লক্ষ্মীপুর
লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর ভাঙন রোধে সেনাবাহিনীর বাঁধ নির্মাণের ফলে এলাকাটি নিরাপদ হয়ে উঠতে শুরু করেছে। সেনাবাহিনীর আন্তরিকতা ও নিরলস পরিশ্রমের ফলে এবার রামগতির সদর আলেকজান্ডারের প্রায় এক কিলোমিটার ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। বেসরকারি ঠিকাদার দিয়ে কাজ করানোর কথা থাকলেও এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনীর ১৯ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি) এ বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে। বিভিন্ন সরকারি ছুটি ও প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ১৯ ইসিবির ৬০ কর্মকর্তা ও সৈনিক কাজ করে যাচ্ছেন। এ কাজে ইসিবির নিয়োগ দেয়া ৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা তাদের সহযোগিতা করছেন। ফলে ভরা বর্ষায়ও লক্ষ্মীপুরের মানুষ অনেকটা স্বস্তিতে রয়েছে।
জানা গেছে, ৩৭ কিলোমিটার এলাকায় এক হাজার ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প একনেক অনুমোদন করে। গত বছর ওই প্রকল্পের সাড়ে ৫ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রাথমিকভাবে রামগতিতে এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কথা থাকলেও সাধারণ জনগণের কথা ভেবে সাড়ে ৩ কিলোমিটারের কাজ হাতে নেয় ইসিবি।
এর মধ্যে গত ৫ মাসে সাড়ে ৩ কিলোমিটার কাজের প্রায় অর্ধেক (৫০ ভাগ) সম্পন্ন হয়েছে। এক কিলোমিটার বাঁধের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। এ জন্য এই বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে আলেকজান্ডার আ স ম আবদুর রব সরকারি কলেজ, আলিয়া মাদরাসা, পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা ভবনসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও অসংখ্য ঘর-বাড়ি।
এদিকে ৩৭ কিলোমিটার এলাকার এখনো প্রায় ৩৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙন রোধে প্রকল্পে দ্রুত বরাদ্দের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
লক্ষ্মীপুর-৪ (কমলনগর-রামগতি) আসনের এমপি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বর্তমানে সাড়ে ৫ কিলোমিটার বাঁধের কাজ করা হবে। ভাঙনের কবল থেকে রামগতি-কমলনগরবাসীকে রক্ষা করতে ৩৭ কিলোমিটারের মধ্যে অবশিষ্ট অংশের কাজের বরাদ্দ পেতে তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বরাদ্দ পেলে জনগণের দাবি মতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজ করানো হবে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ১৯ ইসিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর হোসেন জানান, রামগতিতে তাদের সাড়ে ৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কথা রয়েছে। এসডব্লিউওর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল ওহাবের তত্ত্বাবধানে গত ৫ মাসে সাড়ে তিন কিলোমিটার বাঁধের ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা ও সার্বিক সহায়তায় এ ইউনিটের সব স্তরের সেনাসদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছেন।
শনিবার নদীভাঙন সম্পর্কে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় এলাকা রামগতির আলেকজান্ডার গ্রামের ইসমাইল হোসেন মানবকণ্ঠকে বলেন, ‘সেনাবাহিনী আঙ্গোরে ভাঙন তুন রক্ষা কইচ্ছে। হেতাগোরে দি পুরা কাজ শেষ কইত্তে অইব।’ স্বচ্ছ ও নিরলসভাবে কাজ করায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পুরো বাঁধের কাজ করানোর এমন দাবি করেন লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় লোকজন।