার বাহিরে সম্প্রতি অর্থনীতির আরেকটি নতুন ও ক্রমসম্প্রসারণশীল ধারা আমাদের সাহস জোগাইতেছে। ইহা হইল বিকাশমান তথ্য প্রযুক্তি খাত। এই খাত দেশকে নিবিড় শ্রম-সহায়ক অর্থনীতি হইতে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে যুক্ত করিয়াছে। সম্প্রতি জাপানভিত্তিক আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন ‘দ্য ডিপ্লোম্যাটে’ প্রকাশিত এক নিবন্ধে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এই খাতের বিপুল সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করিয়াছেন। বিশ্বে আইটি খাতে বাংলাদেশ একদিন নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করিবে বলিয়া আমরাও আশাবাদী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন-২০২১’ গ্রহণের পর এক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হইয়াছে। অন্য কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতার জন্য সমালোচনা করা হইলেও এই খাতের সাফল্যকে নির্দ্বিধায় সকলে স্বীকার করিয়া লইয়াছেন। কেননা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন প্রক্রিয়া এতটাই দৃশ্যমান যাহা আলাদা করিয়া প্রচার কিংবা বিজ্ঞাপিত করার আবশ্যকতা নাই। সরকারি-বেসরকারি ডিজিটাল সেবা এখন ঘরে ঘরে পৌঁছাইয়া গিয়াছে। অনলাইনে কেনাকাটা হইতে শুরু করিয়া বিভিন্ন ফরম পূরণ, রেজাল্ট গ্রহণ, ই-মেইল, ইন্টারনেটের সামাজিক ব্যবহার ইত্যাদি এই দেশে আজ জনপ্রিয় হইয়া উঠিয়াছে। জেলা তথ্য বাতায়ন, জেলা-ই-সেবা কেন্দ্র, ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র, ই-বুক তৈরি, জাতীয় ডাটা সেন্টার ইত্যাদি সরকারি উদ্যোগ আমাদের দেশে এক নীরব বিপ্লব সৃষ্টি করিয়াছে। দেশে প্রতি বত্সর ই-বাণিজ্য ৫০ শতাংশ হারে বাড়িতেছে বলিয়া জানা যায়। বর্তমানে ১৬ কোটি ৫ লক্ষ মানুষের এই দেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১০ কোটি এবং মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ কোটি ৯০ লক্ষাধিক। এই বিপুল সংখ্যক তথ্য-প্রযুক্তির জ্ঞাননির্ভর জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক। এমনকি তাহারা দেশে সামাজিক রূপান্তরেও বিরাট ভূমিকা পালন করিয়া চলিয়াছেন।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন আয়ের দেশ হইতে নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের দেশে উন্নীত হইয়াছে। ইহার পশ্চাতে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের অবদান অনস্বীকার্য। এক্ষেত্রে আমাদের ভরসাস্থল তরুণ প্রজন্ম। তাহারা প্রবলভাবে প্রযুক্তিমুখি। তাহারা নানা উদ্যোগের মাধ্যমে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখিতেছেন। জমির স্বল্পতা ও বৃহত্ শিল্প-কল-কারখানা নির্মাণে সীমাবদ্ধতার কারণে কৃষি ও বৃহত্ শিল্প নিয়া বর্তমানে আমরা খুব আর আশাবাদী নই, তবে তথ্য প্রযুুক্তি খাতের আরও বিকাশ সাধন এবং দক্ষ জনবলের সযত্ন লালন একান্ত কাম্য। তাহারাই আগামীর উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নের ধারক ও বাহক হইতে পারেন। গত জুন মাসে বাংলাদেশ সরকার দেশে একটি বৃহত্তর প্রযুক্তি পার্ক এবং একটি কমপ্লেক্স গড়িয়া তোলার ঘোষণা দিয়াছেন। ইহাতে তথ্য প্রযুক্তি খাতে দক্ষ ৬০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হইবে। এই হাইটেক পার্ক তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর শিল্পের বিকাশ সাধন ও সর্বোপরি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক হইবে। এসব স্বপ্ন ও কর্মযজ্ঞের বিশাল আয়োজন দেখিয়া আমরা বলিতে পারি, আগামীতে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করিয়া দাঁড়াইবে এবং কোন অশুভ শক্তি আর আমাদের দাবাইয়া রাখিতে পারিবে না।