নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার তিস্তা নদীর অববাহিকায় ৪০টি গ্রামকে আলোকিত করেছে সৌরবিদ্যুত। তিস্তা নদীর ২৫টি চর ও অববাহিকায় ১৫টি গ্রামের বসবাসরত জনসংখ্যা ৮০ হাজার। ডিমলার উপজেলার পাঁচটি ও জলঢাকা উপজেলা তিনটি ইউনিয়নের তিস্তার পাশে বসবাসরত জনগোষ্ঠির একমাত্র ভরসা সৌরবিদ্যুত। সরকারিভাবে দুর্গম এলাকায় বিশেষ প্রকল্প নিয়ে সোলার প্যানেল স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন এলাকাবাসী।
ডিমলায় পূর্ব ছাতনাই ইউপির ঝাড়সিংশ্বের, ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী ইউপির কিসামত ছাতনাই, দোহলপাড়া, পাগলপাড়া, টেপাখড়িবাড়ীর পূর্ব খড়িবাড়ী, উত্তর খড়িবাড়ী, দক্ষিণ খড়িবাড়ী, জিনজিনপাড়া, টাবুরচর, চরখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানি ইউপির ছোটখাতা, পূর্ব বাইশপুকুর, পশ্চিম বাইশপুকুর, ঝুনাগাছ চাপানির ইউপির ছাতুনামা, সতিঘাট ও ভেন্ডাবাড়ী।
বর্তমানের তিস্তার পাড়ের ৪০টি গ্রামে সহস্রাধিক সোলার প্যানেল মাধ্যমে গ্রামবাসীর জীবনকে আলোকিত করেছে সৌরবিদ্যুৎ। গ্রামাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষ সৌরবিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করেছে তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিছিন্ন ও তিস্তার ভয়াল গ্রাসের কারণে এখানে বসবাসরতদের জীবনের বিদ্যুতের চাকা ঘুরেনি। কুপি আর হারিকেনের আলো জ্বালিয়ে অন্ধকারে পড়ে থাকা মানুষগুলোর বাড়িতে এখন সৌরবিদ্যুতের আলো ঝলমল করেছে। এলাকার স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা এখন সৌরবিদ্যুতের আলোতে করছে লেখাপড়া। তিস্তার দুর্গম চরের এলাকাগুলোতে রাতে বুঝার উপায় থাকে না। দূর থেকে মনে হয় সেখানে পল্লীবিদ্যুত জ্বলছে।
ডিমলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের দুর্গম চরের একতা বাজারে সৌরবিদ্যুতের আলোয় ব্যবসায়ীদের বিদ্যুত চাহিদা পূরণ করছে। ব্যবসায়ীরা জানায় বিদ্যুৎ আলো পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে। কারণ বাজারটির চতুরদিকে ঘিরে রেখেছে তিস্তা নদী। সেখানে ছোট-বড় ৩০টি প্যানেলে ২ শতাধিক দোকানকে আলোকিত করেছে সৌরবিদ্যুত।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তাদের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন এনজিও এগিয়ে আসেনি। এসব এনজিও দুর্গম এলাকার ধোয়াতুলে ঋণ দিতে রাজি হয়নি। বাধ্য হয়ে স্থানীয় মহাজনের নিকট চড়া সুদে ঋণ নিয়ে তাদের সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল তৈরি করতে হয়েছে। উপজেলা সদর থেকে টেপাখড়িবাড়ী হয়ে বাজারটির দূরুত্ব ১৫ কিলোমিটার হলেও তিস্তা নদীর কারণে তিস্তা ব্যারেজ হয়ে ঘুরে আসতে হচ্ছে ৬০ কিলোমিটার।
খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নে কিসামত ছাতনাই গ্রামের বাসিন্দা ও ২নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি বজলার রহমান জাগো নিউজকে বলেন, স্বাধীনতার ৪৪ বছরে তিস্তার দুর্গম এলাকা হওয়ায় তার বাড়িতে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ না হওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে চারটি সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বাড়ি আলোকিত করেছি।
পল্লীশ্রী রি-কল প্রকল্পের সমন্বয়কারী পুরান চন্দ্র বর্মন জাগো নিউজকে জানায়, সিবিও মাধ্যমে খগাখড়িবাড়ীর কিসামত ছাতনাই চরের ১২টি সোলার প্যানেল বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে। সোলার প্যানেলের আলোতে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার পাশাপাশি চরাঞ্চলের বিনোদনের জন্য প্রতিটি বাড়িতে টেলিভিশন ও রেডিও চলছে। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে দুর্গম এলাকায় লোকজন মোবাইল ফোনে চার্জ প্রদান করছে।
টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন জানায়, তার ইউনিয়নের ৭৫ শতাংশ মানুষকে গ্রাস করেছে তিস্তা নদী। সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থার করুণ দশা। বিভিন্ন এনজিও ব্যাপকভাবে ঋণের মাধ্যমে সোলার প্যানেল তৈরি করেলে এলাকার শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার সহায়ক ও সমাজের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটতো।
ডিমলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নায়েমা তাবাচ্ছুম শাহ জাগো নিউজকে বলেন, ডিমলা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মন্দির, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ২০৩টি সোলার প্যানেল বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে।
নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, তিস্তার দুর্গম এলাকার মসজিদ, মাদরাসাসহ সকল প্রতিষ্ঠানে শতভাগ বিদ্যুতায়নের করার জন্য সরকারিভাবে বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দুর্গম এলাকার ৫০ ভাগ মানুষকে বিনামূল্যে সোলার প্যানেল সরবরাহ করা হয়েছে। যেসব গ্রাম এখনো বিদ্যুতের কারণে অন্ধকারে রয়েছে। সেসব গ্রামকে (সোলার প্যানেল) সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে।