মঙ্গলবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে দলটির এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মাটি-মানুষের সংগঠন, জনগণের সংগঠন। এই সংগঠন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করেছে।

“আওয়ামী লীগ প্রতিটি ক্ষেত্রেই এদেশের মানুষের জন্য অর্জন এনে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের জন্য শুধু স্বাধীনতাই এনে দেয়নি। অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের পথেও অনেক দূর আমরা অগ্রসর হয়েছি।”

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে আত্মপ্রকাশ ঘটে আওয়ামী লীগের। প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দল হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে শুরু হয় স্বাধীনতার যুদ্ধ। নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের।

১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর প্রায় ১৫ বছর শাষণ ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে গত ছয় বছর ধরে শাষণ ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট।

শেখ হাসিনা বলেন, “কেউ অবহেলার চোখে দেখতে পারবে না। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।”

এসময় তিনি বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, তথ্য-প্রযুক্তি, দারিদ্র্য দূরীকরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে  অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, “আমরা আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর দেশ গড়ে তুলতে চাই। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশকে যারা অবহেলার চোখে দেখতো আজকে তারাই বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখে। এটা সম্ভব একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে বলেই।”

এদেশের মানুষের ‘যতটুকু’ অর্জন তা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময়েই হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাক আর বিরোধীদলে থাক; যখনই যেখানে থেকেছে মানুষের অধিকারের কথা বলেছে। বাংলার মানুষের অধিকার বারবার আদায় করেছে।”

স্বাধীনতা সংগ্রাম ছাড়াও ’৯০ এ স্বৈরাশাষকের পর এবং ১৯৯৬ সালে ‘ভোট কারচুপির’ খালেদা জিয়ার সরকারের পতন ঘটানোয় আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন তিনি।

“আওয়ামী লীগের অবদানকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আওয়ামী লীগের ত্যাগ-তিতিক্ষা চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

৬৭ বছরের পুরনো এ সংগঠেনের অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে নেতৃত্বে রয়েছেন শেখ হাসিনা। বাকি সময়ের সিংভাগ নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এই উপমহাদেশে যতগুলি প্রাচীন সংগঠন আছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার মধ্যে অন্যতম।”

আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ও এর ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা।

“এমন একটা সময় এসেছিল যে বাংলা ভাষাতে কথা বলার অধিকারই কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল ওই পাকিস্তানি শাষকরা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গঠন করা হয় এবং সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে আন্দোলন শুরু করেন। ১১ মার্চ ১৯৪৮ সাল থেকে ভাষা আন্দোলন শুরু করেন।”

“১৯৪৯ সালে বাংলার মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের নির্দেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলার মানুষের প্রতিটি সংগ্রামে, প্রতিটি আন্দোলনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ভূমিকা রেখেছে।

“বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করতে পেরেছিলেন তার একটিই কারণ যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো একটি শক্তিশালী সংগঠন তিনি গড়ে তুলেছিলেন।”

এসময় সংগঠনের জন্য বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ ও নিষ্ঠার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

“স্বাধীনতা এনে দেবেন এই লক্ষ্যে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে তিনি (বঙ্গবন্ধু) তার জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন। তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেরিয়েছেন সংগঠনকে শক্তিশালী করতে।”

শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই বারবার নির্যাতনের শিকার হয়নি; তাদের পরিবারও শিকার হয়েছে নির্যাতনের।

“দিনের পর দিন এই নির্যাতন সহ্য করেছে কিন্তু কখনো মাথা নত করে নাই।”

দীর্ঘ পথচলায় পাশে থাকার জন্য দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের অভিনন্দন জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, “বিশ্বাস ও আদর্শের জন্য আওয়ামী লীগের যত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে, পৃথিবীর আর কোনও দল নেই যার এত নেতা-কর্মী জীবন দিয়েছে।”

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হকসহ শীর্ষ নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়াও জাতীয় চার নেতার প্রতিও শ্রদ্ধা জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ।