কারখানা সংস্কারে ৩৮৫ কোটি টাকা দেবে আইএফসি

গার্মেন্টস কারখানা সংস্কারের লক্ষ্যে প্রথমবারের মত বড় অঙ্কের অর্থ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশের কারখানা পরিদর্শন জোট অ্যালায়েন্স। অ্যালায়েন্সের মধ্যস্থতায় কারখানাগুলোকে ৫ কোটি মার্কিন ডলার বা ৩৮৫ কোটি টাকা দেবে আইএফসি (ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন)। কারখানা মালিকরা ভবনের অগ্নি ও কাঠামোগত ত্রুটি সংশোধনে লক্ষ্যে স্বল্প সুদে এ অর্থ পাবেন। ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে এ অর্থ পরিশোধ করার সুযোগ থাকবে। বাংলাদেশের ৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এ অর্থ ছাড় করা হবে। এ লক্ষ্যে আইএফসি’র সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে অ্যালায়েন্স। অ্যালায়েন্স প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর কারখানার মালিকদের অর্থায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের এ উদ্যোগ নেয়া হলো।

অ্যালায়েন্সের ওয়াশিংটন অফিস থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বর্তমানে অ্যালায়েন্সের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কংগ্রেস ওম্যান অ্যালেন টসার। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, অর্থায়নের এ উদ্যোগ বর্তমান কারখানা সংস্কার প্রক্রিয়াকে আরো বেগবান করবে। এই ঋণের ফলে বাংলাদেশের লাখ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিকের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি হবে। এই খাতকে টেকসই ও নিরাপদ করতে অ্যালায়েন্সের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রথমবারের মত এ ধরনের বড় আকারের অর্থায়নের ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সম্প্রতি সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃবিতে বলা হয়, এর ফলে কারখানা মালিকদের আর্থিক ব্যয় ও ঝুঁকি উভয়ই উল্লেখযোগ্য হারে কমবে।

রানা প্লাজা ও তাজরীনের দুটি বড় দুর্ঘটনার পর আন্তর্জাতিক চাপে কারখানা পরিদর্শনের লক্ষ্যে গঠিত হয় অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি নামে এ জোট। এতে বিশ্বখ্যাত ওয়ালমার্ট, ভিএফ কর্পোরেশন, টার্গেট, চিলড্রেন্স প্লেস, গ্যাপসহ ২৬টি ব্র্যান্ড যুক্ত রয়েছে। এসব ব্র্যান্ডের কাছে পোশাক সরবরাহ করে এমন প্রায় ৬শ’ কারখানা ত্রুটি চিহ্নিত করে সংস্কার কার্যক্রম পরিদর্শন করছে অ্যালায়েন্স। প্রতিষ্ঠার শুরুতে বাংলাদেশের কারখানার অগ্নি ও ভবনের নিরাপত্তা মান উন্নয়নে ৫ বছর কাজ করার অঙ্গীকার ছিল তাদের। সেই সঙ্গে উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে অর্থায়নের লক্ষ্যে প্রতি বছর ১০ কোটি ডলারের (প্রায় ৭৬০ কোটি টাকা) তহবিল গঠনের কথাও ছিল। তবে গত দুই বছরে সুনির্দিষ্টভাবে এ ধরনের বড় অঙ্কের তহবিল গঠন বা কোন অর্থ দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়নি। এ নিয়ে গার্মেন্টস মালিকরা তাদের ক্ষোভ আর হতাশার কথা জানিয়ে বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছিলেন।

দেশে বর্তমানে চালু রয়েছে এমন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার গার্মেন্টস কারখানার ত্রুটি পরিদর্শন ও সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অ্যালায়েন্সের বাইরে অ্যাকর্ড প্রায় ১ হাজার ৭শ’ কারখানার সংস্কার কার্যক্রম তদারক করছে। এর বাইরে বাদবাকী কারখানা আইএলও (আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা) ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে পরিদর্শন চলছে। এসব পরিদর্শনে ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় প্রায় ৩৫টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। বাদবাকী কারখানাগুলোকে ৩ মাস থেকে শুরু করে ১ বছর মেয়াদের মধ্যে ত্রুটি সংশোধনে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে।