সমুদ্র তলদেশে নির্মিত হচ্ছে পাইপলাইন

কুতুবদিয়া থেকে জ্বালানি তেল আসবে চট্টগ্রামে

কুতুবদিয়ার কাছে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান নেয়া মাদার ভেসেল থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামে জ্বালানি তেল নিয়ে আসার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) নামের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তেলের পরিবহন ব্যয় অনেক কমবে। কুতুবদিয়া সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর, মহেষখালী ও চট্টগ্রামে থাকবে এই প্রকল্পের স্থাপনা।

পাইপলাইন ও অন্যান্য স্থাপনা তৈরি হলে লাইটারেজ (ছোট) জাহাজ দিয়ে জ্বালানি তেল খালাস করা লাগবে না। ফলে লাইটারেজ জাহাজের ভাড়ার প্রশ্ন থাকছে না। আবার মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) ৮/১০ দিনের স্থলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তেল খালাস করে চলে যেতে পারবে। ফলে তাদেরও ভাড়া কমবে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) দীর্ঘদিন ধরে এসপিএম প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চীনা অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

প্রকল্পের অধীনে দু’টি পৃথক পাইপ লাইনের মাধ্যমে ডিজেল ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিবহনের পরিকল্পনা রয়েছে। দু’টি পাইপের মাধ্যমে বছরে সর্বমোট ৯০ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে একটি পাইপলাইন স্থাপন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে ৪৫ লাখ টন ডিজেল এবং ১০ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করা সম্ভব হবে। কুতুবদিয়া সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে মাদার ভেসেল আসলে সেখান থেকে জ্বালানি তেল ১৬ কিলোমিটার পাইপের মাধ্যমে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে মহেষখালীতে স্থাপিত ট্যাংক ফার্মে জমা করা হবে। সেখান থেকে স্থল (৩০ কিলোমিটার) ও সমুদ্র তলদেশে (৬৪ কিলোমিটার) নির্মিত ৯৪ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যম তেল চট্টগ্রামে পৌঁছাবে। এ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে আইএলএফ নামের একটি জার্মান প্রতিষ্ঠান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুধু আর্থিক সাশ্রয় ও দ্রুত তেল পরিবহন নয় বরং ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট চালুর সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। কারণ রিফাইনারির নতুন ইউনিটের জন্য বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হবে।

আবার সরকার ভারত, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে কানেক্টিভিটির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যার ফলে সড়ক ও নৌপথে ব্যবহারের জন্য ডিজেলের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। প্রায় ৫ থেকে ৬ ভাগ ডিজেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চাহিদা এই পরিমাণ বাড়লে শুধু ডিজেল খালাসের জন্য একটি পাইপলাইন স্থাপনের প্রয়োজন হবে।

বর্তমানে মাদার ভেসেল থেকে ছোট জাহাজে করে জ্বালানি তেল চট্টগ্রাম বন্দরের ডিপো এলাকায় নিয়ে আসা হয়। এক্ষেত্রে জাহাজ ভাড়াসহ ব্যারেল প্রতি খরচ হয় গড়ে ২২ ডলার। কিন্তু পাইপলাইন নির্মিত হলে ব্যারেল প্রতি খরচ ১৩ থেকে ১৫ ডলারে নেমে আসবে। বিপিসি বর্তমানে প্রায় ৩০ থেকে ৩২ লাখ টন ডিজেল আমদানি করে থাকে। কিছু অপরিশোধিত জ্বালানি তেল এনে ইস্টার্ন রিফাইনারির মাধ্যমে পরিশোধন করা হয়। কিন্তু ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে ৩০ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসপিএম প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয় বেশি হলেও পরে সেটি পুষিয়ে যাবে। কারণ পাইপলাইনে তেল পরিবহনের ফলে অপচয় কমবে। আর ভাড়া কমার বিষয়টিতো রয়েছেই।

বিপিসি’র জেনারেল ম্যানেজার (পরিকল্পনা) কুদরুতে ইনালী জানান, দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির দিকে লক্ষ্য রেখে সরকার এসপিএম প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। এটি ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটের জন্যও জরুরি।