জিডিপিতে সাত খাতের অবদান বেড়েছে

পাঁচ খাতের অবদান কমেছে :

মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষির অবদান কমছে। কৃষির তিনটি উপখাতের একই অবস্থা। জিডিপিতে কৃষি ছাড়াও পরিবহন, যোগাযোগ, রিয়েল এস্টেট খাতের নেতিবাচক অবস্থার চিত্র ওঠে এসেছে পরিসংখ্যানে। তবে ভালো অবস্থানে আছে খনিজ ও খনন, শিল্প, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৫-০৬ অর্থবছরের ভিত্তি মূল্যে ধরা হয়েছে। এতে জিডিপিতে খাতওয়ারি অবদানের ক্ষেত্রে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে স্থির মূল্যে কৃষি ও বনজ খাতের অবদান ধরা হয়েছে ১২.১৭ শতাংশ। তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ খাতের প্রকৃত অবদান ছিল ১২.৮১ শতাংশ। আগের অর্থবছরের মতো ২০১৪-১৫ অর্থবছরেও জিডিপিতে কৃষি ও বনজ খাতের অন্তর্ভুক্ত তিনটি উপখাতের অবদান কমেছে। এর মধ্যে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শস্য ও শাকসবজি উপখাতের জিডিপিতে অবদান ছিল ৮.৮৩ শতাংশ। যেখানে এর আগের বছর অবদান ছিল ৯.২৮ শতাংশ। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে বিগত ৯ বছরের সর্বোচ্চ অবদান ছিল শস্য ও শাকসবজি উপখাতের ১১.০৮ শতাংশ। যদিও এরপর থেকেই জিডিপিতে এ উপখাতটির অবদান কমেছে। দ্বিতীয় উপখাত প্রাণিসম্পদের একই অবস্থা। জিডিপিতে এ উপখাতের অবদান ১.৭৩ শতাংশ। সেখানে এর আগের অর্থবছরে অবদান ছিল ১.৭৮ শতাংশ। বনজ সম্পদ উপখাতের জিডিপিতে অবদান ১.৭২ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ উপখাতের জিডিপিতে অবদান ছিল ১.৭৪ শতাংশ। সার্বিকভাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ২০০৫-০৬ অর্থবছরের ভিত্তি মূল্যে ধরা হয়েছে ১৫.৬৯ শতাংশ।

তবে জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান আগের অর্থবছরের তুলনায় অপরিবর্তিত রয়েছে ৩.৬৯ শতাংশে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরেও এ খাতের অবদান ছিল ৩.৬৯ শতাংশ। জিডিপিতে খাতটির সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল ২০০৭-০৮ অর্থবছরে। এ সময় অবদানের পরিমাণ ছিল ৩.৭৯ শতাংশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে অবদান ছিল ৩.৭৮ শতাংশ। দুই বছরের তুলনায় জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান অপরিবর্তিত থাকলেও ২০১২-১৩ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩.৬৮ শতাংশ।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে স্থির মূল্যে সার্বিক শিল্প খাতের মধ্যে খনিজ ও খনন খাতের জিডিপিতে অবদান ধরা হয়েছে ১.৬৫ শতাংশ। তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ খাতের প্রকৃত অবদান ছিল ১.৬৩ শতাংশ। এ খাতের দুটি উপখাতের মধ্যে এটির অবদান অপরিবর্তিত থাকলেও এক বছরের ব্যবধানে একটি উপখাতের জিডিপিতে অবদান বেড়েছে। খনিজ ও খনন খাতের প্রাকৃতিক গ্যাস ও অপরিশোধিত তেল উপখাতের ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জিডিপিতে অবদান ছিল ০.৯৮ শতাংশ, যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে এর আগের ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ উপখাতের জিডিপিতে অবদান ছিল ১.০১ শতাংশ। আরেক উপখাত অন্যান্য খনিজ সম্পদ ও খনন খাতের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় জিডিপিতে অবদান বেড়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অন্যান্য খনিজ সম্পদ ও খনন উপখাতের অবদান ছিল ০.৬৭ শতাংশ। সেখানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে অবদান ছিল ০.৬৫ শতাংশ। ম্যানুফেকচারিং শিল্প খাতের অবদান ২০১৩-১৪ অর্থবছরের ১৯.৪৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২০.১৭ শতাংশে পৌঁছেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে যা ছিল ১৯ শতাংশ। এ খাতেরও দুটি উপখাতের জিডিপিতে অবদান বেড়েছে। বৃহৎ ও মাঝারি শিল্প উপখাতের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপিতে অবদান ছিল ১৬.৫২ শতাংশ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে যা ছিল ১৫.৯৫ শতাংশ। ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে এ উপখাতের জিডিপিতে অবদান প্রতি বছরই বেড়েছে। এছাড়া ক্ষুদ্রায়তন শিল্প উপখাতের ২০১৩-১৪ অর্থবছরের ৩.৫১ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ৩.৬৫ শতাংশে।

