মুদ্রানীতি ও বাজেটের প্রভাব : ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার

২০১৫-১৬ অর্থবছরের ‘পুঁজিবাজারবান্ধব’ বাজেট এবং পরবর্তী সময়ে বাজারসহায়ক মুদ্রানীতির কারণে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কাটতে শুরু করেছে আস্থাহীনতা। বাজারে আসছে নতুন ফান্ড। দূর হচ্ছে তারল্য সংকট। প্রতিনিয়তই বাড়ছে সূচক ও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম। পাশাপাশি বাড়ছে ব্যক্তি, বিদেশি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে মোট ১৭ দিন লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১০দিন উভয় বাজারে উত্থান হয়েছে। ৬দিন সূচক কমেছে সামান্য। আর একদিন সূচক কমেছে ব্যাপক। এ সময়ে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১৩ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। সূচক বেড়েছে ২২৯ পয়েন্ট। লেনদেন ৫শ’ কোটি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮শ’ কোটি টাকা। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজেট ও মুদ্রানীতির পাশাপাশি কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এছাড়াও আইসিবিসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে চাঙ্গা হচ্ছে বাজার।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান মানবকণ্ঠকে বলেন, পুঁজিবাজারে সব সূচক ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৩ ও ১৪ সালের তুলনায় ১৫ সালে বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের পারফর্মেন্স ‘পজেটিভ’। তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক অবস্থার উন্নতির ফলে প্রাইভেট সেক্টরে বিনিয়োগ বাড়ছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এর ফলে প্রবৃদ্ধি ও তারল্য বাড়ছে। ব্যাংকের সুদ হার কমেছে। এর ফলে বাজারে নতুন ফান্ড আসছে। আশা করছি পুঁজিবাজারেও তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজারে বেশ কিছু প্রণোদনা দেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের পজেটিভ মুদ্রানীতি ঘোষণায় ব্যক্তি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে ফিরছেন।
পুঁজিবাজারের জন্য বিশেষ চমক : পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি দেশি ও বিদেশি কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার কমানোর পাশাপাশি তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত এই লভ্যাংশ আয়ের করমুক্ত টাকার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও কোম্পানি বা অংশীদারী ফার্ম থেকে বাজারে বিনিয়োগ করে অর্জিত মুনাফার ওপর উৎসে কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বাজার ভালো হওয়ার প্রত্যাশা করে বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য বেশকিছু ছাড় দেয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে নিশ্চিতভাবেই লাভবান হবে পুঁজিবাজার।
সঞ্চয়পত্র ও মুদ্রানীতির ঘোষণা : পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা রাখতে ৩ ও ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের পারিবারিক ও পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ ও ১৩ দশমিক ৫০ শতংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ ও ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি মুদ্রানীতিতে ব্যাংকে সুদের হার আরো কমিয়ে আনতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে পুঁজিবাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল বলেন, বেশি ঋণ দেয়ার চেয়ে মানসম্পন্ন ঋণের দিকে নজর দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার কথা বলা হচ্ছে এবং একই সঙ্গে তাদের দক্ষতা বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। এ দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই ঋণের সুদের হার কমে আসবে। আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার পাশাপাশি পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়ক ভূমিকা অব্যাহত থাকবে।
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, গত ৬ মাস দরপতন শেষে রমজানের ঈদকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে থাকায় বিনিয়োগকারীরাও যাচাই বাছাই করে শেয়ার কিনছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ার থেকে বিনিয়োগকারীরা সচেতন থাকার পাশাপাশি কারসাজি চক্র থেকে বাজারকে মুক্ত রাখলে আরো কিছুদিন ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে।
গতকালের বাজার : এদিকে আগের দিনগুলোর ধারাবাহিতকায় দিনভর সূচকের ওঠানামা শেষে গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮০৬ কোটি টাকা। যা আগের দিনের চেয়ে ১৭৭ কোটি টাকা বেশি। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের চেয়ে ৮ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৮০২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪১টির, কমেছে ১৪৯টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক আগের দিনের চেয়ে ৩০ পয়েন্ট বেড়ে ১৪ হাজার ৭৪৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিন সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬০ কোটি টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১০০টির, কমেছে ১৩৩টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮ কোম্পানির শেয়ারের।