বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে তৈরি হচ্ছে ‘রূপকল্প-২০৪১’। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে পরিকল্পনামাফিক কাজ করছে সরকার। ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের এ মূল্যায়ন সরকারের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকারের আশা, ঘোষণা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যেই চূড়ান্তভাবে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়া যাবে।
জানা গেছে, ২০১২ সালের মধ্যে দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল সরকারের। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বর্তমান সরকার সফল হয়েছে। রূপকল্প ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে কিছু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ কাজগুলো এখন পূরণ করা হবে। ২০২১ সাল নাগাদ দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা ২০ হাজার মেগাওয়াট ধরে উৎপাদন বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগামী বছরের মধ্যে নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা, ২০২১ সালের মধ্যে সব মানুষের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা, বেকারত্বের হার বর্তমান ৪০ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ওই সময়ের মধ্যে কৃষি খাতে শ্রমশক্তি ৪৮ থেকে ৩০ শতাংশে নিয়ে আসা, দারিদ্র্যের হার ৪৫ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে।
বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পরই রূপকল্প-২১ ঘোষণা করে। এ ঘোষণার মূল লক্ষ্য ছিলÑ দরিদ্র্যতা কমিয়ে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া। একই সঙ্গে জাতিসংঘ ঘোষিত মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল বা এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ঘোষণা অনুযায়ী, এমডিজির অধিকাংশ লক্ষ্যমাত্রা বিশেষ করে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, শিক্ষা ও স্যানিটেশনে দ্রুত সফলতা এসেছে। বেড়েছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও মাথাপিছু আয়। যার কারণে বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়নে বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। রূপকল্প-২১ এর হাত ধরে এবার রূপকল্প-৪১ প্রণয়ন করবে সরকার।
এসব পরিকল্পনার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গেই দেশকে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে কিছু কাজ করা হয়েছে। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে একটি ধারণা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। সরকারের চলতি মেয়াদে প্রণয়ন করা হবে পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা ‘রূপকল্প ২০৪১’। এ পরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে, আগামী ২৬ বছরের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশের কাতারে দেশকে নিয়ে যাওয়া। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী সামনে রেখে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন শুরু করেছে সরকার। এ পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ গঠন এবং সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগে গতিশীলতা আনয়ন। এ জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতের অবকাঠামোগত সমস্যা দূরীকরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে এসব পদক্ষেপের ফলে ঘোষিত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে শামিল হতে সক্ষম হবে।
সরকারের এ পরিকল্পনার বিষয়ে চলতি অর্থবছরের বাজেটে দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, ৬ শতাংশের বৃত্ত ভেঙে উচ্চ প্রবৃদ্ধির সোপানে আরোহন এবং মাথাপিছু আয়ের ধারাবাহিক উত্তরণ ঘটিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশের কাতারে শামিল হওয়া সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য। তবে এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় দেশপ্রেমিক সব রাজনৈতিক দল স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে, বিরত থাকবে সহিংসতা ও নাশকতার মতো সব জনবিরোধী কর্মকা- থেকে। তাদের দায়িত্বপূর্ণ আচার-আচরণ ও পরস্পরের প্রতি সহনশীলতার মাধ্যমে প্রসার ঘটবে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির, নিশ্চিত করবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণ, যাদের শ্রমের ঘামে ক্রমশ মজবুত হয়ে উঠছে আমাদের অর্থনীতি।
বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের অর্থনীতি, যেখানে মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৪৫ ডলারের ওপরে কিন্তু ৪ হাজার ১২৫ ডলারের নিচে। উচ্চ মধ্যম আয়ের অর্থনীতির দেশ হতে হলে মাথাপিছু জাতীয় আয় হতে হবে ৪ হাজার ১২৫ ডলারের ওপরে ১২ হাজার ৭৩৬ ডলারের নিচে। আর উচ্চ আয়ের অর্থনীতির দেশ হতে মাথাপিছু জাতীয় আয় হবে ১২ হাজার ৭৩৬ ডলারের ওপরে।