উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথনকশা প্রসঙ্গ

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ-
শোষণ বঞ্চনা আর বণ্টন বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার বাঙালির ঐতিহাসিক ‘মুক্তির সংগ্রাম’ এর প্রকৃত অর্জন বা বিজয় বিবেচনার জন্য বিগত সাড়ে চার দশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্বয়ংম্ভরতা অর্জনের প্রত্যয় ও প্রতীতির স্বরূপ পর্যালোচনার প্রসঙ্গটি এসেই যায়। প্রথমেই আসে সমন্বিত উদ্যোগের প্রেরণার প্রসঙ্গ। আসে অন্তর্ভুক্তি ও বিচ্যুতির প্রসঙ্গ। অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশ্নে গোটা দেশবাসীকে ভাববন্ধনে আবদ্ধ করার ক্ষেত্রে খোদ আত্মতৃপ্তির উপায়, উপলক্ষ, লক্ষণ ও যথার্থতার বিচার বিশ্লেষণ হওয়া দরকার।
বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে সমাজে কিংবা সংসারে এমনকি যে কোন কায়কারবারে সবার সুচিন্তিত মতামত প্রকাশের সুযোগ, কর্তব্য পালনে দৃঢ়চিত্ত মনোভাব পোষণ, উদ্দেশ্য অর্জন তথা অভিষ্ট লক্ষ্যে পেঁৗছানোয় ঐকান্তিক প্রয়াসে সমর্পিতচিত্ত ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস যেমন জরুরি, একথা বলাবাহুল্য যে, জাতীয় উন্নয়ন প্রয়াস প্রচেষ্টাতেও সমন্বিত উদ্যোগের আবশ্যকতাও একইভাবে অনস্বীকার্য। জাতীয় সঞ্চয় ও বিনিয়োগে থাকা চাই প্রতিটি নাগরিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অবদান। দুর্নীতি, অপচয়, অপব্যয় রোধ, লাগসই প্রযুক্তি ও কার্যকর ব্যবস্থা অবলম্বনের দ্বারা সীমিত সম্পদের সুষম ব্যবহার নিশ্চিতকরণে সবার মধ্যে অভ্যাস, আগ্রহ আকাঙ্ক্ষা এবং একাগ্রতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠা দরকার। জনগণের প্রতি সরকারের এবং রাষ্ট্রের কাছে নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা ও উপলব্ধির জাগৃতিতে অনিবার্য হয়ে উঠে যে নিষ্ঠা ও আকাঙ্ক্ষা, তা অর্জনের জন্য সাধনার প্রয়োজন, প্রয়োজন সব পক্ষের ত্যাগ স্বীকারের। দায়-দায়িত্ব পালন ছাড়া স্বাধীনতার সুফল ও উন্নয়ন সাফল্য ভোগের দাবিদার হওয়া বাতুলতা মাত্র। ‘ফেল কড়ি মাখ তেল’ কথাটি এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য এজন্য যে উৎপাদনে সক্রিয় অংশগ্রহণ না করেই ফসলের ন্যায্য অধিকার প্রত্যাশী হওয়া স্বাভাবিক এবং সঙ্গত কর্ম ও ধর্ম নয়। কোন কিছু অর্জনে বর্জন বা ত্যাগ স্বীকার যেমন জরুরি তেমনি প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মাঝে বাস্তবতা এ জানান দেয় যে বিনা দুঃখে সুখ লাভ হয় কি মহিতে?
