উড়োজাহাজ তৈরির পর এবার দক্ষ কারিগর ও দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানার অবসরে যাওয়া শ্রমিকদের হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে ছোট্ট সোনামণিদের প্রিয় খেলনা। দেখতে চমৎকার, নির্মাণশিল্পে অনন্য। চীন বা ভারতের খেলনার চেয়ে দামে সস্তা। বাঙালি-বিহারির শহর সৈয়দপুরে এসব তৈরি হচ্ছে। শহর এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে বিহারিদের। আর আটকে পড়া বিহারি ক্যাম্পে অবস্থানরত বিহারিরা খুব অনুকরণপ্রিয়। যে কোনো জিনিস একবার দেখলে তা তৈরি করে ফেলে। কয়েক বছর আগে এক অবাঙালি যুবক তৈরি করেছিলেন উড়োজাহাজ।
শহরের বাঙালিপুর বিহারি ক্যাম্পের প্রায় শতাধিক পরিবারের নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোররা তৈরি করছে বাস, ট্রাক, উড়োজাহাজ, পিস্তল, ঘূর্ণি, নানা রকমের পুতুল, বিভিন্ন পশু-পাখিসহ হরেক রকমের খেলনা। তারা জানান, মেলা ও উৎসব উপলক্ষে এসব খেলনা সবচেয়ে বেশি চলে। তখন দিনরাত কাজ করে পাইকার বা ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করতে হয়। আটকে পড়া বিহারিদের ক্যাম্পে থাকার কারণে কোনো ব্যাংক ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা তাদের ঋণ সহায়তা দিতে চায় না। শুধু একটুখানি সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই খেলনা তৈরি শিল্প লাভজনক খাতে পরিণত হতে পারে বলে জানিয়েছেন খেলনা ব্যবসায়ীরা। তারা আরও জানান, শুধু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ খেলনা তৈরির ব্যবসার প্রসার ঘটছে না।
অনেক ক্ষেত্রে কারিগররা খেলনা তৈরি করে দোকানে দোকানে ও মেলায় বিক্রি করে নিজেদের পুঁজি উঠিয়ে আনেন মাত্র। খেলনাগুলো বিদেশী খেলনার চেয়ে কোনো অংশে কম না হওয়ায় চাহিদাও থাকে প্রচুর।
সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান জাওয়াদুল হক এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে জানান, সারা দেশের ন্যায় সৈয়দপুরও ভরে গেছে চীন ও ভারতের খেলনা দিয়ে। যা আমদানি করতে কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চীন বা ভারতের যেসব খেলনা দেশে আমদানি করা হচ্ছে তার চেয়ে অনেক ভালো খেলনা সৈয়দপুরেই তৈরি করা হচ্ছে। শুধু দরকার সরকারের সুদৃষ্টি। সরকারের পক্ষ থেকে সুযোগ ও সহযোগিতা পেলে প্লেন, রকেট, হেলিকপ্টারসহ অতি উন্নতমানের খেলনা সৈয়দপুরেই তৈরি করে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। কিন্তু অর্থাভাবে সব সম্ভাবনাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। দ্য বণিক সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলী সরকার জানান, বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দারা কিছু না কিছু করে সংসার চালানোর চেষ্টা করেন। প্রতিবছর যে অর্থ দিয়ে চীন ও ভারত থেকে খেলনা আমদানি করা হয় সে অর্থ দিয়ে যদি বিদেশ থেকে কম্পিউটারাইজড মেশিন দেশে আনা হয় তাহলে অনেক ভালো খেলনা দেশেই তৈরি হবে এবং খরচও পড়বে তুলনামূলকভাবে অনেক কম। চীন ও ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলনার ব্যবসা করা যাবে দেশ-বিদেশে। তিনি ব্যাংক ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে সহজ শর্তে এ খাতে ঋণ প্রদানের অনুরোধ জানান।
এ ব্যাপারে পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, সৈয়দপুরের তৈরি খেলনার চাহিদা বেড়েছে দেশে ও বিদেশে। লাভজনক শিল্প খাত হিসেবে এ শহরের খেলনা কারিগরদের সরকারের পক্ষ থেকে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে শুধু উত্তরাঞ্চল নয়, সারা দেশে খেলনা শিল্পের চিত্রই পাল্টে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, খেলনা তৈরির যন্ত্রপাতি আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমদানিকৃত যন্ত্রপাতি এলে সৈয়দপুরের মানুষ খেলনা শিল্পে বিপ্লব ঘটাতে পারবে এবং এ খেলনা শিল্প লাভজনক খাতে পরিণত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।