গৌরীপুরে লটকন এখন অর্থকরী ফসল

ফুল হয় না, পাপড়িও ঝরে না, সরাসরি গাছের কাণ্ড থেকে বের হয় লটকন, যার স্থানীয় নাম বুবি। জেলার গৌরীপুরের ভূমি কিছুটা উঁচু হওয়ায় বনে জঙ্গলে ঝোঁপঝাড়ে চাষাবাদ ও পরিচর্যা ছাড়াই জন্ম নেয় লটকন। মানসম্মত পুষ্টিগুণ ও স্বাদে ভালো হওয়ায় এর চাহিদা বাড়ছে। বাগানের মালিকরা প্রতি মৌসুমে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। এ বছরও উপজেলায় লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে চলতি মৌসুমে লটকন বাগান মালিকদের ঘরে উঠবে প্রায় কোটি টাকা। এক সময় জংলি ফল হিসাবে অবহেলিত লটকন এখন এলাকায় পেয়েছে অর্থকরী ফসলের কদর।

চাষিরা জানিয়েছেন, এর বীজ মাটিতে পড়লেই অতি সহজেই চারা গজিয়ে থাকে। জংলি ফল হিসেবে চিহ্নিত হলেও এখন লটকনের মর্যাদা অর্থকরী ফসল হিসাবে। অনেক চাষিই এখন এই ফলের বাগান করছেন। উপজেলার বোকাইনগর, সহনাটি, রামগোপালপুর ইউনিয়নসহ ১০টি ইউনিয়নে শতাধিক একর জঙ্গলাকীর্ণ জমিতে প্রায় দুই শতাধিক লটকন ফলের বাগান রয়েছে। কয়েক দশক ধরে এসব ইউনিয়নের মানুষদের আর্থিক চাহিদার যোগান দেয়াসহ অনেকের সংসারে এনে দিয়েছে সচ্ছলতা, করেছে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, কোন প্রকার পরিচর্যা ব্যয় ছাড়াই একটি লটকন গাছ থেকে গড়ে আড়াই থেকে তিন মন ফল উত্পাদন হয়। যার পাইকারি বাজার মূল্য ৩/৪ হাজার টাকা। এরকম প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া প্রতি বাগানে একশ’ থেকে পাঁচশ’ লটকন গাছ রয়েছে। লটকন ব্যবসায়ীরা আগাম লটকন বাগান ক্রয় করেন। উপজেলার ফরাজী বাড়ির আজিজুল মিয়া, জানমিয়া, জালাল, জহির, হাতেম আলী মিয়ার পাঁচ একর লটকন বাগান বিক্রি হয়েছে তিন লাখ টাকায়। সহানাটী ইউনিয়নের মাস্টার লুত্ফর রহমান, মহিবুর মাস্টার, হীরা মিয়ার তিন একরের লটকন বাগান বিক্রি হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। বেসরকারি হিসেবে উপজেলার ছোট-বড় প্রায় শতাধিক বাগান আগাম বিক্রি করে মালিকরা ইতিমধ্যেই গড়ে এক লাখ টাকা করে সম্মিলিতভাবে প্রায় কোটি টাকা আয় করেছেন। বিনা পরিশ্রম ও বিনা ব্যয়ে এমন আয়ে খুশি এলাকার বাগান মালিকরা। বাছাইকৃত লটকন ইংল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, সৌদি আরবসহ নানান দেশে রপ্তানি হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

চাষিদের অভিযোগ, লটকনের উত্পাদন সমপ্রসারণে এখন পর্যন্ত চাষাবাদ, পরিচর্যা ও প্রযুক্তি বিতরণে উল্লেখ করার মতো কোন সংস্থা, বা কৃষি সংশ্লিষ্ট সরকারি লোকজন এগিয়ে আসেনি। সহযোগিতা পেলে লটকন বিক্রি করেই এ অঞ্চলের চাষিরা আরো লাভবান হতেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহজাহান সিরাজ জানিয়েছেন, গৌরীপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উদ্যোগে ও বিদেশি রাষ্ট্রের অর্থায়নে হটিকালচার সেন্টার প্রতিবছর লটকন গাছের কলম ও চারা তৈরি করে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করছে। লটকন বাগানের রোগ বালাই প্রতিরোধ ও গাছের পরিচর্যার জন্য লটকন বাগান মালিকদেরকে হাতে-কলমে শিক্ষা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্থানীয় কৃষি অফিস এ বছর কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে একহাজার লটকন চারা বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। তাছাড়া লটকন চাষিদের কীটনাশক ছিটানোর জন্য মেশিন প্রদান করা হয়েছে এবং সেচ দেয়ার জন্য সেচযন্ত্র সরবরাহ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।