তোমার জয় বাংলার জয় নারীদের স্বাবলম্বী করতে অনন্য এক উদ্যোগ

কালজয়ী ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে ধারণ করে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল তরুণদের তুলে আনতে দারুণ এক উদ্যোগ নেয় অরাজনৈতিক সংগঠন ইয়ং বাংলা। দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তরুণদের ব্যবসায়িক উদ্যোগ, সামাজিক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ ও অভূতপূর্ব উদ্ভাবনসহ ইতিবাচক অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে সংগঠনটি দেয় ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’। সামাজিক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ বিভাগে পুরস্কৃত হন খুলনার তরুণী ফারজানা খান লিখন। খুলনা শহরে অনেক প্রত্যন্ত গ্রাম আছে যেখানে এখনো শহরের ছোঁয়া পৌঁছায়নি। যেখানে এখনো নারীরা, মেয়েরা নীরবে নিভৃতে চোখের পানি ঝরায়। কথা বলার অনেকে থাকলেও তাদের পাশে থাকার কেউ নেই। এই পরিস্থিতি দেখেই খুলনার বিএল কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী ফারজানা খান লিখন এগিয়ে আসেন। তার একার পক্ষে এত মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। তাই তিনি ও আরও কিছু মেয়েরা সিদ্ধান্ত নেন গ্রামে গ্রামে গিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াবেন। তাই গড়ে তোলেন ‘ডিজিটাল বাংলা ফাউন্ডেশন’। তারা প্রথমেই গ্রামের বিভিন্ন স্কুলে ক্লাস নেওয়া শুরু করেন। কম বয়সী মেয়েদের, তাদের বাবা-মায়েদের বাল্যবিবাহ, যৌতুকপ্রথা, শিশুশ্রম এইসব বিষয়ে বোঝানোর কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে তাদের কথা অনেকে গুরুত্ব দেয় আবার অনেকে গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু দেখা গেছে ১০০ জনের ভিতরে ১০ জন হলেও তাদের কথা মেনেছেন। তারা মনে করেন ১০০ জনের মধ্যে ১০ জন মানলেও তো আমাদের সমাজের অনন্ত ১০ জন মা-বোন ভালো থাকবে। লিখন জানালেন, পৃথিবীর সমস্ত শিশুর অধিকার সনদ নামে একটি সনদ আছে, যা আমাদের অনেকের কাছে অপরিচিত। সেখানে যদিও শিশুদের সকল অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। তবুও শিশুরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। খুলনার বর্তমান অবস্থা জানাতে গিয়ে লিখন জানান, খুলনা শহর একটি বর্ডারের পার্শ্ববর্তী একটি জেলা। এখানে প্রায়ই শিশুরা, মেয়েরা দালালের হাতে পরে বর্ডার পার হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পৌঁছে যায় এবং তারা ওখানে গিয়ে অনেক নিপীড়িত হয়। তাদেরকে অনেক খারাপ কাজে লিপ্ত করা হয়। টাকার লোভে দেখিয়ে একদল দালাল চক্র এইসব কর্মকাণ্ড করে থাকে। লিখনের নিজের এলাকায়ও অনেক মেয়ে শিশু এই নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে। এগুলো তাকে প্রতিনিয়ত শুনতে হতো। একটা পর্যায়ে তিনি যান এলাকার প্রতিটি বস্তিতে এবং তাদের বুঝাতে শুরু করেন। যাদের বোন মেয়ে এখনো নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, তাদের সান্ত্বনা দেন। তারা আইনগত কোনো ব্যবস্থা নিতেও ভয় পায় দলালদের জন্য। লিখন নিজে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান; তাদেরকে সাহস জোগান। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তাদেরকে সাহায্য করেন। এলাকার কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তির সাহায্যে একটা সময় পর কিছু মেয়ে ফিরে আসে। তার প্রতিষ্ঠানের নানা কর্মকাণ্ডের জন্যই ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’-এর সামাজিক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ বিভাগে পুরস্কৃত হয় তার প্রতিষ্ঠান ‘ডিজিটাল বাংলা ফাউন্ডেশন’। লিখন তার কষ্টের স্বীকৃতি পেয়ে খুশি তবে তিনি আরও অনেক বড় স্বপ্ন দেখেন। তার স্বপ্ন, নারী সমাজকে আইসিটি প্রশিক্ষণ ও তথ্য সেবা দিয়ে তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নত সমাজ ও রাষ্ট্রের চোখে তাদেরকে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মতো করে গড়ে তুলে তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করা। লিখন বলেন, ‘আমি আশা করি, মালালা ইউসুফের মতো বাংলাদেশের প্রতিটি মেয়ে সংগ্রামী প্রত্যয় নিয়ে নিজস্ব মতামত ও কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবে। তাদেরকে যেন কারো উপর নির্ভর করতে না হয়। জীবন বার বার আসে না একবারই আসে তাই জীবনকে সার্থক করে তুলতে হলে এমন কিছু কাজ করা উচিত যা মানুষের কল্যাণে এবং মানুষের জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে সাহায্য করে। যদিও এক্ষেত্রে আমার উদ্যোগ খুবই সামান্য তবুও আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ লিখন জানান, এছাড়াও তারা অনেক সামাজিক কাজ করেন। তারা গ্রামের স্কুলে ফ্রি কম্পিউটার শেখান। এতে করে তারা ডিজিটাল সেবা সম্পর্কে ধারণা পায়। তারা পথশিশুদের ক্লাস নেন, তাদের থাকার সুব্যবস্থা করেন। লিখন মনে করেন, বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে বিশ্বের অগ্রযাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে নারী জাগরণের বিকল্প নেই। আজ নারীদের নিজের আত্মকেন্দ্রিক খোলস থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে শিক্ষিত সাবলম্বী ও তথ্যপ্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন করে দেশের উন্নয়নে অংশীদার হতে হবে। অন্যথায় দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই নারীদের আজ জাগিয়ে তুলতেই হবে। এরই লক্ষ্যে তিনি তার চিন্তাধারা এবং ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা দ্বারা কিছু কাজ করে যাচ্ছেন।