মালয়েশিয়ায় ফের জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ

বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া বেসরকারিভাবে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিতে সম্মত হয়েছে। রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বছরে পাঁচ লাখ শ্রমিক নেবে দেশটি। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনর্বার উন্মুক্তের প্রক্রিয়ার খবরটি নিঃসন্দেহে আশাপ্রদ। আবার আশার আলো দেখছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এর ফলে সাগরপথে মানবপাচার বন্ধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রথম পর্যায়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রায় ১৪ লাখ কর্মীর ডাটাবেইজ থেকে এ কর্মী নেয়া হবে। গত বুধবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে সফররত প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জাহিদ হামিদি এ তথ্য জানান। জানা যায়, বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম বাজার মালয়েশিয়া। ২০০৭-০৮ সালে প্রায় ৪ লাখ কর্মী মালয়েশিয়া গেলেও ২০০৯ সাল থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি। দীর্ঘ ক‚টনৈতিক যোগাযোগের পর ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে সরকারিভাবে কর্মী নেয়ার চুক্তি হয়। এরপর মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের ১৪ লাখ ৫০ হাজার লোক নিবন্ধন করে। বছরে পাঁচ লাখ লোক নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত তিন বছরে মাত্র সাড়ে সাত হাজার কর্মী নিয়েছে দেশটি। এরই মধ্যে ছাত্র ও পর্যটক সেজে দেশটিতে গেছে অন্তত এক লাখ লোক। আর বঙ্গোপসাগর দিয়ে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেছে প্রায় দেড় লাখ মানুষ। এই যাত্রায় অনেকের মরণ ডেকে আনে। সা¤প্রতিক সময়ে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় গণকবর আবিষ্কার এবং এ নিয়ে হইচই শুরু হয়। জনশক্তি খাত বিশ্লেষকরা বলছিলেন, বৈধপথে সুযোগ কমার কারণেই অবৈধপথে মানুষ সাগরপথে পাড়ি জমাচ্ছে। তাই উন্মুক্তভাবে মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন খাতে লোক পাঠাতে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এরই ধারাবাহিকতায় বেসরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো কার্যক্রম শুরু হলো।

বেসরকারি মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক হলেও এ ক্ষেত্রে যে অসাধুরা সক্রিয় হয়ে উঠবে না এর নিশ্চয়তা নেই। কাজেই বিষয়টি সতর্ক পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি বিদেশ যেতে আগ্রহীদের সচেতনতার বিষয়টিও অত্যন্ত জরুরি। রপ্তানি একটি ব্যবসা এবং ব্যবসার কাজটি ব্যবসায়ীরা ভালো করবেন, এটাই স্বাভাবিক। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে ব্যবসায়ীরা যাতে নিয়মনীতি মেনে ব্যবসাটি করেন, তা নিশ্চিত করা, কেউ তা ভাঙলে ব্যবস্থা নেয়া । একই সঙ্গে যে সব অসাধু এজেন্টের কারণে ইতোমধ্যে শ্রম বাজারে সুনাম নষ্ট করেছে তাদের শনাক্ত করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়াও দরকার। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে নানা রকম অপকর্ম করার কারণে আমাদের শ্রমবাজারের দরজায় খিল পড়ছে- এই অভিযোগটিও পুরনো বটে। কিন্তু এ সম্পর্কে সরকারের তরফে কতটা কী কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাও অজানা। দরকার হলে রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করে তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিক। তাদের কারণে বাংলাদেশের শ্রমবাজার প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে না। বাংলাদেশি শ্রমিকদের ইমেজ সংকট কাটানোর উদ্যোগ নিতে হবে বিদেশের মিশনগুলোতে কর্মরত দায়িত্বশীলদের। রপ্তানি প্রতারণা ছাড়াও বিদেশে কর্মরত কিছু বাংলাদেশির বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে। এমন অনিয়ম কিংবা অপতৎপরতা রোধ করতে না পারলে সব সুযোগ হাতছাড়া হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রাণভোমরার ভূমিকা পালন করছে রেমিট্যান্স খাত। বিদেশে কর্মরত প্রায় ৮০ লাখ কর্মজীবী মানুষ পরিবার-পরিজনের জন্য যে অর্থ পাঠান তা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করছে। শত প্রতিক‚লতার মধ্যেও বাংলাদেশকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর শক্তি জোগাচ্ছে। বিশ্বমন্দা থাকা সত্ত্বেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে যেমন জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে, অনুরূপভাবে জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে দেশের বেকারত্ব নিরসনে খাতটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমান সরকার বহির্বিশ্বে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন নতুন দ্বার উন্মোচন করছে তা যে কোনো উপায়ে ধরে রাখতে হবে। বিশেষ করে মালয়েশিয়ায় পুনর্বার জনশক্তি রপ্তানির সুযোগটি আমাদের কাজে লাগাতে হবে।