সফল তিনি

কেউ লাখ লাখ অর্থ ব্যয় আর সাথে কঠোর পরিশ্রম করেও সফলতার হাতছানি পায় না। আবার কেউ দুইটির একটি ব্যয় করে সফলতার শীর্ষে পৌছে যায়,আবার এমনো নজির রয়েছে শুধু উত্সাহের কারনে পিছিয়ে পড়েছে জীবন যুদ্ধ থেকে। কিন্তু আরেকজন কোনটাই নয়,শুধু পরিবারের উত্সাহ পেয়ে হাতছানি দিয়েছে সফলতাকে। তেমনি একজন তত্ত্বধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্ঠা, সফল উদ্যোক্তা গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী

বাংলাদেশের বিখ্যাত অ্যাডভার্টাইজিং এবং কমিউনিকেশন কোম্পানি অ্যাডকমের চেয়ারম্যান গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী। পরিবার থেকেই দারুণ এক পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন তিনি। ছয় ভাইবোনের সবচেয়ে বড় সাফিয়াদের পরিবারে ছেলে মেয়েদের সমান চোখেই দেখা হত। মেধাবী সাফিয়া হলিক্রস কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করেন। পড়াশুনা চলার সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখির হাতে খড়ি। পরে অবশ্য লেখালেখিই করেছেন অনেক দিন। তার ধারাবাহিকতায় প্রায় চার বছর ধরে তিনি পাকিস্তান অবজারভারে কাজ করেছেন। দু’বছর ধরে করাচীর শি ম্যাগাজিনেও লিখেছেন তিনি। ১৯৭২ সালে তিনি ইন্টারস্প্যান অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সিতে কাজ করা শুরু করেন। এরপর ১৯৭৪ সালে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাডকম নামে অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সি। সাফিয়ার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের অনেক নামীদামী ব্র্যান্ডের সাথে কাজ করেছেন তিনি। কাজের স্বীকৃতি হিসেব বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক জিতেছেন। ১৯৯৫ সালে অনন্যা পদক, ১৯৯৯ সালে ভারতীয় মহিলা উদ্যোক্তা ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ‘প্রিয়দর্শিনি পদক’ অর্জন করেন। ২০০২ সালে ডেইলি স্টার এবং ডিএইচএল এর সৌজন্যে ‘আউটস্ট্যান্ডিং উইম্যান ইন বিজনেস’ পদক জিতে নেন। নিজের কাজের ক্ষেত্র অ্যাডভার্টাইজিংয়েও এশিয়ান অ্যাডভার্টাইজিং এর দেয়া সেরা অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সির পুরস্কার অর্জন করে তার প্রতিষ্ঠান। ২০০৫ সালে একই সংস্থা অ্যাডকমকে আজীবন সম্মাননা পুরষ্কার দিয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও নিয়মিত লেকচার দিয়ে থাকেন সাফিয়া। জনতা ক্লাব এবং অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সির প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০০৭ সালে তিনি মহিলা এবং শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। কথার এক ফাঁকে তিনি নারীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করার মত বাংলাদেশে অনেক নারীদেরই যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা আছে। কিন্তু তারপরও অনেকেই নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখছেন। তাই এখন সেসব নারীদের বলছি, আর সময় নষ্ট না করে নতুন কিছু করতে উদ্যোগী হন। হয়তো এসডি এশিয়ার সামনের কোন আর্টিকেলটি হবে আপনাকে নিয়েই।
নিজেকে নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি তখন বলেন, যখন আমি ব্যবসা শুরু করি তখন থেকেই আমাকে নানান প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। নারী বলে তখন আমাদের উত্সাহ দেয়ার মতো মানুষ ছিল হাতেগোনা। বেশির ভাগ নারীরা বিয়ের পর স্বামীর ঘরে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারে না তবে আমি সে দিক থেকে সৌভাগ্যবান ছিলাম। আমি যখন ব্যবসা নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম তখন আমার শ্বাশুরী আমাকে বেশ উত্সাহ দিয়েছিলাম। আমার পরিবার ও সন্তানকে সেইয়ে সামলিয়ে ছিল। নারী বলে অনেক সময় ক্লায়েন্টরা বিশ্বাস করতে পারছিল না আমার ওপর। কিন্তু আমি যখন আত্ববিশ্বাস নিয়ে কাজগুলো সম্পূর্ণ করে দিতাম তখন ক্লায়েন্টরা আশ্চর্য হয়ে যেতো। দিনের পর দিন এভাবেই নিজেকে সবার মাঝে জানান দিয়েছি। কাজ করেছি নিজেকে জানান দেয়ার জন্য। একজন নারী যখন তার পরিবার, তার আপনজন বা কাছের মানুষগুলোর কাছ থেকে তার কাজের উত্সাহ পায় তাহলে সে অনেক এগিয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের পরিবার গুলোর উচিত্ আমাদের পরিবারে নারী সদস্যদের উত্সাহ দেয়া।