ঈদে ৭০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন : পরিবেশ ভালো থাকায় ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করেছেন দ্বিগুণ

রমজানের প্রথম সপ্তাহ থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশে সরগরম হয়ে উঠেছে ঈদ বাজার। আর বাজার জমে উঠায় অর্থনীতির পালে লেগেছে হাওয়া। ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বিক্রি বাড়বে তিনগুণ। ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগও হবে তিনগুণ বেশি। তারা আশা করছেন, লেনদেন ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

অন্যদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ছাড়ছে ২২ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট; যা ঈদ সালামিসহ অন্যান্য কেনাকাটায় খরচ করবে মানুষ। ইতোমধ্যে সরকারি কর্মকর্তাসহ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের বেতন হয়ে যাওয়ার কারণে ঈদের বিকিকিনি শুরু হয়েছে বেশ জোরেশোরেই। বিশেষ করে পোশাক, জুতা-স্যান্ডেল, চামড়াজাত পণ্য, ইলেকট্রনিক পণ্য, কুটিরশিল্পজাত পণ্যের বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এস এ কাদের কিরণ ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিনগুণ বেশি লেনদেনের আশা করছি। সাধারণ একটি দোকানে দিনে ১০ হাজার টাকার লেনদেন হলে ঈদ উপলক্ষে লেনদেন হবে ৩০ হাজার টাকা। অন্যবার আমরা দুইগুণ বেশি লেনদেনের কথা বলি। কিন্তু এবার রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় আশা করছি লেনদেন অন্য বছরের তুলনায় বেশি হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও এবার অন্যবারের তুলনায় স্থিতিশীল রয়েছে। চাঁদাবাজির খবরও আমরা এখনো পায়নি। ফলে আশা করছি এবার ব্যবসা ভালো হবে। তিনি বলেন, সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের দোকানের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ। আর রাজধানীতে রয়েছে প্রায় ৫ লাখ। এসব দোকানের প্রতিটিতে লেনদেন হবে প্রায় ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা। সারা বছরে ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে তার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বিনিয়োগ হয় ঈদে।

এদিকে রাজনৈতিক কোনো সহিংস কর্মসূচি না থাকায় এবার ঈদে ভালো ব্যবসা হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক থাকার কারণে চাঁদাবাজির ঘটনাও ঘটছে কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে কোনো সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকায় এবং পরিবেশ ভালো থাকায় এবার ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। এস এ কাদের আরো বলেন, পরিবেশ ভালো থাকায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় ব্যবসায়ীরা দ্বিগুণ বিনিয়োগ করছেন। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বিক্রিও

বাড়বে তিনগুণ। এবার রমজান ও ঈদকে ঘিরে ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বল্পমেয়াদের পুঁজি বিনিয়োগে বেশ সাড়া পড়েছে।

জানা গেছে, রাজধানীর ইসলামপুর, নবাবপুর, চকবাজার, উর্দুরোড ও সদরঘাট, গুলিস্তান, বঙ্গবাজার এলাকার পাইকারি মার্কেটসসহ বিদেশি পণ্যের আমদানিকারক মার্কেট পলওয়েল, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা, বিসাভী, গাজী ভবন এবং অন্যান্য শপিংমল ও ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেটের মার্কেটগুলোতেই মূলত হাতবদল হবে ৫০ হাজার কোটি টাকা। এদিকে রমজানের পুরো মাসজুড়ে লেনদেন হবে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, ছোলা, তেল, চিনি, খেজুর, মসলা, পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের বিক্রি বাড়বে। বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি ছাড়াও সরকারিভাবে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ চাহিদা অনুযায়ী পণ্য মজুদ করেছে। বাড়তি এই ব্যবসার কারণে দেশের অর্থনীতি ঈদ পর্যন্ত থাকবে চাঙ্গা।

উৎসবের এই অর্থনীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিপি) গবিষেণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ভোরের কাগজকে বলেন, ঈদকেন্দ্রিক অর্থনীতির বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে। তবে এর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো ঈদ উপলক্ষে বিপুল অঙ্কের টাকার লেনদেন হয়। যা সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। উৎপাদন ও সেবা খাতে এই সময়ে চাহিদা বাড়ে। এই চাহিদার বড় অংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ফলে বড় অঙ্কের অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের জন্য বিপুল পরিমাণের টাকা পাঠায়। তারও একটি ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তবে সেবা ও পণ্যের সুষম বণ্টন হচ্ছে সেটি বলা যাবে না। অবশ্য আশার দিক হলো দিন দিন উৎসবের অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে। বাড়ছে উৎপাদন। একই সঙ্গে বাড়ছে কর্মসংস্থানও।