মাগুরায় গমের বাম্পার ফলন

জেলায় চলতি মৌসুমে গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা ক্ষেত থেকে গম কাটতে শুরু করেছেন। তারা ভালো দামে গম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৮ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২ হাজার ১৫০ হেক্টর, শ্রীপুরে ২ হাজার ৯৩৫ হেক্টর, শালিখায় ৮শ’ হেক্টর ও মহম্মদপুর উপজেলায় ২ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে গমের চাষ করা হয়। আবাদকৃত জমি থেকে ১৭ হাজার ৬৩৩ টন গম উৎপাদিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, এ বছর চাষ হওয়া পুরো জমিতেই এ মৌসুমে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের আওতাধীন বাংলাদেশ গম গবেষণা ইন্সটিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বারি-২৫, ২৬, ২৭, ২৮,শতাব্দী, সৌরভ ও প্রদীপ নামের বিভিন্ন জাতের গম চাষ হয়। গম মূলত শীতকালীন ফসল। সাধারণত ১৫ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে গম লাগানোর উপযুক্ত সময়। গম উঠতে সময় লাগে ১৩৫ থেকে ১৪৫ দিন। কিন্তু বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গম মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই শীত কমে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। যে কারণে স্থানীয় জাত চাষ করে কৃষকরা সময়মত ফসল উঠাতে না পারার পাশাপাশি আশানুরূপ ফলনও পেত না। কিন্তু উচ্চ ফলনশীল জাতগুলো তাপমাত্রা সহনীয়। এ কারণে জেলার কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল জাতের গম চাষে ব্যাপকভাবে উৎসায়িত করা হয়। এর ফলে বারি উদ্ভাবিত গম চাষ করে কৃষকরা ভালো ফলন পাচ্ছেন।
আগে কৃষকরা শীতকালীন কাঞ্চন, সোনালিকাসহ স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত জাতের বীজ দিয়ে গম চাষ করে একর প্রতি ১০ থেকে ১৫ মণ ফলন পেতেন। কিন্তু বর্তমানে উচ্চ ফলনশীল জাতের গম চাষ করে কৃষকরা একর প্রতি ২৫ থেকে ৩০ মণ গম পাচ্ছেন। এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় একর প্রতি প্রায় ৪০ মণ গম ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন কৃষকরা।
সদর উপজেলার আঠারখাদা গ্রামের কৃষক পিকুল বিশ্বাস জানান, চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় তিনি প্রায় এক একর জমিতে বারি-২৭ ও ২৮ জাতের গম চাষ করে ভাল ফলন পেয়েছেন। আশা করছেন, চাষকৃত জমিতে ৩৫ থেকে ৪০ মণ গম ফলন পাবেন।
বটিকাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক রতন ম-ল জানান, কৃষি বিভাগের সহায়তায় তিনি প্রায় দেড় একর জমিতে বারি-২৬, ২৭ ও ২৮ জাতের উচ্চ ফলনশীল জাতের গম চাষ করেছেন। আধুনিক পদ্ধতিতে গম চাষে কৃষি বিভাগ তাকে সহযোগিতা করেছে। চাষকৃত জমি থেকে চলতি মৌসুমে তিনি প্রায় একশত মণ গম পাবেন বলে আশা করছেন।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত কুমার চক্রবর্তী জানান, উচ্চ ফলনশীল জাতের গম চাষে কৃষকদের ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করায় জেলায় চলতি মৌসুমে ব্যাপকভাবে এর চাষ হয়। এছাড়া আবহাওয়া অনুকূল থাকায় গমের বাম্পার ফলন হয়। কৃষকরা জমি থেকে গম কাটতে শুরু করেছেন। ভালো দামে কৃষকরা গম বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন।
বরিশাল : বিভাগে চলতি মৌসুমে গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার ৪ হাজার ৭৪৮ হেক্টর বেশি জমিতে গমের ফলন হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। বিভাগের ৬টি জেলায় ৪ হাজার ৯৮১ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৭২৯ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ জমি। বরিশাল কৃষি বিভাগ জানায়, বিভাগের মোট গম আবাদের মধ্যে বরিশাল ও ভোলায় আবাদ হয়েছে দিগুণ জমিতে। বরিশালে ১ হাজার ১৪৭ হেক্টরের বিপরীতে আবাদ হয়েছে ২ হাজার ২৪৭ হেক্টর এবং ভোলায় ৩ হাজার ৩২২ হেক্টরের বিপরীতে ৬ হাজার ১৬০ হেক্টর জমি। এছাড়া পিরোজপুরে ১২৩ হেক্টরের মধ্যে ২৮৫ হেক্টর আবাদ। ঝালকাঠিতে আবাদ হয়েছে ২৪৬ হেক্টর আর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩১ হেক্টর। একইভাবে পটুয়াখালীতে ১৬৬ হেক্টরের বিপরীতে ৫৫৬ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। বরগুনায় ৯২ হেক্টরের মধ্যে ২৩৫ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাগুলোতে নতুন গম কাটা শুরু হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় চাষিরা মহাউৎসাহে ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। এবার লক্ষ্যমাত্রাকৃত জমি থেকে ১৫ হাজার ৪৪১ মেট্রিক টন গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে দিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানায়।