বিনিয়োগের শীর্ষে যুক্তরাজ্য

ব্যাংক, টেলিযোগাযোগ ও বস্ত্র খাতে এফডিআই এসেছে বেশি

২০১৪ সালে দেশে প্রায় ১৫৩ কোটি ডলারের নিট বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ১৮ কোটি ডলার যা মোট বিনিয়োগের ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। বিনিয়োগে দ্বিতীয় অবস্থানে দক্ষিণ কোরিয়া। পরের অবস্থানে পাকিস্তান। ব্যাংক, টেলিযোগাযোগ ও বস্ত্র খাতে বেশি বিনিয়োগ এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা আঙ্কটাড সম্প্রতি বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। আঙ্কটাডের রিপোর্টে বাংলাদেশে দেশওয়ারি বিনিয়োগের তথ্য নেই। সংস্থাটির রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৪ সালে এফডিআই কমেছে আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ। অবশ্য আঙ্কটাড বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পরিসংখ্যান নিয়ে তাদের রিপোর্টে বাংলাদেশ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, যুক্তরাজ্য থেকে ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ ৯ কোটি ২৩ লাখ ডলার বিনিয়োগ এসেছে ব্যাংক খাতে। যার বেশিরভাগ করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। বস্ত্র খাতে এসেছে প্রায় ৪ কোটি ডলার। বাকি বিনিয়োগ হয়েছে ওষুধ, খাদ্য, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য খাতে। বিনিয়োগে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার ১৩ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের মধ্যে প্রায় ১০ কোটি ডলার এসেছে বস্ত্র খাতে। ব্যবসা, ব্যাংকসহ অন্যান্য খাতে এসেছে বাকি বিনিয়োগ। তৃতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ এসেছে পাকিস্তান থেকে। দেশটির ১৩ কোটি ৭ লাখ ডলারের বিনিয়োগের ১১ কোটি ডলারই এসেছে ব্যাংক খাতে। মূলত বাংলাদেশে কার্যরত ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানকে আইনি বাধ্যবাধকতায় মূলধন ঘাটতি মেটাতে এই বিনিয়োগ এসেছে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর। দেশটির ১১ কোটি ৭১ লাখ ডলারের বিনিয়োগের মধ্যে টেলিযোগাযোগ খাতে এসেছে ৫ কোটি ১২ লাখ ডলার। বাকি বিনিয়োগ এসেছে কৃষি ও মৎস্য, খাদ্য, টেক্সটাইলসহ অন্যান্য খাতে। বিনিয়োগে পঞ্চম অবস্থানে থাকা হংকং থেকে এসেছে ১১ কোটি ১৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে শুধু টেক্সটাইলে হয়েছে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। ব্যাংক, চামড়া, বিদ্যুৎসহ অন্য খাতে বিনিয়োগ করেছে দেশটি। নরওয়ে বিনিয়োগ করেছে ১০ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। এর প্রায় পুরোটাই হয়েছে টেলিযোগাযোগ খাতে। এটি মূলত গ্রামীণফোনে নরওয়ের টেলিনরের বিনিয়োগ। বিনিয়োগে ৭ম অবস্থানে থাকা জাপানের বিনিয়োগের পরিমাণ ৯ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। পরের অবস্থানে থাকা নেদারল্যান্ডসের বিনিয়োগ ৭ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। নবম অবস্থানে থাকা ভারতের বিনিয়োগ এসেছে ৬ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। শ্রীলংকা থেকে এসেছে ৬ কোটি ১৩ লাখ ডলার। মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ৫ কোটি ৮১ লাখ ডলার। তাইওয়ান থেকে এসেছে ৪ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। চীন থেকে ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৩ সালে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো থ্রিজি সেবা চালুর জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ নিয়ে আসে। বিদেশি চার কোম্পানির মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল প্রায় ৯০ কোটি ডলার। ২০১৪ সালে ফোন অপারেটরগুলোর বিনিয়োগ এসেছে ২২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। মূলত এ কারণে বিদেশি বিনিয়োগ কিছুটা কমেছে। এ বিবেচনায় অন্যান্য খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। সবসময় নিট বা প্রকৃত বিনিয়োগের হিসাব করে তা আঙ্কটাডকে দিয়ে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে প্রথমবারের মতো ২০১৪ সালে নিট বিনিয়োগের পাশাপাশি মোট বা গ্রস ভিত্তিতে বিনিয়োগের একটা হিসাব করা হয়েছে। তবে আঙ্কটাড গ্রস ভিত্তিকে গ্রহণ করেনি। আর এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই বিনিয়োগের তথ্যকে বিভ্রান্তিমূলক বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই- ইলাহী চৌধুরী। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত সরকারি কমিটির প্রধান নাজনীন সুলতানা সমকালকে বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়মে দেশের বাইরে থেকে কোনো বিনিয়োগ আসার পর অন্তত একবছর থাকলে সেটিকে নিট বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হয়। এর আগে শুধু নিট বিনিয়োগের হিসাব করে তা আঙ্কটাডকে দেওয়া হতো। ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো নিট বিনিয়োগের পাশাপাশি মোট বিনিয়োগের একটা হিসাব করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, নিট বিনিয়োগ ১৫২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার
হলেও মোট বিনিয়োগ ছিল ২০৫ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। প্রাপ্ত তথ্য মতে, সাধারণত গ্যাস উত্তোলনের জন্য আসা কোম্পানিগুলো উত্তোলিত গ্যাসের একটি অংশ পেয়ে থাকে। তা বিক্রি করে তারা ‘কস্ট রিকভারি’ হিসেবে দেশে নিয়ে যায়। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে নেওয়া হলে সেটিকে নিট বিনিয়োগ হিসেবে ধরে না বাংলাদেশ ব্যাংক। মার্কিন তেল ও গ্যাস কোম্পানি শেভরনের ক্ষেত্রে এটি ঘটেছে। এ কারণে নিট বিনিয়োগের শীর্ষে যুক্তরাজ্য থাকলেও মোট বিনিয়োগ বেশি যুক্তরাষ্ট্রের। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪৬ কোটি ২১ লাখ ডলার
বিনিয়োগ এসেছে। এর মধ্যে শুধু গ্যাস খাতে এসেছিল ৪২ কোটি ১৯ লাখ ডলার। দেশটির নিট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ কোটি ৩৬ লাখ ডলারে।