মোট রাজস্ব আয়ের ২০ শতাংশ দিল চট্টগ্রাম কাস্টমস

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মোট রাজস্ব আয়ের ২০ শতাংশ জোগান দিল চট্টগ্রাম কাস্টমস। এককভাবে রাজস্ব আয়ে শীর্ষে থাকা এই কাস্টম হাউস সদ্য সমাপ্ত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৭ হাজার ২৪৪ কোটি টাকার রাজস্ব জমা দিয়েছে। যা এনবিআরের অর্জিত মোট রাজস্ব এক লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ২০ শতাংশ। এর আগের বছর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলেও রাজস্ব জোগানের এই হার ছিল ২০ শতাংশ।

টানা তিন মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও চরম সহিংসতার মধ্যেও এবার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা এক মাস আগেই পূরণ করেছে কাস্টমস। বিগত জুনে দুই দফা লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ৯০০ কোটি টাকা বাড়ানোর পরও সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে বাড়তি ৩১১ কোটি টাকার রাজস্ব জোগান দেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস। বিগত ২০১২-১৩ এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কাস্টমস লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। এর আগে কাস্টমস থেকে এত রাজস্ব আয়ের রেকর্ড নেই।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুই দফা বাড়ানোর পরও এবার চট্টগ্রাম কাস্টমস লক্ষ্যমাত্রার ৩০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করেছে। বিগত দুই বছর লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে থাকলেও এবার কাস্টমসের ইতিহাসে রেকর্ড রাজস্ব আয় হয়েছে।’

কাস্টমস সূত্র জানায়, গত বাজেটে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা। গত ৪ জুন এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে কাস্টমস। এরপর জুনের প্রথম সপ্তাহে এর সঙ্গে বাড়তি এক হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা, পরে আরো ১২৪ কোটি টাকা যোগ করে ২৬ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। ৩০ জুন পর্যন্ত এর বিপরীতে ২৭ হাজার ২৪৪ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য মতে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এনবিআরের অধীন মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ১১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, এর বিপরীতে চট্টগ্রাম কাস্টমস জমা দিয়েছে ২৩ হাজার ২১৬ কোটি টাকা। গড় হিসাবে এই হার ২০ শতাংশ। আর ২০১২-১৩ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৩৩ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে চট্টগ্রাম কাস্টমস দিয়েছে ২৩ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা, যা প্রায় ২২ শতাংশ।

এ বিষয়ে গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী বাবর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির গতিপ্রকৃতির ওপর কাস্টমসের রাজস্ব আদায় অনেকটাই নির্ভরশীল। আর দেশের মোট রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চট্টগ্রাম কাস্টমসের দিকেই প্রথম নজরটা থাকে এনবিআরের। দুই দফা বাড়িয়ে দেওয়ার পরও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ এর বড় প্রমাণ। এখন কাস্টমসের দক্ষতা বাড়িয়েই রাজস্ব আদায়ের কৌশল নেওয়া উচিত।’

জানা গেছে, নতুন অর্থবছর শুরু হতেই চট্টগ্রাম কাস্টমসের জন্য চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৩ হাজার কোটি টাকার নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এনবিআর। যা বর্তমান অর্জিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২২ শতাংশ বেশি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার হোসেন আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকলে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন কোনো বিষয় নয়।’

চট্টগ্রাম বন্দরেও সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে এবার রেকর্ড পরিমাণ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে। কনটেইনার হিসাবে এর পরিমাণ ১৮ লাখ ৬৭ হাজার একক। পণ্য পরিবহনে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। এর আগের বছর পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছিল ১৫ লাখ ২৫ হাজার একক। আমদানি-রপ্তানির প্রবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশে উন্নয়নে গতিপ্রকৃতি বোঝা যাবে চট্টগ্রাম বন্দরে এলে। প্রতি মাসে কনটেইনার পরিবহনের নতুন রেকর্ড প্রথমে জাদুকরি মনে হলেও যখন ধারাবাহিকভাবে এই গতি অর্জিত হচ্ছে তখনই বিষয়টি স্পষ্ট হয়। এই গতি অব্যাহত থাকলে রাজস্ব আয় তো বাড়বেই এবং বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশের স্বপ্ন পূরণ সহজ হবে।’

জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টমসে গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা, এর বিপরীতে আয় হয়েছে ২৩ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা থেকে দুই হাজার ৫৪১ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছিল। এর আগের ২০১১-১২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ২২ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা, লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।