মহাস্থানগড়

মহাস্থানগড় বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এই প্রাচীন নগরীটি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। একসময় এই নগরী পুণ্ড্রনগর নামে পরিচিত হলেও বর্তমানে তা মহাস্থানগড় নামে পরিচিত। ১৯৩১ সালে উদ্ধারকৃত ব্রাহ্মী প্রস্তরলিপিতে উল্লেখিত তথ্য থেকে ধারণা করা হয়—এই নগরীটি কমপক্ষে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের স্থাপত্যকর্ম। যা আঠার শ শতাব্দী পর্যন্ত ব্যবহূত হতো। করতোয়া নদীর তীরবর্তী পুণ্ড্রনগরের দৈর্ঘ্য ৪৯৫০ ফুট এবং প্রস্থ ৪০৫০ ফুট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ছত্রিশ মিটার এবং সমভূমি থেকে আঠার ফুট, যেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে রাজধানী ঢাকা শহরের উচ্চতা মাত্র ছয় মিটার। ধারণা করা হয় বহিঃশক্রর হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্যই তত্কালীন শাসকগণ এখানে দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। আর এই দুর্গকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে দুর্গ পুণ্ড্রনগর। এই স্থানটি পছন্দের জন্য করতোয়া নদীর অবস্থানকেও অনেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। আজকের মৃত করতোয়া সে সময় সাগরের মতো প্রশস্ত ছিল বলে প্রাচীন পুস্তক-তথ্য থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়।

১৭১৮-১৯ সালের একটি পত্রলিপির তথ্য থেকে জানা যায়, মহাস্থান দুর্গের মসজিদটি মুঘল শাসনামলের স্থাপত্যকর্ম। রৌপ্যমুদ্রা থেকে জানা যায়, সেগুলো খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে খ্রিস্টাব্দ প্রথম ও দ্বিতীয় শতকের। মহাস্থানগড়ের নিকটবর্তী গ্রাম বামনপাড়া থেকে দুটি ধাতবমুদ্রা পাওয়া যায়, যা গুপ্তযুগের বলে জানা যায়। সুলতানি আমল (১৪-১৫ কার্তিক) ও ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির ধাতব মুদ্রাসহ বিভিন্ন সময়ের নাম চিহ্নহীন আরো অসংখ্য ধাতব মুদ্রার সন্ধান পাওয়া গেছে। দীর্ঘ খনন কাজের ফলে উদ্ধারকৃত প্রত্নসামগ্রী মহাস্থান জাদুঘর, রাজশাহী বরেন্দ্র জাদুঘর ও জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।