রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ পরিচালন মুনাফা জনতা ব্যাংকের

চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। পরিচালন মুনাফা বাড়লেও ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা কমতে পারে। এই পরিচালন মুনাফা থেকে ব্যাংকের ঋণ ও খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে লোকসান দেয়ায় এর বিপরীতে প্রভিশনের পরিমাণ আরো বাড়বে। ফলে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা আরো কমবে। এদিকে তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে সব থেকে বেশি পরিচালন মুনাফা হয়েছে জনতা ব্যাংকের। জনতা ব্যাংক ২০১৫ সালের অর্ধবার্ষিক হিসেবে ৫১৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে- যা বিগত ২০১৪ সালের একই সময়ের তুলনায় ১১২ কোটি টাকা বেশি। বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য হতে জানা যায়, একই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংক ৩৯৯ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক ৪৯৭ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংক ১৩৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে।

এদিকে ব্যাংকগুলোকে ৬ মাসের পরিচালন মুনাফার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হবে ও স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের জানাতে হবে। ব্যাংকগুলো বলছে, সার্বিকভাবে আগের বছরের তুলনায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ হয়েছে। আমদানি খাতও অনেক গতিশীল হয়েছে। এছাড়া সার্ভিস চার্জ থেকেও মুনাফার একটি বড় অংশ এসেছে। এগুলোর প্রভাব মুনাফার ওপরে পড়েছে। বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রায় সবাই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। ব্যাংকগুলো কিছুদিন পরে তাদের এ মুনাফার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে পেশ করবে। এরপর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য এসব তথ্য অফিসিয়ালি প্রকাশ করা হবে। এর আগে যে কোনো মাধ্যমে তা প্রকাশের ওপর বিএসইসির বিধি-নিষেধ রয়েছে। এ কারণে আপাতত ব্যাংকগুলো তাদের পরিচালন মুনাফার তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে না। তবে বিভিন্ন সূত্রে বেশ কিছু ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য পাওয়া গেছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা সবচেয়ে বেশি। ২০১৪ সালের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংকটির মোট পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৮৪০ কোটি টাকা- যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ছিল ৮৩০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। আলোচ্য সময়ে ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফা করেছে ৩৯৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪১৪ কোটি টাকা। তবে বেসিক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ঋণাত্মক ধারায় অবস্থান করছে। গত ৬ মাসে পরিচালন মুনাফা অর্জিত হয়েছে ১৬৯ টাকা। ন্যাশনাল ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ৩১০ কোটি টাকা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ২১০ কোটি, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৯০ কোটি টাকা, এনসিসি ব্যাংক ১৮০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৭৫ কোটি টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ১৩৫ কোটি টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ১৫০ কোটি টাকা, গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ১৮৭ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংক ২৭০ কোটি টাকা, গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ২০১ কোটি টাকা।

নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক ২৭ দশমিক ৫০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১১ কোটি টাকা, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ৩৬ কোটি টাকা- যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১২ কোটি টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংক ২৭ দশমিক ৬ কোটি- যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩ কোটি টাকা, মধুমতি ব্যাংক ২৮ কোটি- যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২২৫ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংক ৬০ কোটি- যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২০ কোটি টাকা, মেঘনা ব্যাংক ২৪ কোটি- যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২০ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, যে কোনো ব্যবসার প্রবৃদ্ধি খুবই স্বাভাবিক। ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফাতেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে মুনাফা খুব সাংঘাতিক বেড়ে যাবে তা নয়। এছাড়া ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা প্রকৃত মুনাফা নয়। বছর শেষে পরিচালন মুনাফা থেকে কর, প্রভিশনসহ অনেক কিছু বাদ দিয়ে নিট বা প্রকৃত মুনাফা হিসাব করা হয়ে থাকে। ফলে মুনাফা খুব বেশি বাড়বে বলে মনে হয় না।