অর্ধবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে

কাগজ প্রতিবেদক : চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। পরিচালন মুনাফা বাড়লেও ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা আরো অনেক কম। এই পরিচালন মুনাফা থেকে ব্যাংকের ঋণ ও খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে লোকসান দেয়ায় এর বিপরীতে প্রভিশনের পরিমাণ আরো বাড়বে। ফলে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা আরো কমবে। এদিকে ব্যাংকগুলোকে ৬ মাসের পরিচালন মুনাফা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হবে ও স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের জানাতে হবে। ব্যাংকগুলো বলছে, সার্বিকভাবে আগের বছরের তুলনায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ হয়েছে। আমদানি খাতও অনেক গতিশীল হয়েছে। এ ছাড়া সার্ভিস চার্জ থেকেও মুনাফার একটি বড় অংশ এসেছে। এগুলোর প্রভাব মুনাফার ওপরে পড়েছে।

বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রায় সবাই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। ব্যাংকগুলো কিছুদিন পরে তাদের এ মুনাফার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে পেশ করবে। এরপর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য এসব তথ্য অফিসিয়ালি প্রকাশ করা হবে। এর আগে যে কোনো মাধ্যমে তা প্রকাশের ওপর বিএসইসির বিধি-নিষেধ রয়েছে। এ কারণে আপাতত ব্যাংকগুলো তাদের পরিচালন মুনাফার তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে না। তবে বিভিন্ন সূত্রে বেশকিছু ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য পাওয়া গেছে।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা সবচেয়ে বেশি। ২০১৪ সালের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংকটির মোট পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৮৪০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ছিল ৮৩০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। আলোচ্য সময়ে ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফা করেছে ৩৯৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪১৪ কোটি টাকা। তবে বেসিক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ঋণাত্মক ধারায় অবস্থান করছে। গত ৬ মাসে পরিচালন মুনাফা অর্জিত হয়েছে ১৬৯ টাকা। কমেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা। গত ৬ মাসে ৩৫০ কোটি টাকা মুনাফা এসেছে সরকারি এ ব্যাংকের, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল সোনালী ব্যাংক ৫১৪ কোটি টাকা। ন্যাশনাল ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ৩১০ কোটি টাকা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ২১০ কোটি, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৯০ কোটি টাকা, এনসিসি ব্যাংক ১৮০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৭৫ কোটি টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ১৩৫ কোটি টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ১৫০ কোটি টাকা, গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ১৮৭ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংক ২৭০ কোটি টাকা, গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ২০১ কোটি টাকা।

নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক ২৭ দশমিক ৫০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১১ কোটি টাকা, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ৩৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১২ কোটি টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংক ২৭ দশমিক ৬ কোটি, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩ কোটি টাকা, মধুমতি ব্যাংক ২৮ কোটি, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২২৫ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংক ৬০ কোটি, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২০ কোটি টাকা, মেঘনা ব্যাংক ২৪ কোটি, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২০ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, যে কোনো ব্যবসার প্রবৃদ্ধি খুবই স্বাভাবিক। ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফাতেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে মুনাফা খুব সাংঘাতিক বেড়ে যাবে তা নয়। এ ছাড়া ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা প্রকৃত মুনাফা নয়। বছর শেষে পরিচালন মুনাফা থেকে কর, প্রভিশনসহ অনেক কিছু বাদ দিয়ে নিট বা প্রকৃত মুনাফা হিসাব করা হয়ে থাকে। ফলে মুনাফা খুব বেশি বাড়বে বলে মনে হয় না।

রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাভিলাষী নয় : নজিবুর রহমানকাগজ প্রতিবেদক : ২০১৫-১৬ অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাভিলাষী মনে করছেন না জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান (এনবিআর) নজিবুর রহমান। তিনি বলেছেন, ২০১০-১১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে ২৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। সে হিসেবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। এটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নয়। এ লক্ষ্যমাত্রা আদায় সম্ভব।

প্রসঙ্গত, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চাইতে ৩০ শতাংশ বেশি। গত বুধবার রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবি ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের কৌশল সম্পর্কে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, উৎসে আয়কর ও মূসক আদায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। উৎসে আয়কর আদায়ে পৃথক কর অঞ্চল গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি মনিটরিং জোরদার করা হবে। তিনি আরো বলেন, ১৬ কোটি মানুষের দেশে যেসংখ্যক করদাতা রয়েছে তা অপ্রতুল। করদাতার সংখ্যা বাড়াতে জরিপ কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে।

রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা আদায়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, অতীতের চাইতে এনবিআরের সাংগঠনিক সক্ষমতা বেড়েছে। এ ছাড়া সুশাসন ও আধুনিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। লোকবল নিয়োগ দিতে অর্থ বিভাগ, জনপ্রশাসন ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সঙ্গে আলোচনা চলছে। এতে এনবিআরের গতি বাড়বে। এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, রাজস্ব আদায় নিয়ে সিপিডি ও অন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কথাবার্তা ছিল অনুমাননির্ভর। অঙ্ক কষেই সবকিছু হয় না। কিছু জিনিস ফিল করা লাগে। দেশের অর্থনীতির লুকায়িত সম্ভাবনাকে ফিল করে এনবিআর কাজ করেছে।