গত ১৯ মার্চ থেকে ২২ মার্চ ভারতের ইনডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) কানপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে এশিয়ার প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিযোগিতা টেক্রিটি—২০১৫। বুয়েটের তিনটি দলই দারুণ সফলতা অর্জন করে। আইএআরসি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন-রানার্স আপ এবং শাফল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন পদক তুলে নেয় নিজের ঝুলিতে। তাদের সাফল্য নিয়ে জানাচ্ছেন নাদিম মজিদ
১৮ মার্চ কানপুরের আইআআটি হোস্টেলে বসেই বাংলাদেশ— ভারতের খেলা দেখছিলেন বুয়েটের ছাত্ররা। হোস্টেলের অন্য শিক্ষার্থীদের সবাই ভারতীয়। খেলা দেখতে দেখতে মনটা বিষণ্ন হয়ে পড়ছিল। আম্পায়ারের বাজে সিদ্ধান্তগুলো বাংলাদেশের বিপক্ষে যাওয়ায় মন ভার। দল হেরে গেলে সান্ত্বনা দেয়ার কেউ ছিল না। কিন্তু মনের ভেতর একটা জেদ চেপে যায়। বুয়েট এসি-ডিসি দলের সদস্য রাকিবুল ইসলাম চৌধুরীর ভাষায়,‘এখানে বাংলাদেশ হেরে গেছে। কিন্তু অন্য কোথাও বাংলাদেশকে জিতিয়ে দিতে হবে।’
জেদ বেশিদিন বয়ে নিয়ে যেতে হয়নি। পরদিন ১৯ মার্চ আসে বাংলাদেশকে প্রমাণ করার সুবর্ণ সুযোগ। ইন্টারন্যাশনাল অটোনোমাস রোবটিক চ্যালেঞ্জ (আইএআরসি) প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নেয় বুয়েটের দুটি দল। ভিসা জটিলতার কারণে বুয়েট ফায়ার ফ্লাইসের আরাফাত মাহমুদ এবং সামস-উজ-জামান প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেননি। ফলে ফায়ার ফ্লাইস দল থেকে একাই লড়েছেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাখাওয়াত হোসেন এবং বুয়েট এসি-ডিসি দলে লড়েছেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মো: নাঈম রেজা, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এডিএম মারজান আল জান্নাত এবং রাকিবুল ইসলাম চৌধুরী (সীমান্ত)।
আএআরসি প্রতিযোগিতার দুটো ধাপ। সাদা মেঝের উপর কালো দাগের গোলকধাঁধা সমাধান করে দেয়াল দিয়ে বানানো গোলকধাঁধা সমাধান করতে হবে। বুয়েট ফায়ার ফ্লাইস এ কাজটি সমাধান করেছে ৪০ সেকেন্ডে এবং বুয়েট এসি-ডিসির সময় লেগেছে ৪৪ সেকেন্ড। একটি প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন- প্রথম রানার্স আপ দুটো দল-ই বাংলাদেশের। দেখিয়ে দিতে পারার কাজটি করেছে দল দুটোই।
ইমেজ প্রসেসিং ভিত্তিক শাফল প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বুয়েট এক্সপোনেনসিয়াল। দলে ছিলেন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আবুল আল আরাবী এবং খালেদ বিন মঈনউদ্দিন। ভিসা জটিলতায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’ অংশ নিতে পারেননি। এ প্রতিযোগিতায়ও চ্যাম্পিয়ন হন বুয়েট এক্সপোনেনসিয়াল। প্রতিযোগিতাটি সম্পর্কে খালেদ জানান, ‘মেঝের উপরে কার্নিশে ক্যামেরা ছিল। ক্যামেরা মেঝের তথ্যগুলো নিয়ে ল্যাপটপে পাঠাত। এ তথ্যগুলো অনুসারে রোবটকে পরিচালিত করতে হয়েছে। মেঝেতে কিছু লাল এবং সবুজ বক্স ছিল। লাল বক্স লাল গর্তে এবং সবুজ বক্স সবুজ গর্তে রোবট দ্বারা বসানো ছিল কাজ। প্রতিযোগিতায় আমরাই কেবল নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে সবগুলো বক্স নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে পেরেছি।’
আইএআরসি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন বুয়েট ফায়ার ফ্লাইস ১ লাখ রুপি, প্রথম রানার্স আপ বুয়েট এসি-ডিসি সাড়ে ৪৭ হাজার রুপি এবং ক্যাননের একটি ক্যামেরা, শাফল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন বুয়েট এক্সপোনেনসিয়াল ৩৫ হাজার রুপি পুরস্কার হিসেবে পায়।
প্রতিযোগিতায় একা লড়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বুয়েট ফায়ার ফ্লাইস দলের শাখাওয়াত হোসেন। তিনি জানান, ‘আমরা প্রতিযোগিতাটি নিয়ে প্রচুর হোমওয়ার্ক করেছি। টিমওয়ার্ক করেছি। ইচ্ছে ছিল এক সাথেই আইআইটিতে অংশ নেব। কিন্তু ভিসা জটিলতা এবং ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে দলের দুই সদস্য ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আরাফাত মাহমুদ এবং সামস-উজ-জামান যেতে পারেননি। তাই আমাকে একাই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হয়েছে।’
প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দল তিনটি পৌঁছেছে ২৬ মার্চ। ইতোমধ্যে ফেসবুক, মোবাইলে প্রচুর অভিনন্দন বার্তা পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাহিলা সারজানা এ অর্জন সম্পর্কে বলেন, ‘ এটি দারুণ একটি অর্জন। আমরা বুয়েটিয়ানরা বিশ্বাস করি, আমরা বিজয়ী হবো। যে কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এ বিশ্বাস কাজ দেয়। আমি মনে করি, আগামী কয়েক বছরের মাঝে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও আগ্রহের বিশ্ববিদ্যালয় হবে বুয়েট।’