সাবেক ছিটমহলের ৭ হাজার ৮০০ পরিবারে বিদ্যুৎ দেবে আরইবি

সাবেক ছিটমহলের ৭ হাজার ৮০০ পরিবারে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিইআরবি)। ওই পরিবারগুলোকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে ১৫০ কিলোমিটার নতুন লাইন নির্মাণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপকদের নির্দেশ দিয়েছেন আরইবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর খিলক্ষেতে বিআরইবির প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জিএম সম্মেলনে আরইবি চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশনা দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সারা দেশে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দিতে আরইবি অনেক কাজ করছে। তবে গ্রাহক সন্তুষ্টির জন্য আরইবিকে আরো কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশে কোনো লোডশেডিং নেই। কিন্তু বিতরণ সিস্টেমের কারণে বিশেষ করে গ্রামে পল্লী বিদ্যুৎ ঠিকমতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে জিরো লোডশেডিং থাকার পরও অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। দেখা গেছে, একটি ফিডারে সমস্যা থাকায় বা ছোট কোনো সমস্যার কারণে এটা হচ্ছে। ফলে সরকারের অর্জনগুলো কাজে আসছে না। এ ব্যাপারে সমিতিগুলোকে কাজ করতে হবে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোতে দুর্নীতি হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, গ্রামে-গঞ্জে আমি নিজে দেখেছি এবং খবর পেয়েছি লাইনের খুঁটি হেলে পড়ে আছে। ঠিকাদাররা তারের খরচ কমাতে মানুষের বাড়ি ও খেতের ওপর দিয়ে তার টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কাজের মান খারাপ করছে। দালালরাও অনেক সমস্যা তৈরি করছে বিভিন্ন সমিতিগুলোতে। টাকা নিয়ে অনেকে লাইন দিচ্ছে। এ বিষয়গুলোর ওপর আপনাদের নজর রাখতে হবে। দরকার হলে দুর্নীতিবাজদের বের করে দিতে হবে। আমরা দ্রুত মন্ত্রণালয় থেকে কমিটি করে এসব ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
গ্রাহকসেবার প্রসঙ্গে নসরুল হামিদ বলেন, মাইডাস এবং পাওয়ার সেল মিলে একটি জরিপ করেছে; তাতে দেখা গেছে, ৭৬ শতাংশ জনগণ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সেবায় সন্তুষ্ট। কিন্তু ২৪ শতাংশ সন্তুষ্ট নন। অন্যদিকে দেখা গেছে, ৪০ শতাংশ গ্রাহক বলছেন, সেবা নিতে তাদের টাকা দিতে হয়। এগুলো বন্ধ করতে হবে। আমরা দেখতে চাই ১০০ শতাংশ
গ্রাহক সবদিক থেকে সন্তুষ্ট হোক।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে আরইবির গ্রাহক ১ কোটি ২০ লাখ। অথচ মাত্র ৫ হাজার গ্রাহকের প্রি-পেইড মিটার আছে। এটা হাস্যকর। এই সংখ্যা বাড়ানো দরকার। এটা করা গেলে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের চুরি কমবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেক জিএম অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন এলাকায় আপনাদের পিডিবি ও ওজোপাডিকোর সঙ্গে সমস্যা হচ্ছে। অভিযোগ এসেছে আরইবির অনেক এলাকায় এসব সংস্থা ঢুকে গ্রাহকদের বিদ্যুতের লাইন দিচ্ছে। এসব বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে। আমরা ভাবছি ডিমার্কেশন করে এলাকা ভাগ করে দেব যাতে একে অন্যের এলাকায় ঢুকতে না পারে।
তিনি বলেন, আপনারা অনেকে বলেছেন, লাইফ লাইনে (সর্বনিম্ন বিদ্যুৎ ব্যবহারের ধাপ) বিদ্যুতের দাম বাড়াতে। কিন্তু আমরা এটা করতে চাই না। সরকার বিদ্যুতে ভর্তুকি দিতেই থাকবে। যতদিন পর্যন্ত একটা জায়গায় না পৌঁছতে পারি ততদিন ভর্তুকি দেবে সরকার।
তিনি উপস্থিত জেনারেল ম্যানেজারদের উদ্দেশে বলেন, সরকার পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের স¤প্রসারণে সব ধরনের আর্থিক ও প্রশাসনিক সহায়তা দেবে। কিন্তু এ জন্য সবাইকে নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
আরইবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন বলেন, এ অর্থবছরে (২০১৫-১৬) দেশে ৩০ হাজার কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করে ৩০ লাখ পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন পাওয়ারসেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খান, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান কে এম হাসান, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল বেরুনী।