বিদেশ যাচ্ছে পাহাড়ের বিষমুক্ত সবজি

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার লালচান্দ-সুতাং সড়কটি এখন সবার নজর কাড়ে। পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা এ সড়কের দুই পাশে চোখ পড়লেই দেখা যাবে লাল মাটিতে চাষ হয়েছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। লাল মাটির পতিত জমিতে শত শত কৃষক নিজস্ব পদ্ধতিতে শসা, করলা, বরবটি, মুলা, শাক, আলু, মরিচ, বেগুনসহ নানা জাতের সবজি চাষ করছেন। এ সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরে সৌদি আবর, যুক্তরাজ্যে রফতানি করা হচ্ছে। বিষমুক্ত হওয়ায় এখানকার সবজির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

জানা যায়, কয়েক বছর ধরে স্থানীয় বেকার যুবকরা পাহাড়ের পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষে মনোযোগী হয়েছেন। তাদের উৎপাদিত এসব সবজি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে নিয়ে আসেন। এরপর আড়তের মালিকরা কিনে ঢাকায় পাঠান। ঢাকা থেকেই এখানকার সবজি ওইসব দেশে রফতানি করা হয়ে থাকে।

স্থানীয় চাষি রহিম মিয়া জানান, মৌসুম শেষে তিনি বিভিন্ন ধরনের সবজির বীজ সংগ্রহ করেন। মৌসুম অনুযায়ী বীজগুলো জমিতে বপন করেন। এ বছর তিনি করলা ও শসা চাষ করেছেন। আশনুরূপ ফলনও হয়েছে। কৃষি কাজ করে পরিবার নিয়ে সৎপথে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছেন বলে রহিম নিজেকে নিয়ে গর্ব বোধ করেন। তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে একই কথা বলেন কৃষক ভিংরাজ মিয়া, সমুজ আলী, রিপন মিয়া। নবীগঞ্জের দিনারপুর ও বাহুবলের পুটিজুরী পাহাড়ের পাদদেশে আবদুর রহিমদের মতো আরও অনেকেই করলা, বরবটি, জালি কুমড়া, কাঁকরোল, হলুদ, আদা, মুকি, ঢেঁড়স, শসা, ঝিঙ্গা, কইটাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছেন। তাতে তারা ভালো ফলন পাচ্ছেন।

চুনারুঘাট উপজেলার লালচান্দ তোতারটিবি গ্রামের মোঃ আবদুল মজিদ জানান, প্রায় এক একর জমির মধ্যে করলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছেন। বর্তমানে প্রতি কেজি করলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বাজারে বিক্রি করছেন। তিনি আশা করছেন, করলাসহ অন্যান্য সবজি বিক্রি করে লাভবান হবেন। নিজস্ব পদ্ধতিতে এসব সবজি চাষ করে তিনি আশার আলো খুঁজে পেয়েছেন।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ শাহ আলম জানান, পাহাড়ে প্রচুর জমি এক সময় পড়ে থাকত। এখন এসব জমিতে সবজি চাষ করে লোকজন সফলতা নিয়ে আসছে। দূর হচ্ছে বেকার সমস্যা। একই সঙ্গে এখানকার উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশ-বিদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে।

হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট ও মাধবপুর উপজেলায় রয়েছে বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চল। এসব স্থানে রয়েছে প্রায় ৩০টি চা বাগান, রয়েছে অসংখ্য লেবু, রাবার, আনারস, পান, আনারস, কমলা, মাল্টাসহ নানা ধরনের বাগান। এসবের সঙ্গে এখন যুক্ত হলো সবজিও।