বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমানার পরিবর্তনের এক বছর পর বাংলাদেশের ভূমি সীমানারও পরিবর্তন হতে যাচ্ছে শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর।
দীর্ঘ ৪৪ বছর পর বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল ও অপদখলীয় জমির সমস্যার সমাধান হওয়ায় বাংলাদেশের মানচিত্রের পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ভূখণ্ডের পরিমাণ বাড়বে এবং বাড়বে এর নাগরিকের সংখ্যাও।
পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী সুন্দর, সুষ্ঠুভাবে ছিটমহল বিনিময় ও অপদখলীয় জমির হস্তান্তর ৩১ জুলাই সম্পন্ন হবে।’
আগামীকাল ৩১ জুলাই পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও নিলফামারী জেলার ছিটমহলগুলোতে বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হবে।
বাংলাদেশে ভারতের ১৭ হাজার ১৬০ একর আয়তনের ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতে বাংলাদেশের ৭ হাজার ১১০ একর আয়তনের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে। ভারতে সবগুলো ছিটমহল পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলায় অবস্থিত। এ ছিটমহলগুলোতে ২০১১ সালে একটি যৌথজরিপ চালানো হয় এবং ১৬২ ছিটমহলে ৫১ হাজার ৫৪৯ অধিবাসীকে চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে ৩৭ হাজার ৩৩৪ জন ভারতীয় বাংলাদেশে অবস্থিত ছিটমহলগুলোতে বাস করে এবং ১৪ হাজার ২১৫ জন বাংলাদেশি ভারতের ছিটমহলগুলোতে বাস করে।
এছাড়া এ মাসে আরেকটি যৌথজরিপ চালানো হয়। এর ফলাফল এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন পর্যন্ত ৯৭৯ জন ভারতে চলে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী নভেম্বরের মধ্যে তারা ভারতে চলে যাবে।
অপদখলীয় জমি মীমাংসার জন্য বৃহস্পতিবার ভারতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ও বাংলাদেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত পংকজ শরন ৩০টি স্ট্রিপ ম্যাপে স্বাক্ষর করেন।
এর আগে ২০১১-১২ সালে ১ হাজার ১১৪টি স্ট্রিপ ম্যাপে স্বাক্ষর করা হয়। মোট ১ হাজার ১৪৫টি স্ট্রিপ ম্যাপের মধ্যে ফেনী জেলার মুহুরিচরে ২ কিলোমিটার জায়গার স্ট্রিপ ম্যাপটি এখনও স্বাক্ষরিত হয়নি।
বাংলাদেশ ভারতকে ২ হাজার ৭৭৭ একর অপদখলীয় জমি হস্তান্তর করবে এবং ভারত বাংলাদেশকে ২ হাজার ২৬৭ একর অপদখলীয় জমি হস্তান্তর করবে।
বাংলাদেশের ভূখণ্ডের পরিমাণ কতটুকু বাড়বে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে কর্মকর্তাটি বলেন, গেজেট নোটিফিকেশনের পর এ বিষয়ে বলা যাবে এবং এ কাজটি করবে ভূমি মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ ও ভারত ১৯৭৪ সালে স্থলসীমানা চুক্তি স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশ সে বছরেই চুক্তিটি অনুস্বাক্ষর করে। দীর্ঘ ৩৭ বছর পর এ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ২০১১ সালে একটি প্রটোকল স্বাক্ষর করা হয়।
ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তি এবং এর প্রটোকল ২০১৫ এর মে মাসে সংসদে পাস করে। জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময়ে চুক্তি বাস্তবায়নের পদ্ধতি কি হবে সে বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।