কমছে দারিদ্র্য, আয় বেড়েছে শ্রমজীবী মানুষের

কমে আসছে দরিদ্রতা। আয় বাড়ছে শ্রমজীবী মানুষের। ফলে স্বচ্ছলতা আসছে তাদের পরিবারে। স্বাধীনতার পর প্রায় ৪০ বছরের মধ্যে এখনই সবচেয়ে অভাব-অনটন ও অর্থকষ্ট কম। এটা চুয়াডাঙ্গা জেলার চিত্র। ভারতের সীমান্তবর্তী এই জেলার বেশ কিছু মানুষ এপার-ওপার করে জীবীকা নির্বাহ করে। তারাও এখন স্বচ্ছল। আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রিত এই জেলায় বিরোধীদের অবস্থা বর্তমানে খুবই দুর্বল। ফলে সরকারি দলের নেতাদের কথামতো চলছে সবকিছু। এলাকাবাসী বলছেন, বর্তমানে চাঁদাবাজি অনেক কম। আগে খুন-খারাপি বেশি হলেও এখন খুব একটা হচ্ছে না। সবচেয়ে আশার কথা, বিদেশে রপ্তানির জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে এখানকার পান।
এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রিক্সা ও ইজিবাইক চালিয়ে, মোটর ড্রাইভার-হেলপারসহ শিল্প কারখানা, কৃষি খামার ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে দিন আনা-দিন খাওয়া বড় একটা জনগোষ্ঠী ভালোই আছে। নারী-পুরুষ মিলে কায়িক পরিশ্রম করা গরিব জনগোষ্ঠীর প্রত্যেকের দৈনিক গড় আয় এখন ৫শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। কষ্টার্জিত এই অর্থে পরিবার-পরিজন নিয়ে তিন বেলা ভাত খেয়ে ভালোভাবেই অতিবাহিত হচ্ছে তাদের জীবন। বছর দশেক আগেও আষাঢ় মাসে বর্ষাকালে গ্রামের অনেক মানুষকে না খেয়ে থাকতে হতো।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া গ্রামের ফার্নিচার মিস্ত্রি আব্দুস সালাম জানান, কাঠের আসবাবপত্র তৈরি করে দৈনিক ৪/৫শ’ টাকা রোজগার হয়। তাতে মোটামুটি ভালই চলছে সংসার। অথচ বছর ৫/৭ আগেও দৈনিক একশ’ টাকা আয় করাও অনেক কঠিন ছিল। চুয়াডাঙ্গা জেলা ট্রাক-ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা আলমডাঙ্গা উপজেলার খুদিয়াখালী গ্রামের ইসলাম উদ্দীন বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা এখন দৈনিক গড়ে ৭ থেকে ৮শ’ টাকা আয় করছে। এই উপার্জনে ভালই চলে যাচ্ছে সংসার। আগে দু’শ’ টাকা আয় করাও কঠিন ছিল।
এদিকে জেলার কৃষি অর্থনীতি এখন অনেকটাই চাঙ্গা। ক্ষেত-খামার ও ফসলি জমিতে উত্পাদিত বেগুন, শশা, পটল, ঝিঙা, কলা, পেঁপে ও চিচিংগাসহ বিভিন্ন ধরনের তরিতরকারি ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় আড়তে পাঠানো হচ্ছে। অত্যন্ত সুস্বাদু ও উন্নত মানসম্পন্ন পান উত্পাদিত হয় চুয়াডাঙ্গা জেলায়। বারমাসি অর্থকরী ফসল পান চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসল। এ জেলায় এ বছর প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। ৭৬ বছর বয়সী প্রবীণ পান চাষি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আকন্দবাড়িয়া গ্রামের ইউনুস জানান, খবরের কাগজে দেখলাম চুয়াডাঙ্গার পান রফতানি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে পান চাষি ইউনুস আলী বলেন, চুয়াডাঙ্গার সুস্বাদু পান বিদেশে রফতানি হলে এ জেলার কৃষি অর্থনীতি অনেকটাই চাঙ্গা হয়ে উঠবে। লাভবান হবে এখানকার হাজারো পান চাষি পরিবার।
চুয়াডাঙ্গা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার (ছেলুন) ইত্তেফাককে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময়ে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ তাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে করতে পারছেন। এই সরকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তাই সবাই এখন অনেক ভাল আছেন।’
অপরদিকে এখানকার সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন এনজিও এবং ব্যক্তি মালিকাধীন ফার্ম, প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা কেন্দ্রে চাকরি করছেন হাজার হাজার পেশাজীবী ও কর্মজীবী মানুষ। তারাও বর্তমানে যে বেতন পাচ্ছেন তাতে তারা সন্তুষ্ট। জানা গেছে, গত ৩/৪ বছর এখানে ভিক্ষুকের সংখ্যা কমেছে। এখন আর আগের মত দলধরে ভিক্ষুকদের মানুষের বাড়ি বাড়ি অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে খুব একটা ভিক্ষা চাইতে দেখা যায় না। এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও ভিক্ষুকের ভীড় এখন খুব একটা দেখা যায় না। এমন কি, এলাকার কোন বাড়িতে মৃত্যুবার্ষিকীর আয়োজনে খানা-পিনা বিতরণের জন্য কোন ভিক্ষুক খুঁজে পাওয়া যায় না।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা মাস্টার বলেন, এলাকার ফকির-মিসকিনসহ গরীব ও দুস্থ জনগোষ্ঠী এখন বিভিন্ন বৃত্তিমূলক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অনেকটাই স্বাবলম্বী হওয়ার পথে। তাই এলাকার ফকির-মিসকিন ও দুস্থদের সংখ্যা ক্রমশ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও থেকে টাকা নিয়েও ব্যবসা করে সচ্ছল হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ।
চুয়াডাঙ্গার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় ভাল। আগে এখানে প্রায় প্রতিদিনই গড়ে ২/৩টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতো। এ ছাড়াও ছিল বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে চাঁদাবাজি, অপহরণ ও জিম্মি করে মোটা অংকের মুক্তিপণের টাকা আদায় নিত্যদিনের ঘটনা। সন্ত্রাস কবলিত সেই বিভীষিকাময় চুয়াডাঙ্গা জেলা এখন শান্ত একটি জনপদ। এ প্রসঙ্গে আলমডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ও সার ব্যবসায়ী মীর মহিউদ্দীন বলেন, জেলায় বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল। হত্যা, অপহরণ, জিম্মি করে মুক্তিপণের টাকা আদায়ের অপরাধ প্রবণতা এখন আর নেই। এখানকার মানুষ এখন ভালই আছেন।
ঈদের বাকি মাত্র ক’দিন। ঈদকে সামনে রেখে জেলার সর্বত্র বিপণি বিতানগুলোতে ভাল বেচাবিক্রি দেখা যাচ্ছে। প্রবীণ কাপড় ব্যবসায়ী ও আলমডাঙ্গা কেন্দ্রীয় তন্ত্রবায় সমবায় শিল্প সমিতির সভাপতি হাজী গোলাম রহমান সিন্দুল বলেন, ঈদ সামনে রেখে এবার একটু আগে-আগেই বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে। মানুষের হাতে ভালই টাকা আছে। কাপড় ব্যবসায়ী মেসার্স রমজান ক্লথ ষ্টোরের মালিক রমজান আলী বলেন, এবারের বেচাবিক্রি মোটামুটি ভাল। তিনি বলেন, চাঁদাবাজি এবং হুমকি-ধামকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা শান্তিতেই ব্যবসা করছেন। (শেষপর্ব)