চট্টগ্রামে দ্বিগুণ ফসল উত্পাদন সম্ভব

দেশের মোট উত্পাদিত ফসলের একটা বড় অংশ আসে চট্টগ্রাম জেলা থেকে। তবে এই অঞ্চলের পাহাড়ি ও সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার অনাবাদী জমিগুলো কাজে লাগাতে পারলে বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ ফসল উত্পাদন করা যাবে বলে মনে করেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এই জেলার কোন্ এলাকা কোন্ ফসলের উপযোগী তার একটি জরিপ করা প্রয়োজন। পানি সংরক্ষণ, গভীর নলকূপ স্থাপন করে অনেক এলাকায় বোরো আবাদ ও মৌসুমী সবজি চাষ বাড়ানো যেতে পারে। চট্টগ্রামে এমন কিছু জাতের ফসল হয় যা দেশের অন্য কোন অঞ্চলে উত্পাদিত হয় না। এদিক থেকেও অনন্য চট্টগ্রাম।

কৃষিবিদরা জানান, চন্দনাইশের পেয়ারা, হাটহাজারীর মরিচ, দোহাজারীর গোল আলু, সীতাকুণ্ডের সীমের দেশজুড়ে খ্যাতি রয়েছে। চন্দনাইশ, সীতাকুণ্ড, পটিয়া, বোয়ালখালী, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া ও বাঁশখালীতে প্রচুর পাহাড় রয়েছে। এসব পাহাড়ে ফসল আবাদের উপযোগী প্রচুর এলাকা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পাহাড়ের মাঝে চাষের উপযোগী সমতল জমির সদ্ব্যবহার হচ্ছে না। চন্দনাইশ ও পটিয়ার কিছু পাহাড়ি এলাকায় পেয়ারার চাষ হয়। সুস্বাদু এসব পেয়ারা বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। কৃষি বিভাগের মতে, পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে পেয়ারা চাষকে আরো সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। এছাড়া পাহাড়ে আম, আনারস, লেবু জাতীয় ফল, কলা, কাঁঠালসহ নানা জাতীয় ফলের চাষ হলেও পরিকল্পিত উদ্যোগ না থাকায় উত্পাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। জাতীয়ভাবে এ বিষয়ে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজন। এক সময় বাঁশখালীর কালীপুর এলাকা লিচু উত্পাদনের জন্য খ্যাত ছিল। বর্তমানে সাতকানিয়ার চরতীসহ আরো কয়েকটি এলাকায় কৃষকরা নিজ উদ্যোগে লিচু বাগান করে সফলতা পেয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড, আনোয়ারাসহ সমুদ্র উপকূলীয় এলাকাগুলোর অনেক জমি এখনো কৃষি চাষের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। সহনীয় জাতের ফসলের বীজ, সেচের অভাবে এসব জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না। বর্তমানে চট্টগ্রামে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়ে থাকে। সেচের ব্যবস্থা করা গেলে আরো অন্তত ৩০ হাজার হেক্টর জমি বোরো চাষের আওতায় আনা যেতে পারে।

অধিদপ্তর জানায়, চট্টগ্রাম জেলায় আবাদযোগ্য প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে।   এর মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন, ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো, ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান, ৫০ থেকে ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে গ্রীষ্ম, শরত্ ও শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন জাতের বীজ উদ্ভাবনের ফলে বছর জুড়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নানা ধরনের সবজির চাষ হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের শস্য উত্পাদন কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমিনুল হক চৌধুরী বলেন, ধান ও সবজির প্রচুর নতুন জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। প্রয়োজন পরিকল্পিত উন্নয়নের। চট্টগ্রামে সম্ভাবনাময় শস্য ভাণ্ডার রয়েছে। সেচের সম্প্রসারণ, আধুনিক জাত ও প্রযুক্তির ব্যবহার করা গেলে চট্টগ্রামে শস্য উত্পাদন দ্বিগুণ বাড়ানো যাবে। দেশের কৃষকরা অনেক পরিশ্রমী। কিন্তু উত্পাদিত শস্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না তারা।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এক সময় কৃষকরা শুধুমাত্র ইউরিয়া সার ব্যবহার করতো। এখন ৭ জাতের সার কৃষি খাতে ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে জমির উর্বর শক্তি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রামে ৮ হাজার ৪৬৯ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন, ৩ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে শরত্কালীন, ১৯ হাজার ৩৫১ হেক্টর জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ হয়ে থাকে। এসব ফসলের উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগ জানায়, গ্রীষ্মকালীন সবজির প্রতি হেক্টরে ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ১৪ মেট্রিক টন। তথ্য মতে মিষ্টি কুমড়া, পুঁইশাক, পানিকচু, মুখিকচু, বেগুন ও শসা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ থেকে ৫ মেট্রিক টন বেশি উত্পাদিত হয়েছে। সীতাকুণ্ড, বাঁশখালী, মিরসরাই, সন্দ্বীপ ও সাতকানিয়ায় সবচেয়ে বেশি গ্রীষ্মকালীন শস্য উত্পাদন হয়।

অন্যদিকে জেলায় ১৯ হাজার ৩৫১ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি উত্পাদন হয়। কৃষি বিভাগ এসব সবজির হেক্টর প্রতি লক্ষ্যমাত্রা ১৮ মেট্রিক টন নির্ধারণ করেছে। তবে বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, মিষ্টি কুমড়ার উত্পাদন  লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ থেকে ১৫ মেট্রিক টন বেশি হয়েছে। এসব ফসলের উত্পাদন বৃদ্ধির পেছনে নতুন জাত, সারের সুষম ব্যবহার, কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সেচের সম্প্রসারণ বেশি ভূমিকা রেখেছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানান।