নীরব শিল্প বিপ্লবের দিকে বাংলাদেশ

নীরব শিল্প বিপ্লবের দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পাল্টে যাচ্ছে অর্থনীতির চালচিত্র। দেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল হলেও এখন ক্রমেই ঝুঁকছে শিল্পায়নের দিকে। ফলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে কৃষি খাতের অবদান ক্রমেই কমছে। কিন্তু শিল্প খাতের অবদান বাড়ছে। এ জন্য জিডিপির তিন খাতের মধ্যে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি হার অন্য দুটির তুলানায় বেশি।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ কৃষি পেশা ছেড়ে শিল্পের দিকে ঝুঁকছে। ফলে কৃষি খাতের চেয়ে শিল্পের অবদান জিডিপিতে তুলনামূলক হারে বাড়ছে। এটি একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য ভালো। এর মানে দেশে শিল্পের প্রসার ঘটছে। মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছর তিনটি খাতে প্রবৃদ্ধির হার কৃষিতে ৩ দশমিক ০৪ ভাগ, শিল্পে ৯ দশমিক ৬ ভাগ এবং সেবায় ৫ দশমিক ৮৩ ভাগ। গত বছর প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে কৃষিতে ৪ দশমিক ৩৭ ভাগ, শিল্পে ৮ দশমিক ১৪ ভাগ এবং সেবায় ৫ দশমিক ৬২ ভাগ। এর মানে হল- কৃষিতে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বাড়লেও শিল্পের তুলনায় অনেক কম। কয়েক বছর থেকে সেবা খাতের চেয়েও ভালো প্রবৃদ্ধি করছে শিল্প খাত। ফলে কৃষি ও সেবা খাতের তুলনায় শিল্পের অবদান ক্রমেই বাড়ছে।

 এ প্রসঙ্গে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, সরকার কর্মসংস্থান ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও নিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, মানুুষের আয় বেড়েছে। কিন্তু মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছতে হলে আমাদের শিল্পায়নের দিকে যেতে হবে। আজ যারা বিশ্বের উন্নত দেশ তারা এক সময় শিল্পায়নের দিকে গুরুত্ব দিয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট জিডিপির মধ্যে কৃষি খাতের অবদান ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ, শিল্প খাতের অবদান ২৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং সেবা খাতের অবদান ৫৬ দশমিক ৪২ শতাংশ । ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষি অবদান ছিল ১৬ দশমিক ১১ শতাংশ, শিল্পে ২৭ দশমিক ৭১ ভাগ এবং সেবা খাতে ৫৬ দশমিক ১৮ ভাগ।
 জানা গেছে, আগের মতো এখন আর কৃষি কাজে লাভ হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে শ্রমিক ব্যয়। এছাড়া কৃষি উপকরণ ও শ্রমিক মজুরি বেড়ে গেছে ব্যাপক হারে। কিন্তু সে অনুসারে বাড়েনি কৃষি পণ্যের দাম। ফলে বাধ্য হয়ে তারা জমি চাষ না করে বর্গা দিয়ে দিচ্ছেন। তারা হচ্চেন শহর মুখী।
 এ প্রসঙ্গে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শাসুল আলম যুগান্তরকে বলেণ, কোনো দেশের কৃষির উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে শিল্পের প্রবৃদ্ধি দরকার। কেননা বাংলাদেশে ৪৭ শতাংশ মানুষ কৃষি শ্রমেন সরঙ্গ জড়িত। এখানে উন্ন চাষাবাদ ব্যবস্থা চালু থাকলে অল্প শ্রমিক দিয়ে বেশি কাজ করা সম্ভব ছিল। এ জন্য কৃষির স্বার্থেই শিল্প বিপ্লব দরকার।
 তিনি বলেন, আমেরিকার জিডিপিতে ১৯৮০ সালে কৃষির অবদান ছিল ৭২ শতাংশ। এখন মাত্র ৫ শতাংশ। কিন্তু কৃষির গুরুত্ব কমে যায়নি। এ জন্য বাংলাদেশকেও শিল্পায়নের দিকে নিয়ে যাওয়া উচিত। –