প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে রেমিটেন্স এসেছে ১৩২ কোটি ডলার, যা এপ্রিলের চেয়ে প্রায় ২ শতাংশ বেশি। গত বছরের মে মাসের চেয়ে রেমিটেন্সের এই পরিমাণ সাড়ে ৮ শতাংশ বেশি। তবে এ সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত লিবিয়া ও ইরান ছাড়াও যুক্তরাজ্য, জার্মান, জাপান ও ইতালি থেকে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্সের পরিমাণ কিছুটা কমেছে।সবমিলিয়ে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) এক হাজার ৩৮৭ কোটি ৪৭ লাখ (১৩ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি।রেমিটেন্স বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ) ২৪ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেঙ্ রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান। গত ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলারের ‘ঘর’ অতিক্রম করে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের ১০১ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে যায়। গত এক মাসে তা বেড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে বলে জানান ছাইদুর রহমান। গত মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৩ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। ছাইদুর রহমানের আশা, খুব শীঘ্রই রিজার্ভ ফের ২৪ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে।বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার বিভিন্ন দেশ থেকে পাঠানো প্রবাসীদের রেমিটেন্স সংক্রান্ত যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে মাসে (জুলাই-মে) মোট এক হাজার ৩৮৭ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল এক হাজার ২৯৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেমিটেন্স সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত এপ্রিল মাসে প্রবাসীরা ১২৯ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন। মার্চ মাসে পাঠিয়েছিলেন ১৩৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। গত বছরের মে মাসে এসেছিল ১২১ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। একক মাস হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে; ১৪৯ কোটি ২৫ লাখ ডলার। অর্থবছর শেষে রেমিটেন্সের পরিমাণ ১৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছুবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তা ছাইদুর রহমান।২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার পাঠিছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল তার আগের বছরের চেয়ে ১ দশমিক ৬১ শতাংশ কম। এর আগের অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। দেশভিত্তিক রেমিট্যান্সের হিসাব অনুযায়ী, কাতার, জার্মানি, মালয়েশিয়া, ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়া অন্য সব দেশ থেকে মার্চের তুলনায় এপ্রিলে রেমিট্যান্স কমেছে। এপ্রিলে কাতার থেকে দুই কোটি ৮৫ লাখ ডলার, জার্মানি থেকে ১৬ লাখ ডলার, মালয়েশিয়া থেকে ১২ কোটি ৪৬ লাখ, ইতালি থেকে এক কোটি ৮২ লাখ এবং দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।অন্যদিকে আগের মাসের তুলনায় এপ্রিলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমলেও মোট রেমিট্যান্সে ভূমিকা রাখা উল্লেখযোগ্য দেশ সৌদি আরব থেকে এসেছে ২৯ কোটি ৮৩ লাখ, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২৩ কোটি ৮২ লাখ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৯ কোটি ছয় লাখ, ওমান থেকে আট কোটি ১২ লাখ, বাহারাইন থেকে আট কোটি ৯৫ লাখ এবং যুক্তরাজ্য থেকে ছয় কোটি ৪৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কুয়েত থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৮৮ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ৯১ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। লিবিয়া থেকে এ ১০ মাসে এসেছে তিন কোটি ৭৬ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে আসা রেমিট্যান্সের প্রায় অর্ধেক। যুক্তরাজ্য থেকে আগের অর্থবছরের ১০ মাসে ৭৫ কোটি ৭৮ লাখ ডলার আসলেও এ অর্থবছরের এর পরিমাণ ৬৫ কোটি ১৬ লাখ ডলার। একইভাবে জার্মানি, জাপান ও ইরান থেকেও রেমিট্যান্স কমেছে। রেমিট্যান্স প্রেরণকারী শীর্ষ দেশ সৌদি আরব থেকে (জুলাই-এপ্রিল) সময়ে ২৭৪ কোটি এক লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এদেশ থেকে ২৫৮ কোটি পাঁচ লাখ ডলার এসেছিল। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে যেখানে ২৩৪ কোটি পাঁচ লাখ ডলার এসেছে আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২২১ কোটি ২২ লাখ মার্কিন ডলার। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, ওমান ও বাহারাইন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশ থেকে আগের অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের চেয়ে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়েছে। – See more at: http://www.sangbad.com.bd/business/2015/06/06/11424#sthash.Pp2Ev4na.dpuf