কথা রেখেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত বছরের বাজেট বক্তৃতায় তিনি চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে শিশু বাজেট উপস্থাপনের কথা বলেছিলেন। এই প্রতিশ্রæতি তিনি পূরণ করেছেন। আর এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো আলোর মুখ দেখেছে শিশু বাজেট। শিশুদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এমন পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের শিশু-সংশ্লিষ্ট ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে ‘শিশুদের নিয়ে বাজেট ভাবনা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় গতকাল বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদন প্রসঙ্গে বলেন, শিশুদের চাহিদা পূরণ, অধিকার ও কল্যাণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত কর্মসূচি, উন্নয়ন প্রকল্প ও কার্যক্রমসমূহ বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এ থেকে জাতীয় বাজেটে শিশুদের উন্নয়নে যে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে বা যেসব কার্যক্রম গ্রহণ ও নীতিকৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে সে সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু বাজেট প্রণয়ন করতে হলে সব মন্ত্রণালয়াধীন শিশুকল্যাণ-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমকে বিবেচনায় নিতে হবে। তবে সবার আগে প্রয়োজন এসব কার্যক্রম চিহ্নিতকরণ এবং তাদের প্রভাব মূল্যায়নের জন্য একটি উপযুক্ত কাঠামো প্রণয়ন। আমরা এই কাজটি পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করার আশা রাখি।
জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী জানান, সরকার ‘স্ট্রেনদেনিং ক্যাপাসিটি ফর চাইল্ড ফোকাসড বাজেটিং ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছে। এ প্রকল্পের কার্যক্রম জুলাই থেকে শুরু হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শিশুদের কল্যাণে বরাদ্দকৃত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ ও শিশু খাত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সক্ষমতা বাড়বে।
শিশুদের নিয়ে বাজেট ভাবনার ভূমিকায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের ১৬টি দেশের একটি দেশ যেখানে শিশুমৃত্যু এবং সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষায় ছেলে ও মেয়েদের নিট ভর্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে। তিনি বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে লিঙ্গসমতা আনয়ন, ৫ বছরের নিচের শিশুমৃত্যু হার হ্রাস, নিরাপদ পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিতে বরাদ্দ প্রয়োজন। এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা শিশুদের জন্য স্বতন্ত্র কোনো বাজেট নয়। এটা প্রকৃতপক্ষে একটি কাঠামো যা টেকসই মানবিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
এদিকে শিশুদের অধিকার নিয়ে কর্মরতরা সরকারের শিশু বাজেট ঘোষণার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি সমন্বয়ক আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, সরকারের এ ধরনের উদ্যোগের জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে শিশু বাজেট কে সমন্বয় করবে, বাজেট যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলো কি না, তার জবাবদিহি কার কাছে থাকবে তাও নির্ধারণ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, পাঁচটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় হচ্ছে- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
আবদুল্লাহ-আল-মামুন পুরো শিশু বাজেটের বিষয়টি সমন্বয় করার জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা একটি শিশু অধিদপ্তর গঠনের জোর দাবি জানান। তার মতে, এ অধিদপ্তর সমন্বয়ের কাজটি করবে। তা না হলে এক বছর পরে এ বাজেট বাস্তবায়নের চিত্র পাওয়ার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ঘুরতে হবে।