রিজার্ভ ছাড়াল ২৫ বিলিয়ন ডলার

রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্সের ওপর ভর করে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন প্রথমবারের মত ২৫ বিলিয়ন (দুই হাজার ৫০০ কোটি) ডলার অতিক্রম করেছে ।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ২৫ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এই রিজার্ভ দিয়ে সাত মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে জানান তিনি।

ছাইদুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মূলত রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্সে ভালো প্রবৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতি শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড়িয়েছে।”

এ কারণেই এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সময়োপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার স্থিতিশীল বিনিময় হার বজায় থাকায় এবং রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) পরিমাণ বৃদ্ধি ও এই তহবিল থেকে ঋণ পাওয়া রপ্তানি খাতের সংখ্যা বাড়ানোর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে রিজার্ভে।

“সরকারের পক্ষ থেকে রপ্তানিকারকদের বিভিন্ন প্রণোদনার ফলে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, প্রবাসী আয়ের সন্তোষজনক প্রবাহ অব্যাহত থাকা, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এবং বেসরকারি খাতে বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়ন গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি ইত্যাদির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।”

জ্বালানি তেল ও খাদ্য খাতে আমদানির পরিমাণ হ্রাস এবং তৈরি পোশাক শিল্পের ‘ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ’ হিসাবে স্থানীয় কাঁচামালের যোগান বাড়ার বিষয়টিও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

তাছাড়া ঈদ সামনে রেখে প্রতিবছরই বিদেশ থেকে প্রবাসীদের টাকা পাঠানোর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

রিজার্ভ স্থিতি বিবেচনায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। ভারতের রিজার্ভে আছে ৩৫৪ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। আর পাকিস্তানের রিজার্ভ ১৭ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২২ এপ্রিল রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২০ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। ২৪ জুন তা বেড়ে ২১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার হয়।

চলতি বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ২৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।

মার্চের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের ১০১ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর তা ২২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এলেও ৩০ মার্চ তা ফের ২৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।

এরপর ২৯ এপ্রিল ২৪ মিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন। মাঝখানে কিছুটা কমলেও সব রেকর্ড ভেঙে বৃহস্পতিবার তা ২৫ বিলিয়ন ডলারের কোঠা ছাড়িয়ে যায়।

আকুর মে-জুন মেয়াদের বিল শোধ করতে হবে আগামী জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে। তার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারের ওপরেই থাকবে বলেই ছাইদুর রহমানের ধারণা।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়। বাংলাদেশকে দুই মাস পরপর পরিশোধ করতে হয় আকুর বিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি মাসের ১৯ দিনে (১ থেকে ১৯ জুন) ৯৭ কোটি ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

আর চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে, অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে ১ হাজার ৩৮৭ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের দেশে এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে ২৮ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় দেশে এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।