সুরমা সেতু পাল্টে দেবে সিলেটের চার উপজেলা

শেষের পথে নির্মাণ কাজ

সিলেট বিভাগের প্রান্তিক জেলা সুনামগঞ্জ। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে জেলা সদরের সঙ্গে ৪টি উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ আজো স্থাপিত হয়নি। ফলে এই চার উপজেলার ১০ লাখ লোক শিক্ষা, চিকিত্সাসহ সামাজিক, অর্থনৈতিক নানা কর্মকাণ্ড থেকে পিছিয়ে রয়েছে। উপজেলা ৪টি হচ্ছে বিশ্বম্বরপুর,তাহিরপুর,জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা। এই চার উপজেলার পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে সামনে এবং সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কে নিয়ে আসতে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর উপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় নয় বছর আগে। আর সেটিই এখন বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী মাসের মধ্যেই সেতুটির বাকি কাজ শেষ করা যাবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সুরমা নদীর দু’পাড়ে আরসিসি অংশের কাজ শেষ। এখন সেতুর মাঝখানে ষ্টিল বসানোর কাজ চলছে। সেতুতে দাঁড়ালে উত্তরের বিশাল খাসিয়া পাহাড়ের কাছে সাদা মেঘ উড়ে যাওয়ার দৃশ্য সত্যিই মনোহর। ইতিমধ্যে সেতু এলাকায় প্রকৃতিপ্রেমী ও পর্যটকদের ভিড় জমে উঠেছে। সুনামগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রঞ্জিত দাস (কটি) বলেন ‘এই সেতু নির্মাণের ফলে পর্যটন শিল্পের দুয়ার খুলে যাবে। একই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনা জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সৃষ্টি হবে।’

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সুনামগঞ্জ শহরের মল্লিকপুর এলাকায় ‘সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে শুরু করে। প্রাথমিকভাবে এর ব্যয় ধরা হয় ২৩ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্পটির কাজ বেশ এগুনোর পর ২০১২ সালে হঠাত্ নির্মাণাধীন সেতু প্রকল্পটি সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা (এডিপি) থেকে বাদ পড়লে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন।

পরবর্তীতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা সেতুটি সুনামগঞ্জের জন্য অতীব জরুরি উল্লেখ করে এটি আবার এডিপিতে যুক্ত করার জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে পত্র দেন। এসব নানা জটিলতায় প্রকল্পকাজে দেরি হয়।

পরে সেতুর নকশা পরিবর্তন করা হয়। তখন নতুনভাবে ৪০২ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুর ব্যয় ধরা হয় ৬৭ কোটি টাকা। শুরুতে এর কাজের মেয়াদ দু’বছর থাকলেও সময় মতো অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় তা বিলম্ব হয় এবং বেশ কিছু দিন কাজ বন্ধ থাকে। সর্বশেষ এই সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালের জুন মাসে। তাও নানা জটিলতায় শেষ হয়নি।

কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে এ সেতুর ৫ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। মূল সেতুর ষ্টিল বসানোর কাজ চলছে। আগস্টে এ সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার বিষয়ে কর্মকর্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ইফতেখার কবির বলেন, সেতুর কাজ প্রায় শেষ। যেটুকু রয়েছে তা-আগামী মাসের প্রথম দিকে শেষ হয়ে যাবে।

সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খায়রুল হুদা চপল বলেন, ‘সেতুটি সুনামগঞ্জবাসীর স্বপ্ন, আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি উন্মুক্ত হলে, সুনামগঞ্জের বালি-পাথর,কয়লা,চুনাপাথরসহ অন্যান্য পণ্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। প্রান্তিক এ জেলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের নতুন দুয়ার খুলবে।’ তিনি বলেন ‘দশ লক্ষাধিক মানুষের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। তবে সুরমা সেতুর পশ্চিমদিকের সড়কটিকে আঞ্চলিক মহাসড়কের সাথে সংযোগ করতে হবে তা না হলে এই সেতু নির্মাণ অর্থহীন হয়ে পড়বে’। তার আগে জরুরি ভিত্তিতে কাচিরগাতি-বিশ্বম্বরপুর ৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও প্রশস্ত করতে হবে বলে জানান চেম্বার সভাপতি।