অবশেষে ওটিসির দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা। ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) নামের বিকল্প এই বাজারকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (ডিএসই)। শুধু বিদ্যমান কোম্পানিগুলো নয়, আরও নতুন নতুন কোম্পানিও তালিকাভুক্ত করতে চায় তারা। আন্তর্জাতিক বাজারের আদলে গড়ে তুলতে চায় এ বাজারকে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, ওটিসি মার্কেটকে ঢেলে সাজানোর ওই পরিকল্পনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিএসই ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। ডিএসই’র পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ওটিসির শেয়ারও মূলবাজারের মতো সহজে কেনাবেচা করা যাবে। এজন্য আলাদা বোর্ড হবে। স্ক্রিনে দেখা যাবে শেয়ার কেনাবেচার আদেশ।
জানা গেছে, ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের (ব্যপস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথকীকরণ) পর ডিএসইকে লাভজনক করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে পরিচালনা পর্ষদ। এরই অংশ হিসাবে ওটিসি মার্কেটকে একটি আলাদা কাঠামোয় দাঁড় করাতে চায় ডিএসই। এ মার্কেটে মূল মার্কেটের মতো স্বয়ংক্রিয় লেনদেন, ছোট মূলধন কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করা, এর জন্য আলাদাভাবে সিডিএস করা চিন্তা করছে ডিএসই।
নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করা, উৎপাদন বন্ধ থাকা, স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্তি ফি পরিশোধ না করাসহ নানা কারণে আলোচিত ৫৪ কোম্পানিকে ২০০৪ সালের পর বিভিন্ন সময়ে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয়। কিন্তু জটিল লেনদেন প্রক্রিয়ার কারণে ওই বাজারে শেয়ারের কেনাবেচা হয় না বললেই চলে।
ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদ এটিকে আন্তর্জাতিক ওটিসি বাজারের মতো রূপ দিতে চায়। তাঁরা বলছেন, এটি হলে একদিকে যেমন ডিএসই’র আয় বাড়বে, অন্যদিকে ছোট মূলধনের কোম্পানিকে মূল বাজারে আনতে সহযোগিতা করবে। এতে করে মূল মার্কেটের কোম্পানির সংখ্যা দিনে দিনে বাড়বে।
উল্লেখ, ২০০৯ সালে ডিএসইতে ওটিসি মার্কেট চালু করা হয়। ছোটো মূলধনের কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির জন্য এ বাজারের জন্ম হলেও নতুন কোনো কোম্পানি এ বাজারে আসেনি। বরং মূল মার্কেটে কিছু মন্দ কোম্পানিকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এখানে পাঠানো হয়।
নানা অনিয়মের কারণে বিভিন্ন সময় ৬৮টি কোম্পানিকে শাস্তি হিসেবে ওটিসি মার্কেটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ইউসিবি, ডেল্টালাইফ, ওয়াটা কেমিক্যালসহ কয়েকটি কোম্পানি পরবর্তীতে মূলবাজারে ফিরে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসই’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের পর ডিএসই’র আয় বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ। এইর অংশ হিসাবে ওটিসি মার্কেটকে একটি আলাদা মার্কেট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর এর জন্য একটি নীতিমালা করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বালা বলেন, ‘ডিএসই’র ওটিসি মার্কেটকে মূল মার্কেটের মতো স্বয়ংক্রিয় করার চিন্তা করছি আমরা। যাতে এটি আন্তর্জাতিক ওটিসি মার্কেটের মতো হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ মার্কেটে কোম্পানি তালিকাভুক্তির ফি মূল মার্কেটর মতো হবে না। এখানে যে সব কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হবে, তাদের ফি মূল মার্কেটের তুলানায় অনেক কম হবে।’ এতে করে ছোট মূল ধনের কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা যাবে বলে মনে করেন তিনি।