প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশের বেসরকারি চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাক্রেডিটেশন আইন-২০১৫’ প্রণীত হচ্ছে। এ আইনের আওতায় চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে মেডিকেল অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠিত হবে।
কাউন্সিলের অধীনে ‘চিকিৎসা শিক্ষা’ ও ‘স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান’ নামে পৃথক দুটি বিভাগের মাধ্যমে সারাদেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান মনিটরিং, সুপারভিশন ও মান নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
আবেদন সাপেক্ষে সরেজমিন পরিদর্শন ও যাচাই বাছাইয়ে সন্তুষ্টি সাপেক্ষে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ দেয়া হবে। ইতিমধ্যেই খসড়া আইনটি চূড়ান্ত হয়েছে।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় স্বাস্থ্য কাউন্সিলের বৈঠক হয়। পদাধিকার বলে তিনি ওই কাউন্সিলেরও সভাপতি।
ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে স্বাস্থ্যখাতের অধিকতর উন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে মতামত জানতে চান।
বৈঠকে একাধিক বক্তা দেশে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো বেসরকারি পর্যায়ে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল, হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক গজিয়ে উঠার বিষয়টি জানিয়ে বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সব শুনে প্রধানমন্ত্রী পৃথক মেডিকেল অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠনের নির্দেশ দেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর মেডিকেল কাউন্সিল গঠন ও খসড়া আইন প্রণয়নের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আইয়ুবুর রহমান ভুইয়াকে সভাপতি করে ১৪ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়।
পরবর্তীতে মূল কমিটির সুপারিশ ও প্রস্তাবে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যদের একটি সাব কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাক্রেডিটেশন আইন-২০১৫ এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে।
এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টির ডীন প্রফেসর ডা. মো. ইসমাইল খান, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড কাউন্সিল (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রার ডা. জাহেদুল হক বসুনিয়া, সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশন পরিচালক অধ্যাপক ডা.সাইফুল ইসলাম ও স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের প্রধান আসাদুল ইসলাম।
স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রকাশিত হেলথ বুলেটিন-২০১৪ পরিসংখ্যান অনুসারে, বর্তমানে বেসরকারিভাবে ৬২টি মেডিকেল ও ১৮টি ডেন্টাল কলেজ রয়েছে। এছাড়া ৭৪টি নার্সিং ইনস্টিটিউট, ১০৩টি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস)ও ৯৭ হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিকিৎসা শিক্ষা এ সব প্রতিষ্ঠানের দেখভালের দায়িত্বে থাকলেও জনবলের দোহাই দিয়ে তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেনা। ন্যূনতম অবকাঠামো, শিক্ষক, শিক্ষা উপকরণ ও ল্যাবরেটরি সুযোগসুবিধা না থাকা স্বত্ত্বেও বহু প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর চলছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
জানা গেছে, অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলে সাংসদ, মেডিকেল চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষক, অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট, বিএমডিসি, বিসিপিএস, বিএমএ, বিএমআরসি, ফার্মেসি কাউন্সিল, ডেন্টাল সোসাইটি, নার্সিং কাউন্সিল, স্টেট ফ্যাকাল্টি, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন প্রভৃতি সংগঠনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অর্ন্তভুক্ত করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির সভাপতি সাবেক বিএমএ সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ ই মাহবুব বলেন, বিএমডিসিসহ সরকারের একাধিক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান দেখভালের দায়িত্ব পালন করছে। পৃথক মেডিকেল অ্যাক্রেডিটেশন গঠিত হলে কারা এটি পরিচালনা করবে, তাদের কাজ কী হবে সে সম্পর্কে আগে ধারণা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।