জাতিসংঘ প্রশিক্ষণ দেবে ফুটপাতের খাবার বিক্রেতাদের

রাজধানীতে অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রেতা আট সহস্রাধিক

রাজধানীতে স্বল্প আয়ের মানুষরা প্রায়ই ফুটপাতের খাবার খেয়ে থাকেন। তবে ফুটপাতে এমন কিছু মুখরোচক খাবার রয়েছে যা দেখলে লোভ সামলানো অনেকের পক্ষেই কঠিন। কিন্তু খুব কম মানুষই জানে সবাই টাকা দিয়ে খাবার কেনার পাশাপাশি রোগও কেনেন।

রাজধানী ঢাকায় জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক কার্যক্রম রয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, খোদ ঢাকাতেই ৮ সহস্রাধিক পথখাবার বিক্রেতা রয়েছে। যারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এবং খোলা জায়গায় খাবার বিক্রি করে।

গবেষকরা বলছেন, বিক্রেতাদের সচেতন করে খাবারে দূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব। ‘ঢাকা শহরে নিরাপদ পথখাবার নিশ্চিতকরণে রাস্তার বিক্রেতাদের আচরণ পরিবর্তনে উদ্যোগ’ শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

গবেষণায় ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের অক্টোবরের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭ হাজার ৭৫৪ জন পথখাবার বিক্রেতার ওপর জরিপ করা হয়। তাদের বিক্রি করা খাবার পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়।

এর আগে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার ৫৫ শতাংশ পথখাবারে নানা ধরনের জীবাণু রয়েছে। এসব খাবার বিক্রেতাদের ৮৮ শতাংশের হাতে থাকে জীবাণু।

জাতিসংঘের গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানীর পথে পথে ফুচকা, চটপটি, আচার, ঝালমুড়ি, পিঠা, শরবত, ডালপুরি, ইফতার আইটেমসহ নানা ভাজাপোড়া শখ করে কিংবা প্রয়োজনে খেয়ে ফেলছেন সবাই। পান করছেন পথের পাশের পানি কিংবা চায়ের দোকানের বিভিন্ন খাবার। এসব থেকেই শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে রোগ-জীবাণু।

গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের খোলা খাবার খেয়ে পেটের পীড়া, পেটের প্রদাহ, আমাশয়, ক্ষুধামন্দা, এন্টিফিভার, জন্ডিস, হেপাটাইটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত কোমলমতি শিশুরা। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমজীবী মানুষও রোগাক্রান্ত হচ্ছে।

গবেষকরা বলছেন, রাস্তার পাশে যেসব খোলা খাবার বিক্রি হয় তার ‘মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ভ্যালু’ রীতিমত ভয়ঙ্কর। যে পরিবেশে খাবার রান্না কিংবা পরিবেশন করা হয়, তা বেশির ভাগ সময়ই নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর থাকে। তাছাড়া এসব খাবার বিশেষ করে আচার বা এ ধরনের খাবারে যে সব রঙ মেশানো হয় তা ফুডগ্রেডের নয়। এসব রঙ কাপড়ে ব্যবহার করা হয়। এই রঙ মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কিছু কিছু রঙের কারণে ক্যান্সার হয়। এই রঙ কিডনি ও লিভার নষ্ট করে দেয়। পর্যাপ্ত হিটিং সিস্টেমে রান্না না করার কারণে খাবারগুলোতে প্রচুর জীবাণু থাকে; যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর।

তবে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক কার্যক্রমের আওতায় ফুটপাতের বিক্রেতাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশিক্ষণের আগে বিক্রেতাদের নিবন্ধন করতে হবে। আর এটা করতে হবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। কর্মসূচির শেষ পর্যায়ে বিক্রেতাদের পরিবেশ বান্ধব এবং খাদ্য নিরাপদ রাখার ৬০০ গাড়ি দেয়া হবে।

জাতিসংঘ নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক কার্যক্রমের সিনিয়র উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন বলেন, শ্রমজীবী মানুষরা ফুটপাতের এসব খাবার খায়। এই খাবার স্বাস্থ্যসম্মত কীনা সেটাও জানে না এরা। কার্যক্রমটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে নিরাপদে মানুষ ফুটপাতে খাবার খেতে পারবে।

তিনি বলেন, পথের পাশে খাবার তৈরি প্রক্রিয়া, রান্না, সংরক্ষণ, সরবরাহ এসব স্তরে খাবার দূষিত হয়। দূষণের কারণ বা জীবাণুযুক্ত হওয়ার একটি বড় কারণ অনিরাপদ পানির ব্যবহার। খাবার বিক্রেতার নোংরা হাতে, গামছায়, খাবার সরবরাহের প্লেটে বা কাগজে জীবাণু থাকে। বারবার টাকা নাড়াচাড়া করার কারণে খাবারে দূষণ ঘটে। এছাড়া মাছি বা অন্যান্য কীটপতঙ্গের কারণেও দূষণ ঘটে।

বিক্রেতাদের খাবার খোলা অবস্থায় না রাখা, সরু মুখওয়ালা পানির পাত্র ব্যবহার, কাঁচা খাবার বা সরঞ্জাম পরিষ্কার রাখা, হাত ধোয়া, গ্লাভস ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি। এই গাড়ি দেয়ার পর সিটি করপোরেশন থেকে মনিটর করা হবে। না মানলে ভেজাল আইনে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে সিটি করপোরেশন বলেও জানান তিনি।