মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো শুরু হতে পারে সেপ্টেম্বরে

প্রতিনিধি দল আসছে ৯ আগস্ট

বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় বিজনেস টু বিজনেস (বি টু বি) পদ্ধতিতে শ্রমিক পাঠানো সেপ্টেম্বর থেকেই শুরু হতে পারে। এ নিয়ে আগ্রহী শ্রমিক ও রিক্রুটিং এজেন্সি সংশ্লিষ্টদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রা জানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর পদ্ধতিসহ প্রয়োজনীয় নীতিমালা চূড়ান্ত করতে ৯ আগস্ট একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে। নীতিমালা চূড়ান্তের পর এ মাসেই রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারবে। এর ফলে সেপ্টেম্বর থেকেই শ্রমিক পাঠানো শুরু হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগের পদ্ধতি ঠিক করতে একটি কারিগরি প্রতিনিধি দল তিন দিনের সফরে ২৯ জুলাই ঢাকা আসার কথা ছিল। বিশেষ কারণে ওই সময় পরিবর্তন করে ৯ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ওহাব বিন মোহাম্মদ ইয়াসিনের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে। বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক কীভাবে বাছাই করা হবে, তাদের নিরাপত্তা, ইন্স্যুরেন্সসহ নানা সুবিধা নিশ্চিতসহ যেতে কত খরচ হবে- এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বৈঠকে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও পরিদর্শন করবে প্রতিনিধি দল। বায়রার সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, ৯ আগস্ট মালয়েশিয়া থেকে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে টিম আসছে। তারা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বায়রার সঙ্গে বৈঠক করবেন। মূলত কোন পদ্ধতিতে শ্রমিক যাবে সে বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে। দুই পক্ষের প্রস্তাবনা পেশ ও আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। এরপর আমাদের বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষ করতে এ মাস লেগে যাবে। সেপ্টেম্বর থেকে শ্রমিক পাঠানো শুরু হতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বায়রা সভাপতি বলেন, মালয়েশিয়ায় কম খরচে শ্রমিক পাঠানো হবে। সরকারিভাবে যেখানে ৪০ হাজার টাকা খরচ হতো, সেখানে বেসরকারিভাবে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাগতে পারে। তিনি বলেন, সব ধরনের শ্রমিক নেবে মালয়েশিয়া। তাদের বেতন হবে ৯০০ রিংগিত (২০ হাজার টাকা)। মন্ত্রণালয়ের ডাটাবেজে যাদের নিবন্ধন রয়েছে তাদের মধ্য থেকে এবং এর বাইরেও বাছাই করা ব্যক্তি মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পাবেন। প্রতি বছর সেখানে ৫ লাখ শ্রমিক পাঠানোর কথা থাকলেও এ বছরের বাকি সময়ে এই লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল জুনের শেষ সপ্তাহে মালয়েশিয়া সফর করে। তখন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জাহিদ হামিদির সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। বৈঠকে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জি টু জি পদ্ধতি ছাড়াও বাণিজ্যকভাবে (বি টু বি) তিন বছরে ১৫ লাখ শ্রমিক নেবে মালয়েশিয়া। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হয়েছিল, এ বছরই ৫ লাখ শ্রমিক যাবেন মালয়েশিয়ায়।

উল্লেখ্য, দুই দেশের মধ্যে ২০১৩ সালে সরকারি মাধ্যমে শ্রমিক পাঠানো তথা জি টু জি চুক্তি হয়। এর আওতায় তিন বছরে মাত্র সাড়ে ৭ হাজার শ্রমিক পাঠিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সরকারিভাবে কর্মী পাঠানোর উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ায় মানুষের মাঝে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে ভাসমান অবস্থায় মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার উপকূলে হাজার হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে বাংলাদেশীও রয়েছেন। এছাড়া থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পাচার বাংলাদেশীদের গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর বিষয়টি নাড়া দেয় সবাইকে। এর পরই বেসরকারি মাধ্যম তথা বি টু বি পদ্ধতিতে শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়।