রাজধানীর আগারগাঁয়ে প্রতিবারের মতো এবারও বেশ জমে উঠেছে জাতীয় বৃক্ষমেলা। এবারের মেলায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে- তিন রকমের স্বাদ বা থ্রি টেস্ট নামের এক জাতের আমের চারা। যা বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৭৫ হাজার টাকায়। অবশ্য আমসহ টবে রাখা এ চারার বিক্রি মূল্য লেখা রয়েছে ৮০ হাজার টাকা।
এ আমের চারার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বরিশাল নার্সারির শরিফুল ইসলাম জানান, এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এ আম গাছে বছরে তিন বার আম ধরে এবং তিন বারে এর স্বাদও হয় তিন রকমের। দর্শনার্থীদের সবাই কমপক্ষে একবার এই চারাগাছ দেখতে আসছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৭৫ হাজার টাকা করে দু’টি গাছ বিক্রি হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই মেলা চলবে।
মেলার আয়োজক কমিটির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর বৃক্ষমেলায় ক্রেতাদের ভিড় বেশি। প্রতি বছরের মতো এবারও ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি ফলদ বৃক্ষের দিকে। পাশাপাশি শোভাবর্ধক ও ওষুধি গাছের চাহিদাও কম নয়। এ বছর সরকারি-বেসরকারি মিলে মোট ১০০টি নার্সারি মেলায় অংশ নিয়েছে।
মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর মেলায় প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার গাছের চারা বিক্রি হচ্ছে। যার মূল্য প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২৫ জুন পর্যন্ত দুই লাখ ৫০ হাজার ৮১৯টি চারা বিক্রি হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ১ কোটি ৬৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬৩ টাকা।
সরেজমিন দেখা গেছে, মেলায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপশি সরকারি প্রতিষ্ঠানও অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- সামাজিক বন বিভাগ ঢাকা, বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন ও কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর। এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মর্ডান হার্বাল নার্সারি, বরিশাল নার্সারি, আনন্দ নার্সারি, মায়ের দোয়া নার্সারি, মেসার্স রাশেদ নার্সারি, ইউনিক নার্সারিসহ বিভিন্ন গাছ বিক্রি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।
মেলার বিভিন্ন নার্সারিতে রয়েছে থাইল্যান্ডের বারোমাসি গ্রিন আমগাছের চারা। যার প্রতিটির দাম ১০ হাজার টাকা। নতুন জাতের আমের চারার মধ্যে আরও রয়েছে নামদুখানাই, ম্যাট্রোস তোতা, মল্লিকা, আমেরিকান পালমার, সুবর্ণ রেখা, কিউজাই, আম্রপালি ও জাম্বুরা। জাম্বুরা আমের চারা ১০ হাজার, কিউজাই চারা ৮০ হাজার টাকা দাম লেখা রয়েছে। থাই মালটা গাছের প্রতিটি চারা তিন হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মেসার্স আনন্দ নার্সারিতে গিয়ে দেখা গেছে, আমগাছের পাশাপাশি এ নার্সারিতে নানা রকমের ফুল গাছের চারাও বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে লাল জাপানি রঙ্গন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকায়, মোচন্দা সাদা, গোলাপী ১০০ থেকে ৩০০ টাকায়। এছাড়া বাগানবিলাস ২০০ থেকে ৫০০ টাকায়, জুঁই ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় এবং কেইন্ড ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পারিজাত ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। এছাড়া রয়েছে করবী সাদা ও লাল, আলমান্ডা পিঙ্ক, আলমান্ডা হলুদ, ব্রোফেনশিয়া, সন্ধ্যামালতী, বিভিন্ন জাতের পান সুটিয়া ছাড়াও রয়েছে টবে বিভিন্ন ধরনের শোভাবর্ধনকারী ফুলের চারা।
আনন্দ নার্সারির স্বত্বাধিকারী আকরাম হোসেন বলেন, আমি প্রতি বছর জাতীয় বৃক্ষমেলায় অংশগ্রহণ করি। তবে অন্যান্য বছরের চাইতে এবার ক্রেতাদের আগ্রহও বেশি দেখা যাচ্ছে। ঢাকা শহরের বেশিরভাগ বাড়ির মালিক বাড়ির ছাদে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতে বাগান করতে পারেন সেই চিন্তা রেখেই আমরা বিভিন্ন প্রজাতির আমের গাছ এনেছি। এগুলোর মধ্যে কিছু আমাদের দেশেই হাইব্রিডের মাধ্যমে উত্পাদিত, কিছু বিদেশ থেকে জাত এনে নার্সারিতে উত্পাদন করা হয়েছে।