বড় বিনিয়োগের হাতছানি

পরিবেশগত উন্নয়নের পাশাপাশি বৈচিত্র্য এসেছে বাংলাদেশের জুতা শিল্পে। ইতিমধ্যে ৫১টি বিদেশি কম্পানি চামড়া ও জুতা শিল্পে যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে

বিশ্বমানের জুতা উৎপাদনের পাশাপাশি পরিবেশগত উন্নয়নের দিকেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের চামড়াশিল্প। আর তাই বৈশ্বিক ক্রেতাদের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিও এখন এদিকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনা হবে বাংলাদেশের চামড়াশিল্প। ইতিমধ্যে দেশের জুতা ও চামড়াশিল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে অর্ধশতেরও বেশি বিদেশি কম্পানি। ২০১৪ সালের মে মাসে বাংলাদেশের চামড়াশিল্প রপ্তানিতে ১০০ কোটি ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। এমনকি গত পাঁচ বছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি এসেছে ২৫ শতাংশ করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের চামড়াশিল্পে পরিবেশগত উন্নয়নের পাশাপাশি পণ্যের বৈচিত্র্য আসছে। তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ও বিশ্বমানের জুতা। এমনকি নন-লেদার জুতা তৈরিতেও যথেষ্ট এগিয়ে গেছে বাংলাদেশে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, গত অর্থবছরে নন-লেদার জুতা রপ্তানি ১৭১.৫৭ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।

এশিয়া ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কমপক্ষে ৫১টি বিদেশি কম্পানি বাংলাদেশের চামড়াশিল্পে যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চীনা একটি কম্পানি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ২১.৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে। যাতে কাজ করবে তিন হাজার শ্রমিক। এ শিল্পসংশ্লিষ্টরা জানায়, সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তর হলে পাকা চামড়া তৈরি ও জুতার কারখানায় শ্রমশক্তি দ্বিগুণ হবে। এতে বিশেষভাবে উপকৃত হবে নারী শ্রমিকরা। যারা মোট শ্রমিকের ৭০ শতাংশ।

তাদের মতে, চামড়া খাত গ্রাম ও শহরের নারীদের জন্য অর্থনৈতিক সম্ভাবনার এক নতুন সুযোগ। যা বিকশিত হলে দেশের আর্থসামাজিক খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। বিশ্বে চামড়ার বাজারে তিনটি বৃহৎ রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে চীন, ভিয়েতনাম ও ব্রাজিল। এ তিন দেশে গত কয়েক বছরে শ্রম খরচ বেড়ে যাওয়ায় কম্পানিগুলো অন্য দেশে কারখানা স্থানান্তরের চিন্তা করছে। আর পরিবেশগত দিক থেকে উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশ সেই সুযোগ নিতে পারে।

বিপুল রপ্তানির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জুতাশিল্পে বর্তমানে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে অ্যাপেক্স। এমনকি ভারত উপমহাদেশেরও অন্যতম বৃহৎ জুতা কম্পানি হয়ে উঠেছে এটি। যারা এখন বিশ্ব প্রতিযোগিতায়ও এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের ৪০ দেশের ১৩০ খুচরা কম্পানির কাছে বছরে ৪৫ লাখ জোড়া জুতা রপ্তানি করে অ্যপেক্স ফুটওয়্যার। এ কম্পানির জুতার বৈশ্বিক ক্রেতার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জেসি পেনি, জাপানের এবিসি মার্ট এবং জার্মানির ডিচম্যানসহ বড় বড় আরো অনেক খুচরা প্রতিষ্ঠান।

এর পাশাপাশি দেশীয় বাজারের জন্য কম্পানি বছরে তৈরি করে ৩০ লাখ জোড়া জুতা। যা ৫৫০টি আউটলেটের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিক্রি হয়। অ্যপেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মঞ্জুর এলাহী বলেন, ‘আমরা কারখানার কমপ্লায়েন্স মানের পাশাপাশি শ্রমিকদের সুবিধাদিকে নিজেদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হিসেবেই দেখেছি।’ তিনি জানান, জুতা তৈরিতে দায়িত্বশীল ভূমিকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স মনিটরিং অর্গানাইজেশনের কাছ থেকে বৈশ্বিক স্বীকৃতিও পেয়েছে অ্যপেক্স ফুটওয়্যার। কম্পানির এমডি হিসেবে রয়েছেন এলাহীর ছেলে নাসিম মঞ্জুর। যিনি বাংলাদেশ থেকে কম্পানির বৈশ্বিক বাণিজ্য দেখাশোনা করছেন।

নাসিম মঞ্জুর জানান, বর্তমানে বিশ্বের জুতা বাজারে ৬০ শতাংশ উৎপাদন নিয়ে বেশির ভাগ চীনের দখলে থাকলেও দেশটিতে শ্রম মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এ সুযোগ বাংলাদেশ নিতে পারে। কারণ বাংলাদেশের শ্রম মজুরি চীনের চেয়ে এক-চতুর্থাংশ কম। তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের জুতাসহ চামড়া রপ্তানি ২০১০ সাল থেকে দ্বিগুণ হয়েছে। রপ্তানি ১.১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। যদিও বৈশ্বিক বাজারে তা ১ শতাংশেরও কম। তবে বাংলাদেশের এ রপ্তানির ১৫ শতাংশই অ্যাপেক্স গ্রুপের।

সাবেক কূটনীতিক ও স্বতন্ত্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ফারুক সোবহান বলেন, ‘বাংলাদেশের জুতার বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে অ্যাপেক্স এবং এ কম্পানি অন্যদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও অনুপ্রেরণা।’ ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার বর্তমানে বাংলাদেশে জুতার খুচরা বাজারে দ্বিতীয় বৃহৎ কম্পানি। এটি ক্রমান্বয়ে জাপান, চীন ও ব্রাজিলসহ বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোতে ব্যবসা বিস্তৃত করছে। এশিয়া ফাউন্ডেশন, ফোর্বস