নিজ নিজ দায়িত্ব পালন এবং স্ব স্ব অবস্থানে থেকে সব প্রয়াস প্রচেষ্টায় সমন্বয়ের মাধ্যমে সার্বিক উদ্দেশ্য অর্জনের অভিপ্রায়কে অয়োময় প্রত্যয় প্রদান সমাজ উন্নয়নের পূর্বশত। একজন কর্মচারীর পারিতোষিক তার সম্পাদিত কাজের পরিমাণ বা পারদর্শিতা অনুযায়ী না হয়ে কিংবা কাজের সফলতা ব্যর্থতার দায় দায়িত্ব বিবেচনায় না এনে যদি দিতে হয় অর্থাৎ কাজ না করেও সে যদি বেতন পেতে পারে, তাহলে দক্ষতা অর্জন এর প্রত্যাশা আর দায়িত্ববোধের বিকাশভাবনা মাঠে মারা যাবেই। এ ধরনের ব্যর্থতার বজরা ভারি হতে থাকলেই যে কোন ঊৎপাদন ব্যবস্থা কিংবা উন্নয়ন প্রয়াস ভর্তুকির পরাশ্রয়ে যেতে বাধ্য। দারিদ্র্য প্রপীড়িত জনবহুল কোন দেশে পাবলিক সেক্টর বেকার ও অকর্মন্যদের জন্য যদি অভয়ারণ্য কিংবা কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রতিভু হিসেবে কাজ করে তাহলে সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। যদি বিপুল জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে পরিণত করা না যায় উপযুক্ত কর্মক্ষমতা অর্জন ও প্রয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করে, তাহলে উন্নয়ন কর্মসূচিতে বড় বড় বিনিয়োগও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। জনসেবার নামে প্রতিনিধিত্ব এবং রাষ্ট্রের পদ-পদবি তথা চাকরিকে সোনার হরিণ বানানোর কারণে সেসব অর্জন এবং অব্যাহত থাকার বা রাখার জন্য অস্বাভাবিক দেনদরবার চলাই স্বাভাবিক। দায় দায়িত্বহীন চাকরি পাওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় থাকার ফলে নিজ উদ্যোগে স্বনির্ভর হওয়ার আগ্রহতেও অনীহা চলে আসে। মানব সম্পদ অপচয়ের এর চেয়ে বড় নজির আর হতে পারে না। দরিদ্রতম পরিবেশে যেখানে শ্রেণীনির্বিশেষে সবার কঠোর পরিশ্রম, কৃচ্ছতা সাধন ও আত্মত্যাগ আবশ্যক সেখানে সহজে ও বিনা ক্লেশে কিভাবে অর্থ উপার্জন সম্ভব সেদিকেই ঝোঁক বেশি হওয়াটা সুস্থতার লক্ষণ নয়। ট্রেড ইউনিয়ন নির্বাচনে প্রার্থীর পরিচয়ে যে অঢেল অর্থব্যয় চলে তা যেন এমন এক বিনিয়োগ যা অবৈধভাবে অধিক উসুলের হেতু হিসবে দেখা হয় বলেই। শোষক আর পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় বঞ্চিত নিপীড়িত শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থ উদ্ধারে নিবেদিত চিত্ত হওয়ার বদলে ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্ব নিজেরাই যখন উৎপাদন বিমুখ আর শ্রমিক স্বার্থ উদ্ধারের পরিবর্তে আত্মস্বার্থ উদ্ধারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে শোষণের প্রতিভু বনে যায় তখন দেখা যায় যাদের তারা প্রতিনিধিত্ব করছে তাদেরই তারা প্রথম ও প্রধান প্রতিপক্ষ। প্রচ- স্ববিরোধী এ পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে উৎপাদন, উন্নয়ন সবই বালখিল্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
দেশের অর্থনীতিকে স্বয়ংম্ভর করার মন্ত্র মানতে দুর্নীতি ও অপচয় অপব্যয় ও আত্মসাৎ তৎপরতা রোধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। বিয়ের উৎসবে সামাজিকতার দোহাই দিয়ে নানা অনুষ্ঠানের নামে অর্থ অপচয়ে সংযমী হওয়ার যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে। দিনের বেলাতেও রাস্তার বাতি জ্বালানো, ট্যাপের মুখ খোলা রেখে পানি অপচয়ের মত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ক্ষতির দিকটি বিদ্যুৎ আর পানি ঊৎপাদনে ব্যয়ের পরিমাণ বিবেচনায় এনে বুঝতে হবে। জাতীয় উৎসব, দিবস এবং এমনকি বৃক্ষ রোপণে শুধু ‘দিবস’ আর ‘উচ্চমহলের নির্দেশমতে’ পালনের সীমারেখায় না বেঁধে একে সহজাত বোধ, উপলব্ধি ও কর্তব্য জ্ঞানে আনতে হবে। প্রত্যেক নাগরিকেরই তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ হওয়ার মধ্যেই সুখী, সমৃদ্ধশালী সমাজ ও অর্থনীতি পুনর্গঠনের সুযোগ নিহিত। আগেই বলা হয়েছে মানুষই তার পরিবেশের নিয়ন্তা। তাকে সজ্ঞান সচেতনতায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে সাধ্যমতো দায়িত্ব পালনের। সংসার, সমাজ ও দেশের উন্নয়নে তার নিজের অংশগ্রহণকে অর্থবহ করতে ঐকান্তিক নিষ্ঠার দরকার। সংসারে নানা বাদ-প্রতিবাদে মানুষ বেড়ে ওঠে, তার দায়দায়িত্ব তদানুযায়ী নির্ধারিত হয় এবং তা যথাযথভাবে পালনে সংসারের গতির চাকা সচল থাকে নির্দর্িষ্ট নিয়মে।
দেশগত সব ভাবনায় মানুষই বড় কথা হওয়া উচিত। এই মানুষের দায়িত্ব বোধের দ্বারা কর্তব্য কর্ম সুচারুরূপে সম্পাদনের মাধ্যমে সমাজ সমৃদ্ধি লাভ করে। আবার এই মানুষের দায়িত্বহীনতার কারণে সমাজের সমূহ ক্ষতিসাধিত হয়। মানব সম্পদ না হয়ে সমস্যায় পরিণত হলে সমাজের অগ্রগতি তো দূরের কথা সমাজ মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি সভ্যতার বিবর্তনে সহায়তা হয়। মানুষের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ কিংবা মারণাস্ত্রে মানুষের ধ্বংস অনিবার্য হয়ে ওঠে। মানবতার জয়গান মানুষই রচনা করে আবার মানবভাগ্যে যত দুর্গতি তার স্রষ্টাও সে। মানুষের সৃজনশীলতা, তার সৌন্দর্য জ্ঞান, পরস্পরকে সম্মান ও সমীহ করার আদর্শ অবলম্বন করে সমাজ এগিয়ে চলে। পরমত সহিষ্ণুতা আর অন্যের অধিকার ও দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার মাধ্যমে সমাজে বসবাস করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সুতরাং সবার সহযোগিতা ও সমন্বিত উদ্যোগে সমাজ নিরাপদ বসবাসযোগ্য হয়ে উঠে। সমাজবিজ্ঞানীরা তাই মানুষের সার্বিক উন্নয়নকে দেশ জাতি রাষ্ট্রের সব উন্নয়নের পূর্বশর্ত সাব্যস্ত করে থাকেন। সমাজের উন্নতি, অগ্রগতি ও কল্যাণ সৃষ্টিতে মানুষের সার্বিক উন্নতি অপরিহার্য শর্ত। আগে সমাজ না আগে মানুষ এ বিতর্ক সর্বজনীন। মানুষ ছাড়া মনুষ্য সমাজের প্রত্যাশা বাতুলতামাত্র। সুতরাং একেকটি মানুষের উন্নতি সবার উন্নতি, সমাজের উন্নতি। একেক মানুষের দায়িত্ববোধ, তার কা-জ্ঞান তার বৈধ-অবৈধতার উপলব্ধি এবং ভালোমন্দ সীমা মেনে চলার চেষ্টা প্রচেষ্টার মধ্যে পরিশীলিত পরিবেশ গড়ে ওঠা নির্ভর করে। রাষ্ট্রে সব নাগরিকের সমান অধিকার এবং দায়িত্ব নির্ধারিত আছে। কিন্তু দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা অধিকার আদায়ের সম্ভাবনা ও সুযোগকে নাকচ করে দেয়। পণ্য ও সেবা সৃষ্টি না হলে চাহিদা অনুযায়ী ভোগের জন্য সম্পদ সরবরাহে ঘাটতি পড়ে। মূল্যস্ফীতি ঘটে সম্পদ প্রাপ্তিতে প্রতিযোগিতা বাড়ে। পণ্য ও সেবা সৃষ্টি করে যে মানুষ সেই মানুষই ভোক্তার চাহিদা সৃষ্টি করে। উৎপাদনে আত্মনিয়োগের খবর নেই- চাহিদার ক্ষেত্রে ষোলোআনা- টানাপড়েন তো সৃষ্টি হবেই। অবস্থা ও সাধ্য অনুযায়ী উৎপাদনে একেকজনের দায়িত্ব ও চাহিদার সীমারেখা বেঁধে দেয়া আছে কিন্তু এ সীমা অতিক্রম করলে টানাপড়েন সৃষ্টি হবেই। ওভারটেক করার যে পরিনাম ঘটে দ্রুতগামী বাহনের ক্ষেত্রে, সমাজে সম্পদ অর্জন ও ভোগের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রমনে একই পরিবেশ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে থাকে। সমাজে অস্থিরতা ও নাশকতার যতগুলো কারণ এ যাবত আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে এ সম্পদ অবৈধ অর্জন, অধিকার বর্জন এবং আত্মত্যাগ স্বীকারে অস্বীকৃতি মুখ্য।
