অন্য এক উত্থান

দক্ষিণ আফ্রিকার বাংলাদেশ সফরে ওয়ানডে সিরিজ থেকে ডেল স্টেইন নিজেকে সরিয়ে নিয়ে মন্তব্য করেনÑ আমি ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ খেলতে চাই। আর তাই অগুরুত্বপূর্ণ ওয়ানডে সিরিজে বল করে শক্তি অপচয় করার ইচ্ছে নেই। ক্যারিয়ারের এ পর্যায়ে যে বলগুলো অবশিষ্ট আছে সেগুলো বাংলাদেশের বিপক্ষে অপচয় না করে বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতার জন্য জমিয়ে রাখতে চাই।
যে সিরিজকে অগুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছিলেন সিরিজ শেষে তার টুইটটি পড়লে তার যে ভুল ভেঙেছে তা অনুমেয়। তিনি লিখেছেনÑ ছুটি শেষ এবার ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। শিগগির দেখা হচ্ছে বাংলাদেশ, চ্যালেঞ্জের অপেক্ষায় রইলাম।
হ্যাঁ, অবজ্ঞার জবাব এখন টাইগাররা মাঠেই দেয়। ২২ গজই এখন টাইগারদের মোক্ষম জবাবের ক্ষেত্র। আর তাই তো ডেল স্টেইনরা লড়তে চায় কোমর বেঁধে। ক্রিকেটের নতুন এক শক্তির আবির্ভাব হয়েছে। আর সে পরাশক্তির নাম বাংলাদেশ। ডোরাকাটা দাগ দেখলে এখন হৃদয়ে কাঁপন ওঠে। বাঘের গর্জন এখন প্রায়ই শোনা যাচ্ছে। ২২ গজের মধ্যে টাইগাররা এখন সত্যিকার গর্জন দেয়। যে গর্জন শুনেছে নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা। গর্জে উঠে টাইগাররাও জানিয়ে দিয়েছে তাদের আবির্ভাব-উত্থান।
সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পর বিশুদ্ধবাদী সমালোচকরা যা খুশি রায় দিতে পারেন। বিশ্ব ক্রিকেটের নক্ষত্ররা পরপর তিন পরাশক্তিকে পরাজিত করার পরও ভাবতে পারে টিমটির সাময়িক সুসময় চলছে। কিন্তু বাস্তব হলো ২২ গজে বাংলাদেশ এখন দুর্বার। তাচ্ছিল্য করলে ফেরত দেবে শতভাগ। উদাহরণ হাতের কাছে। এবি ডি ভিলিয়ার্স একটি ওয়ানডে খেললেন না। তাকে সিরিজ থেকে ছাড় দিলেন কর্তৃপক্ষ। ডেল স্টেইন তো অবজ্ঞা করলেন। পরিণতি মাঠে দাঁড় করিয়ে সিরিজ হার।
বিশ্বক্রিকেটও বাংলাদেশের এমন উত্থানকে অন্যভাবে দেখছে। নতুন এ শক্তিকে স্বাগত জানাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পর দেশটির ক্রিকেট বোর্ডের ওয়েবসাইটে লেখা কথাগুলো বাংলাদেশের ক্রিকেটের আশাজাগানিয়াÑ ‘দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের বড় দল হওয়া নিশ্চিত বাংলাদেশের’।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইট ভূয়সী প্রশংসা করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের। তাতে ক্রিকেটের এ জয়যাত্রাকে বড় দল হয়ে ওঠার উৎসব হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
বিশ্ব মিডিয়ায়ও বাংলাদেশের ক্রিকেটের উত্থানকে হ্যাট খোলা অভিনন্দন জানিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাইমেসের শিরোনাম ছিল ‘চাবুক খাওয়া হার’। সুপার স্পোর্টস ও ডেইলি সান ভূয়সী প্রশংসা করেছে। আফ্রিকানরা বাংলাদেশের ক্রিকেটে মুগ্ধ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ফুলিং হু ছদ্মনামে এক ব্যক্তি লিখেছেন: বাংলাদেশকে অভিনন্দন। বাংলাদেশের এ উঠে আসা ক্রিকেটের জন্য দারুণ উপকারী। প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান ডেভিড মিলার টুইট করেনÑ বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হার দুঃখজনক ও বেদনার। এ সফরে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। তবে বাংলাদেশকে কৃতিত্ব দিচ্ছি। তারা দারুণ খেলেছে।
শ্রীলঙ্কার সাবেক ক্রিকেটার রাসেল আরনল্ড লিখেছেনÑ বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য সত্যিই উপভোগের।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এমন উত্থান বিষয়ে সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান বলেন, এতগুলো সিরিজে ধারাবাহিক জেতা, ধারাবাহিকতা রা করা, নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া আস্থাবোধ ও সাহসিকতার মনোভাব কাজ করেছে। রকিবুল হাসানের মতে, বিশ্বের যে কোনো কন্ডিশনে নিজেদের প্রমাণ দেওয়ার সামর্থ্য আছে বাংলাদেশ দলের। ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে ভালো খেলার ধারাবাহিক ধরে রাখতে পারে, তবে বাংলাদেশ ৪-৫ নম্বরে উঠে আসবে।
গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেন, বাংলাদেশ দল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলে সাফল্য পেয়েছে। শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার মনোভাব নিয়ে খেলেছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে সম্মানিত করেছে খেলোয়াড়রা।
সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ রফিক বলেন, বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ ভালো খেলে পরপর তিনটি সিরিজ জিতেছে। বিশ্ব ক্রিকেটে এখন এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সমর্থকরাও এখন বেশ আত্মবিশ্বাসী। দেশের জয়ের এমন ধারাবাহিকতায় তাদের মানসিকতাও এখন পরিবর্তন ঘটেছে। তাদের এখন একটাই চাওয়া অস্ট্রেলিয়া। সবার সম্মিলিত আওয়াজÑ তোমরাই আমাদের আসল প্রতিদ্বন্দ্বী। তাদের এ চাওয়া আতিশয্য মনে হলেও যুক্তিযুক্ত। বাংলাদেশ ক্রিকেটের আজকের উত্তরণের পেছনে এ উদার সমর্থন বরাবরের প্রেরণা। টিম হারুক জিতুক সবসময় পাশে দাঁড়িয়েছে। টিম মাঠে নামলে অবধারিতভাবে কোটি-কোটি সমর্থক দ্বাদশ ব্যক্তির ভূমিকা নিয়েছে। সমর্থনের উত্তাপ আর গর্জনে নামার আগেই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করছে। সবার অলক্ষ্যে ধীরে ধীরে একত্র করেছে বাংলাদেশকে। এভাবেই ক্রিকেট পরম্পরায় টাইগার বাহিনী অর্জন করেছে লৌহ-কঠিন মানসিকতা। আর তাই তো বাংলাদেশ গর্জে উঠেছে। বাইশ গজে এখন দুর্বার বাংলাদেশ। তাদের প্রতিভার বিচ্ছুরণে উদ্ভাসিত ধরিত্রী। বিশ্বজুড়ে তাই এখন বাঘের ডাক।