এছাড়া বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ খাতের জিডিপিতে অবদান বেড়েছে। একই সঙ্গে এ খাতের তিনটি উপখাতেরও একইভাবে জিডিপিতে অবদান বেড়েছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ খাতের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপিতে অবদান ছিল ১.৪৩ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ পরিমাণ ছিল ১.৪২ শতাংশ। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে এ পরিমাণ ছিল ১.১৯ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তিনটি উপখাতের মধ্যে বিদ্যুৎতের জিডিপিতে অবদান ছিল ১.২০ শতাংশ, গ্যাস উপখাতের ০.১৪ শতাংশ এবং পানি উপখাতের ০.০৯ শতাংশ, যেখানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল যথাক্রমে ১.১৯ শতাংশ, ০.১৫ শতাংশ, ০.০৯ শতাংশ।

জিডিপিতে নির্মাণ খাতের অবদানও বেড়েছে। সর্বশেষ অর্থবছরে এ খাতের জিডিপিতে অবদান ছিল ৭.১৭ শতাংশ। সেখানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ৭.০৩ শতাংশ। পাইকারি ও খুচরা বাণিজ্য ক্ষেত্রে জিডিপিতে অবদান বেড়েছে। এ খাতের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপিতে অবদান ছিল ১৪.১২ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ পরিমাণ ছিল ১৪.১০ শতাংশ, যেখানে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে অবদান ছিল ১৩.৭৮ শতাংশ। হোটেল ও রেস্তোরাঁ খাতের জিডিপিতে অবদান অপরিবর্তিত রয়েছে। এ খাতের অবদান ০.৭৫ শতাংশ।

জিডিপিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো অবস্থানে ছিল। এ খাতের জিডিপিতে অবদান ছিল ৩.৪১ শতাংশ। সেখানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ৩.৩৪ শতাংশ। এ খাতের তিনটি উপখাতের মধ্যে ব্যাংকের জিডিপিতে অবদান ছিল ২.৮৭ শতাংশ। সেখানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ২.৭৯ শতাংশ। বীমা উপখাতের অবদান ছিল ০.৩৬ শতাংশ, যেখানে আগের অর্থবছরে ছিল ০.৩৭ শতাংশ। অন্যান্য উপখাতের জিডিপিতে অবদান ছিল ০.১৮ শতাংশ।

এক বছরের ব্যবধানে জিডিপিতে অবদান বেড়েছে শিক্ষা খাতের। এ খাতের মোট অবদান ২.২৮ শতাংশ, আগের অর্থবছরে যা ছিল ২.২৬ শতাংশ। স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা খাতের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপিতে অবদান ছিল ১.৮৪ শতাংশ।

পরিবহন, সংরক্ষণ ও যোগাযোগ খাতের অবস্থা কিছুটা নাজুক। জিডিপিতে এ খাতের ২০১৩-১৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কমেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাতের জিডিপিতে অবদান ছিল ১১.৪৪ শতাংশ। সেখানে আগের অর্থবছর ২০১৩-১৪ সময়ে ছিল ১১.৪৯ শতাংশ। এ খাতের পাঁচটি উপখাতের মধ্যে তিনটি উপখাতের অবদান কমেছে। একটি অপরিবর্তিত রয়েছে এবং একটির বেড়েছে। এর মধ্যে স্থলপথ পরিবহন খাতের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপিতে অবদান ছিল ৭.১৯ শতাংশ। যদিও এর আগের অর্থবছরে জিডিপিতে এর অবদান ছিল ৭.২৭ শতাংশ। পানি পরিবহন খাতের জিডিপিতে অবদান ছিল ০.৭৯ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে এর অবদান ছিল ০.৮১ শতাংশ। আকাশপথ পরিবহন খাতের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপিতে অবদান ছিল ০.১২ শতাংশ। সহযোগী পরিবহন সেবা ও সংরক্ষণ খাতের অবদান ছিল ০.৬৪ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে এর অবদান ছিল ০.৬৫ শতাংশ। ডাক ও তার যোগাযোগ খাতের অবদান ছিল ২.৭০ শতাংশ, যেখানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এর অবদান ছিল ২.৬৪ শতাংশ।