চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৪৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল দুপুরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি। গত অর্থবছরের ওই সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৪০ শতাংশ। এবার নয় মাসে মোট ৩৬ হাজার ৯২৩ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে, যা গত অর্থবছর একই সময়ে হয়েছিল ২৯ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকার।
চলতি অর্থবছরের জন্য মোট ৭৫ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ৫০ হাজার ১০০ কোটি এবং প্রকল্প সাহায্য ২৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। তবে অর্থবছরের শুরুতে মূল এডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকার।
দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় এডিপি বাস্তবায়ন হার কমে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, শুষ্ক মৌসুমে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামত কাজ বেশি হয়। তাই নভেম্বর থেকে মার্চ সময়ে সড়ক ও সেতু নির্মাণ এবং মেরামত প্রকল্পের গতি অনেক বেশি থাকে। তবে এবার শুষ্ক মৌসুমে লক্ষ্য অনুযায়ী ভৌত অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর কাজ এগোয়নি। উন্নয়ন বরাদ্দ ছাড় করলেও নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ জটিলতায় অর্থ ব্যয় করা যাচ্ছে না। দেশের চলমান সমস্যা নিরসন হলে এডিপি বাস্তবায়নে গতি আনতে হবে। কেননা এডিপি বাস্তবায়ন হার ভালো না হলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হারও অর্জিত হবে না।
জানা গেছে, বেশকিছু মন্ত্রণালয় এডিপি বাস্তবায়নে পিছিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে আছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে এডিপি বাস্তবায়নে ভালো করছে সংসদ বিষয়ক বিভাগ, ধর্ম মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুল্ক মৌসুমে কাজের গতি বেড়ে যায় বলে ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়ন বরাদ্দের সিংহভাগ অর্থ ছাড় করা হয়। কিন্তু জানুয়ারির শুরু থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতায় কাজের গতি কমে যাওয়ায় এখন আর অর্থ ব্যয় হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে এডিপি বাস্তবায়নে সওজের কার্যক্রম বেশি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, পরিকল্পনা কমিশনের জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও পরিসংখ্যান বিভাগের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব কানিজ ফাতেমা, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।