এবার ঈদে হাসপাতালে ব্যতিক্রমী চিত্র

অন্যান্য বছর ঈদের ছুটিতে রাজধানীর সরকারি হাসপাতালে চিকিত্সা সেবা নিয়ে রোগীদের সীমাহীন অভিযোগ থাকলেও এবার দেখা গেছে ব্যতিক্রমী চিত্র। ঈদের ছুটিতে হাসপাতালগুলোতে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিত্সক-নার্স-কর্মকর্তা-কর্মচারী। হাসপাতালে এসে নির্বিঘ্নে চিকিত্সা সেবা পেয়েছেন রোগীরা।

জানা গেছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে রোগী সেবা নিশ্চিত করতে সরকারি হাসপাতাল বিশেষ ব্যবস্থায় চালু রাখা হয়। জরুরি বিভাগসহ হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে সার্বক্ষণিক চিকিত্সক ও নার্সদের উপস্থিতি ছিল। জরুরি অপারেশনও হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকও ছিলেন অনেক। জরুরি প্রয়োজনে তারা রাত-বিরাতে হাসপাতালে ছুটে গেছেন। স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি হাসপাতালেও চালু ছিল চিকিত্সা সেবা।

এই ছুটিতে রোগীর চিকিত্সা সেবা নিশ্চিত করতে চিকিত্সা কর্মীরা বিশেষ ব্যবস্থায় কাজ করেছেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাপাতালের জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার ও নার্স ছিলেন। সার্বক্ষণিক চিকিত্সক ও নার্সদের উপস্থিতি পাওয়া গেছে সকল ইউনিটে।

এছাড়া রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, হূদরোগ ইনস্টিটিউট, কিডনি ইনস্টিটিউট, ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, নিউরো সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট, চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, পঙ্গু হাসপাতালসহ সকল সরকারি হাসপাতালে চিকিত্সক ও নার্সদের উপস্থিতিতে চব্বিশ ঘণ্টা চিকিত্সা সেবা চালু ছিল।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জনগণের সেবা দেয়া আমাদের সরকারের পবিত্র দায়িত্ব। ঈদে রোগীদের সেবাদানে আগে থেকেই সতর্ক ছিলাম। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে যাতে ডাক্তারের সমস্যা না হয়, সেজন্য আগে থেকেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, ছুটির সময়ও আমি নিজে নিয়মিত খবরাখবর রেখেছি। বিশ্বস্ত মাধ্যম দিয়ে হাসপাতালের সার্বিক অবস্থা জানার ব্যবস্থা করেছি। দায়িত্বে অবহেলা করার সুযোগ ছিল না। দায়িত্বে অবহেলা করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি আগে থেকেই জানিয়ে দিয়েছিলাম।

জানা যায়, স্বাভাবিক চিকিত্সা সেবা নিশ্চিত করতে প্রতিটি বিভাগের জন্য পৃথক পৃথক রোস্টার তৈরি করা হয়। অপারেশন থিয়েটারও চালু ছিল। বিশেষ টিম চিকিত্সা সেবা তদারকি করেছে। চিকিত্সকের সংখ্যা স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় কম থাকলেও সেবার বিন্দুমাত্র ত্রুটি হয়নি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঈদের আগের মতোই রোগীরা এসেছেন, চিকিত্সা নিয়ে আবার চলেও গেছেন। আবার অনেকেই ভর্তি হচ্ছেন। অপারেশন হচ্ছে। জরুরি বিভাগ ও ইনডোরে জরুরি চিকিত্সা সেবা ২৪ ঘণ্টা ছিল। রোগীরা আসছেন-যাচ্ছেন, কারো কোনো অভিযোগ নেই।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন দুই বছরের শিশু হামীম। বাড়ি কিশোরগঞ্জে। হামীমের সঙ্গে আছেন মা রওশন আরা। তিনি বলেন, ঈদের আগের দিন ছেলেকে জ্বর এবং খিচুনি নিয়ে হাসপাতালে এনেছি। কোন সমস্যা হয়নি। ডাক্তার-নার্স সবাই ছিল। চিকিত্সা পেয়ে আমার ছেলে সুস্থ হয়ে উঠেছে।

রাজবাড়ি থেকে এসেছেন শান্তা। বয়স ১১ বছর। সঙ্গে শান্তার বাবা ভ্যান চালক হেলাল। তিনি বলেন, ঈদের আগের দিন দাঁতে রক্তক্ষরণ এবং প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে মেয়েকে হাসপাতালে এনেছি। কোনো সমস্যা হয়নি।

গাইনি ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্স রত্না দত্ত জানান, হাসপাতালে অনেক ডাক্তার আছেন। গাইনি ওয়ার্ড ২৪ ঘণ্টা খোলা আছে। নিয়মিত ডেলিভারির কোনো সমস্যা হয়নি। ঈদের দিনে স্পেশাল খাবারও বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া নিয়মিত রোগী পরিদর্শন করছেন ডাক্তাররা।

সার্জারি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, খাদ্যনালি সরু হয়ে গেছে রোগী সফিকুর রহমানের। বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে। জানা যায়, অপারেশনও হয়েছে তবে কোনো সমস্যা হয়নি। সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে।

সিসিইউতে গিয়ে দেখা যায়, ২৪ ঘণ্টা ডাক্তার ছিল। আগের মতোই ঈদের দিনও স্বাভাবিক চিকিত্সা সেবা ছিল। একই দৃশ্য দেখা যায় আইসিইউতেও। সিসিইউ এবং আইসিইউর চিকিত্সা সেবা ছিল বেশি সন্তোষজনক।

নিউরো সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম বলেন, সিরাজগঞ্জের সড়ক দুর্ঘটনার দুইজন রোগী আমাদের এখানে ভর্তি করা হয়েছে। জরুরি বিভাগে তাদের ভর্তি করা হয়েছে। সর্বাত্মক তদারকি করা হচ্ছে তাদের। জরুরি চিকিত্সা সেবা ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত ছিল বলে তিনি জানান।

বক্ষব্যাধি হাসপাতালের পরিচালক ডা. রাশিদুল হাসান বলেন, ঈদে রোগী কম। তাই চাপও কম। হাসপাতালের চিত্র স্বাভাবিক রয়েছে। অনেকে ছুটিতে গেলেও বেশিরভাগ ডাক্তার-নার্স চিকিত্সা সেবা সঠিকভাবে চালিয়েছেন। কোন ধরনের সমস্যা হয়নি। রোগীরা খুশি হয়েছেন বলে তিনি জানান।