কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১৬,৪০০ কোটি টাকা

চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কৃষি খাত ও পল্লী অঞ্চলে ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। প্রান্তিক, বর্গা, নারীসহ সব ধরনের কৃষককে এ ঋণ দিতে হবে। ব্যাংকগুলোর জন্য মোট ঋণের ন্যূনতম আড়াই শতাংশ স্বল্প সুদে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা বাধ্যতামূলক। যেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না তাদের জরিমানা করা হবে। গতকাল ২০১৫-১৬ অর্থবছরের কৃষি ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি ঘোষণা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, সরকারের কৃষি ও কৃষকবান্ধব নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ও সংশ্লিষ্টদের মতামত বিবেচনায় ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লীঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। তিনি বলেন, গত অর্থবছরের কৃষি ও পল্লীঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচির মূল দিকগুলো ঠিক রেখে কয়েকটি নতুন বিষয় এ নীতিমালায় সংযোজন করা হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি ও পল্লীঋণের আওতা বৃদ্ধি, পল্লী এলাকায় ব্যাংকিং কর্মকান্ড সম্প্রসারণে কৌশলগত পদ্ধতি গ্রহণ, কৃষকদের ব্যাংকমুখী করা তথা আর্থিক সেবায় অন্তর্ভুক্তিকরণ, আমদানি বিকল্প ফসল চাষে বাড়তি উৎসাহ প্রদান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্ব প্রদান, নেপিয়ার ঘাস, ক্যাপসিকাম চাষ, আম ও লিচু চাষে ঋণ প্রদানে নির্দেশনা, উদ্ভাবিত নতুন ফসল ও প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দেয়ার বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য। গত অর্থবছরের কৃষিঋণ নীতিমালা বাস্তবায়নের কয়েকটি দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, কৃষিঋণ বিতরণ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ শতাংশ বেশি। ২ লাখ ৪৩ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি পেয়েছে ১১ হাজার ২০৩ কোটি টাকা এবং ২ লাখ ৫৬ হাজার বর্গাচাষি পেয়েছে প্রায় ৯১৪ কোটি টাকা ঋণ। আর ২ লাখ ৬৬ হাজার নারী পেয়েছে ৯০১ কোটি টাকা ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচির আওতায় গত অর্থবছরে একটি অ-সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১ লাখ ৬০ হাজার বর্গাচাষিকে ৪৫০ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোও সরাসরি বর্গাচাষিদের যথেষ্ট ঋণ প্রদান করছে। গত অর্থবছরে আদায়যোগ্য ঋণের ৭০ শতাংশ আদায় হয়েছে, যা আগের অর্থবছরে তুলনায় বেশি। এবছর নতুন করে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককেও (বিডিবিএল) কৃষি বিতরণ করতে হবে। গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে গভর্নর বলেন, যে কেউ আমাদের হটলাইন, ফেসবুক, টেলিফোন, ই-মেইল ও ফ্যাক্সযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগে সরাসরি এবং গ্রাহক স্বার্থসংরক্ষণ বিভাগে কৃষিঋণ বিষয়ক যে কোন অভিযোগ জানাতে বা তথ্য পেতে পারবেন। নীতিমালা ঘোষণা অনুষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান ও শুভঙ্কর সাহা, কৃষিঋণ ও বাজার বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রভাষ চন্দ্র মল্লিক ও সব তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে কৃষিঋণ বিতরণ বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যারা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না তাদের বিরুদ্ধে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে নীতিমালায়। এতে বলা হয়েছে, বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকগুলোকে মোট ঋণের ন্যূনতম আড়াই শতাংশ কৃষি ও পল্লী বিতরণ করতে হবে। নতুন ৯টি বেসরকারি ব্যাংকের জন্য এ হার ৫ শতাংশ। যে সকল ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে না তাদেরকে অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার অনর্জিত অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে বাধ্যতামূলভাবে জমা করতে হবে। ব্যাংক ওই জমার ওপর কোন সুদ পাবে না। এছাড়া কৃষি ও পল্লীঋণের আবেদনপত্র ব্যাংকের ওয়েবসাইট ও পত্রিকায় প্রকাশ, প্রতিটি ব্যাংক শাখায় কৃষি ঋণের সুদহার, কৃষিঋণের খাত, আমদানি বিকল্প ফসল চাষের জন্য রেয়াতি সুদহার এবং কৃষিঋণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মোবাইল নম্বর সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন দৃষ্টিগোচর স্থানে প্রদর্শন ও প্রধান কার্যালয়ের কৃষিঋণ মনিটরিং সেল ও গ্রামীণ অঞ্চলের ব্যাংক শাখায় যেখানে পর্যাপ্ত জনবল নেই সেখানে জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ওই নীতিমালা। ১০ টাকার হিসাব সচল করতে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, কৃষকদের স্বার্থে প্রচলিত দশ টাকার হিসাবগুলো শুধু ভর্তুকি দেয়ার জন্য চালু করা হয়নি। সে হিসাব রেমিট্যান্স প্রদান, ঋণ প্রদান, সঞ্চয় সংরক্ষণসহ নিয়মিত হিসাবের মতোই পরিচালনা (তবে বিনা চার্জে) করতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অচিরেই একটি পরামর্শমূলক প্রজ্ঞাপন জারি করবে।