ছয় মাসে বিদেশে চাকরি হয়েছে ২,৪৪,২৩৯

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে দুই লাখ ৪৪ হাজার ২৩৯ বাংলাদেশির। এটি আগের বছরের ১২ মাসে মোট বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ৫৭ শতাংশ। এ বছরের প্রথম ছয় মাসের এ হারকে আগের বছরের তুলনায় সন্তোষজনক মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের মতে, আগামী মাসগুলোতে মালয়েশিয়ায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছিল চার লাখ ২৫ হাজার ৬৮৫ জনের। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে এর অর্ধেকেরও বেশি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি জনশক্তি গেছে ওমানে, ৫৪ হাজার ৯৭৬ জন। কাতারে গেছে ৫৪ হাজার ৫৪৩, সিঙ্গাপুরে ২৬ হাজার ৫৭৫, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৫ হাজার ৮৯৪, বাহরাইনে ১২ হাজার ১৫৮, জর্ডানে ১১ হাজার ৭৮৯, সৌদি আরবে ১১ হাজার ৩৮২, লেবাননে ১০ হাজার ২৫০, কুয়েতে আট হাজার ৭১৩, ইরাকে ছয় হাজার ৫৬৩, মালয়েশিয়ায় চার হাজার ৬৩৮ ও ব্রুনাইয়ে তিন হাজার ৪৩২ জন।

জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ২৮ হাজার ৩৩৩ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৫ হাজার ৫৭, মার্চে ৪৫ হাজার ৩১৯, এপ্রিলে ৪৪ হাজার ৯৫২, মে মাসে ৪৪ হাজার ৯১০ এবং জুনে ৪৫ হাজার ৬৬৮ জনের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী মাসগুলোতে জিটুজি ছাড়াও বেসরকারি পর্যায়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের নিয়োগ শুরু হলে বিদেশে কর্মসংস্থানের হার অনেক বেড়ে যাবে। এ ছাড়া সৌদি আরবে বাংলাদেশি গৃহকর্মী নিয়োগের বিষয়েও কাজ চলছে।

গত দুই বছরে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৯ হাজার বাংলাদেশির। গত মাসে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ফলপ্রসূ মালয়েশিয়া সফরের পর বাংলাদেশ এখন দেশটিতে প্রতি মাসে ৫০ হাজার করে কর্মী পাঠানোর লক্ষ্য ঠিক করেছে।

এ ছাড়া গত ১ জুলাই থেকে বাহরাইনে অবৈধ বিদেশি কর্মীদের জন্য ছয় মাসের সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শুরু হয়েছে। এ সুযোগে দেশটিতে অবস্থান করা বাংলাদেশিরা বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন বা কোনো ধরনের শাস্তি ছাড়াই চলে আসতে পারবেন। পরে তাঁদের চাকরি নিয়ে ফিরতেও সমস্যা হবে না।

অর্থনৈতিক মন্দার কারণে গত কয়েক বছরে বাহরাইনে বেকারের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। দেশটিতে বেকার বাংলাদেশির সংখ্যা ৪৬ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। স্থানীয়ভাবে তাঁদের কর্মসংস্থানের আওতায় আনতে দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাস সাময়িকভাবে নতুন ভিসা সত্যায়ন বন্ধ রেখেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সরকার নিরাপদ ও মানসম্মত অভিবাসনকে এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। উচ্চ অভিবাসন ব্যয়সহ নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সরকারি পর্যায়ে জনশক্তি নেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়েছিল। গত মাসে আবার বেসরকারি পর্যায়ে জনশক্তি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামীতে জনশক্তি পাঠানোর হার বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসম্মত অভিবাসন নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

এ ছাড়া প্রতিটি দেশের শ্রমবাজারের একটি নির্দিষ্ট ধারণক্ষমতা আছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সেটি প্রায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় কর্মীদের মান, দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, দক্ষ কর্মী সৃষ্টি করতে পারলে বিদেশে প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারে সুবিধা পাওয়া যাবে। চাহিদা এখন দক্ষ কর্মীর।