আগামী অর্থবছরে (২০১৫-১৬) বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের এ পূর্বাভাস সরকারের বাজেটে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার (৭ শতাংশ) চেয়ে অনেক কম। গতকাল ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত সংস্থার সর্বশেষ গ্গ্নোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস রিপোর্টে এ পূর্বাভাস এসেছে। রিপোর্টে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম ঝুঁকি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্গ্নোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস রিপোর্ট বিশ্বব্যাংকের অন্যতম প্রধান প্রকাশনা। প্রতি বছর জানুয়ারি ও জুনে এটি প্রকাশিত হয়। গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত রিপোর্টে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেয় সংস্থাটি। এরপর জানুয়ারি-মার্চজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংঘাতের কারণে গত এপ্রিলে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটে তা ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনে বিশ্বব্যাংক। এরই মধ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাব প্রকাশিত হয়েছে। বিবিএসের হিসাবে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক মনে করে, বিবিএসের যে হিসাব পদ্ধতি তাতে রাজনৈতিক অস্থিরতার ক্ষয়ক্ষতি খুব একটা প্রতিফলিত হয় না। এ কারণে তাদের অনুমানের সঙ্গে বিবিএসের এত বেশি পার্থক্য হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সমকালকে বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ আরও কিছু বিষয়ে উন্নতি হতে পারে, এমন অনুমান থেকে বিশ্বব্যাংক আগামী অর্থবছরে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। যদি বর্তমানের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, বিনিয়োগ পরিবেশের কিছুটা উন্নতি হয়, বিদ্যুতের অগ্রগতি অব্যাহত থাকে, গ্যাস সংকট মোটামুটি কাটানো যায় এবং কৃষি উৎপাদন ভালো থাকে তাহলে এটি অর্জিত হবে। সরকারের ৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রাকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের আকাঙ্ক্ষা একটু উচ্চাভিলাষী হয়। তার বিবেচনায় ৭ শতাংশ অর্জন দুরূহ হবে।
বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে দক্ষিণ এশিয়ার ওপর আলাদা অধ্যায় রয়েছে। এ অধ্যায়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ কয়েকবার এসেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন শান্ত থাকায় রফতানি ও বিনিয়োগ বাড়া উচিত, যা জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াবে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে ভোগ ব্যয় বাড়বে, যা প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়ক হবে। রিপোর্টে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল ও আফগানিস্তানের জন্য রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি বলে উল্লেখ করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির শ্লথ গতি, আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারের অস্থিতিশীলতা, মধ্যপ্রাচ্যে নিম্ন প্রবৃদ্ধিসহ নানা বিষয়কে এ অঞ্চলের ঝুঁকি হিসেবে দেখছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোর অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো বিনিয়োগ বাড়ানো এবং সংস্কার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি। আঞ্চলিক সংহতি এবং বাণিজ্যকে আরও উন্মুক্ত করলে দক্ষিণ এশিয়া লাভবান হবে বলে রিপোর্টে মন্তব্য করা হয়েছে।
বিশ্ব অর্থনীতির জন্য হতাশাজনক বছর :বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে ২০১৫ সালকে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির জন্য আরেকটি ‘হতাশাজনক বছর’ হিসেবে উলেল্গখ করা হয়েছে। এ বছর নিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে পরপর চার বছর একই অবস্থা। বলা হয়েছে, এ বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা ৩ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। চলতি বছর উন্নয়নশীল বিশ্বে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ, যা আগামী বছর বেড়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে। এ বছর উন্নত বিশ্বের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। আগামী বছর ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। রিপোর্টে বলা হয়, চলতি বছর উন্নয়নশীল দেশগুলো কঠিন কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে। ঋণের জন্য উচ্চ ব্যয় এবং জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্যের নিম্নমূল্য_ এ পরিস্থিতিই মূল চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং বলেন, মন্দার পর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হলো উন্নয়নশীল দেশগুলো। তবে তারা এখন অধিকতর কঠিন অর্থনৈতিক পরিবেশের মধ্যে আছে। নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলো যাতে এ পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারে তার জন্য বিশ্বব্যাংক সাধ্য মতো সহায়তা করবে।