বলা বাহুল্য রাষ্ট্রের একেকটি প্রতিষ্ঠান, দফতর এবং তার কর্ম বাহিনীর একেকজন সদস্যের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিদিষ্ট করা আছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে আত্মস্বার্থসিদ্ধি তথা স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিলে দফতরের ওপর অর্পিত সেবামূলক কাজ কিংবা সম্পদ উৎপাদন হয়ে পড়তে পারে সুদূর পরাহত। দায়িত্ব পালনের নামে অর্জিতব্য রাজস্ব লোপাট হলে, পারিশ্রমিক পরিশোধ বা রাষ্ট্রের ব্যয় বা দায় বাড়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রের রাজস্ব বা সেবা বা আয় না বাড়লে ডেফিশিট বাজেটিং এর অনিবার্য পরিস্থিতি তো সৃষ্টি হবেই। ব্যক্তির সংসারে ঘাটতি অর্থনীতির যে যন্ত্রণা- রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে তা ব্যাপক বিড়ম্বনার কারণ। নুন আনতে পান্তা ফুরাবার অর্থনৈতিক অবস্থায় সবার সুচারু ভূমিকা পালন যেখানে অনিবার্য বা সেখানে দায়িত্বহীন আচরণেও দুর্নীতির খপ্পরে পড়ার অবকাশ নেই।
শিল্পায়নের প্রশ্নেও দেশাত্মবোধ বিবেচ্য। বিদেশি সামগ্রীর প্রতি আগ্রহ ও আসক্তি দেশি শিল্প পণ্যের বাজারকে সংকুচিত করে, দেশে শিল্প প্রতিষ্ঠার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে। বিদেশি সামগ্রীর চাহিদায় আমদানি ব্যয় বাড়ে, বৈদেশিক মুদ্রা ভা-ারের ওপর চাপ পড়ে, তার চাইতে বড় কথা এ চাহিদার ফলে বিদেশি শিল্পের প্রবৃদ্ধি ও সেখানকার কর্মসংস্থানে সহযোগিতা করা হয়। হতদরিদ্র্র এবং বেকারত্বের ভারে ন্যুব্জ একটি অর্থনীতির জন্য বিদেশি বিলাস দ্রব্য, ভোগ্যপণ্য আর ফলমূল গুঁড়ো দুধসহ সবকিছুর ওপর নির্ভরশীলতা মানে নিজেদের সার্বিক স্বার্থের সঙ্গে প্রবঞ্চনা। একবার বেনাপোল স্থলবন্দরে আমাদের কাস্টমস হাউজের কার্যক্রম পরিদর্শনকালে একটি আশ্চর্য বিষয় আমার নজরে আসে। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাকের চালক ও সহকারী পণ্য শুল্কায়ন ও খালাসের জন্য বেনাপোলে অপেক্ষায় অবস্থানকালে নিজেদের সঙ্গে আনা চাল, ডাল, ডিম, তেল, নুন নিজেদের স্টোভে পাক করে খায়। আমাকে বলা হলো তাদের যদি কোন আইটেম ঘাটতি পড়ে, এমনকি একটা দিয়াশলাই পর্যন্ত তারা সেটি আমাদের এখান থেকে কিনবে না তারা পায়ে হেঁটে ভারতীয় অংশে যেয়ে সেখানকার দোকান থেকে ওই জিনিসটি কিনে আনবে। তারা বিদেশি মুদ্রা ব্যয় করবে না। তাদের এ দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ অবশ্যই ইতিবাচক, দেশিক এবং গঠনমূলক। বন্দরে সে সময় ভারত থেকে প্রত্যাগত এক বাংলাদেশি পরিবারের লাগেজ যখন আমাদের শুল্ক কর্মকর্তারা চেক করছিলেন তখন দেখলাম বিদেশি মুদ্রা ব্যয় করে কিনা তারা এনেছেন বিদেশ থেকে আমসত্ত্ব, চুলের ক্লিপ, সাবান, টুথপেস্ট সবই। অথচ এসব জিনিস আমাদের দেশে সহজলভ্য। এটা মানসিকতার প্রশ্ন। দেশের মানুষ দেশে উৎপাদিত সামগ্রী না কিনলে উৎপাদনে উন্নয়ন উৎকর্ষতা আসবে কি করে। দেশ ও দেশের অর্থনীতিকে স্বয়ংম্ভর করে তুলতে দেশিক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশের বিকল্প দেখি না। যে জিনিস দেশে আছে অথচ হয়তো পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই, যে সামগ্রী দেশে ঊৎপাদিত হয় কিন্তু সে সবের কোয়ালিটি হয় তো ততটা উন্নত নয়, এমন কিছু সামগ্রী দেশে উৎপাদন করা সম্ভব কিন্তু হয় তো উপযুক্ত কাঁচামাল কিংবা উৎপাদন কৌশল হয় তো জানা নেই, হয় তো নেই প্রয়োজনীয় মেশিনারি কিংবা রয়েছে উৎপাদনে উপযুক্ত অবকাঠামো অপ্রতুলতা। সেসব সুযোগ, কোয়ালিটি, প্রযুক্তি, পুঁজির সমাহার ঘটিয়ে ঊৎপাদন বাড়িয়ে দেশি শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের প্রসারে পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে তাতে বেকার সমস্যার সমাধান হয়, বিদেশি মুদ্রা ব্যয় কমে এবং জাতীয় আয় বাড়ে।
[লেখক : সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান]