প্রশ্ন ফাঁস রোধে যশোর বোর্ডের অনন্য উদ্যোগ:শিক্ষার্থীরাও প্রশ্ন তৈরির সুযোগ পাবে

মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন ধারণা সৃষ্টি করতে যাচ্ছে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। প্রশ্ন ব্যাংক পদ্ধতির মাধ্যমে নতুন এই ধারার সৃষ্টি হতে চলেছে। ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিক, বার্ষিক, প্রাক ও নির্বাচনী পরীক্ষার প্রশ্ন এই ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করতে হবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। এর মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ, মানসম্মত সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়ন ও পরিশোধনে শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষাকে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এ পদ্ধতিতে শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও প্রশ্ন তৈরির সুযোগ পাবেন।

যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র জানান, বর্তমানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক— সকলে পরীক্ষাকেই শিক্ষার মূল লক্ষ্য মনে করছেন। এজন্য শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই বাদ দিয়ে গাইড বা নোটবই মুখস্ত করে ভালো ফলাফলের চেষ্টা চালাচ্ছে। যেকারণে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল হওয়ার পরিবর্তে মুখস্তনির্ভর হয়ে পড়ছে। শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের জন্য নিজেরা প্রশ্ন না করে গাইড বই, শিক্ষক সমিতি বা বিভিন্ন প্রকাশনীর কাছ থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে পরীক্ষা নিচ্ছেন। এ সমস্যা সমাধানকল্পে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খানের পরামর্শে প্রথম পর্যায়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডে তৈরি হচ্ছে প্রশ্ন ব্যাংক।

শিক্ষা বোর্ডের অধীন সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকগণ বাধ্যতামূলকভাবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠপুস্তক বোর্ডের সিলেবাস অনুযায়ী প্রশ্নপত্র তৈরি করবেন। প্রশ্নপত্র হবে নৈর্ব্যত্তিক, সৃজনশীল এবং রচনামূলক। শিক্ষকরা নিজেদের আইডি ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করবেন। প্রত্যেক প্রশ্নের অভিন্ন আইডি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরাও প্রশ্নপত্র তৈরি করে আপলোডের সুযোগ পাবেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আপলোডকৃত সকল প্রশ্ন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সম্পাদনা প্যানেল নিবাচন করবে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এ প্যানেল নির্বাচিত প্রশ্নপত্র শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত সফটওয়ারে জমা রাখবে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ তাদের অভ্যন্তরীণ অর্ধবার্ষিক, বার্ষিক, প্রাক ও নির্বাচনী পরীক্ষার জন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে প্রশ্ন ব্যাংক থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করবেন। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশ্নের আউটপুট ক্ষমতা শুধু প্রতিষ্ঠান প্রধানের থাকবে। কোন প্রতিষ্ঠান কতটা প্রশ্ন ডাউনলোড করেছে সেটা সময় ও তারিখ অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সার্ভারে  রেকর্ড থাকবে।

শিক্ষা বোর্ডের নিদের্শনা অনুযায়ী সকল শিক্ষকের প্রশ্নপত্র প্রশ্ন ব্যাংকে জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। প্রশ্নপত্র গৃহীত হলে শিক্ষক পয়েন্ট পাবেন। এ পয়েন্টের ভিত্তিতেই তারা পরীক্ষক, প্রধান পরীক্ষক হতে পারবেন। এছাড়াও তাদের পদোন্নতি, বিদেশে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে অর্জিত পয়েন্ট বিবেচিত হবে। একইসাথে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র গৃহীত হলে তাদের পয়েন্ট দেয়া হবে। এ পয়েন্ট দ্বারা তাদের পুরস্কৃত করারও ব্যবস্থা থাকবে। এ বিষয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র জানান, ‘প্রশ্ন ব্যাংক তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বুয়েটের সহযোগিতায় সফটওয়্যার তৈরির কাজ চলছে। বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটও (বিডিইইউ) এ বিষয়ে সহযোগিতা করছে। ২০১৫ সালেই আমরা পরীক্ষামূলকভাবে প্রশ্ন ব্যাংকের মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।