গবেষণায় আবারও বিশ্বের শীর্ষ ১০০-তে বিআইডিএস

গবেষণায় সাফল্য অব্যাহত রাখায় বিশ্বের আট হাজার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আবারও সেরা ১০০-তে জায়গা করে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের থিংক ট্যাংক অ্যান্ড সিভিল সোসাইটিস প্রোগ্রামস (টিটিসিএসপি) গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্বের সেরা গবেষণা সংস্থার যে র‌্যাংকিং প্রকাশ করেছে তাতে বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের অবস্থান ৯৭তম। আগের বছরও একই অবস্থানে ছিল সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত এই সংস্থাটি।

পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, মানসম্পন্ন গবেষণা তৈরি, গবেষণার বৈচিত্র্য, জার্নাল প্রকাশ, সঠিক নেতৃত্বসহ নানা কারণে গতবারের মতো এবারও আন্তর্জাতিক গবেষণায় শীর্ষ ১০০-তে অবস্থান করছে বিআইডিএস। এ অর্জনকে সেরা সাফল্য হিসেবে দেখছেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক মোস্তফা কামাল মুজেরি। তিনি বলেন, বিশ্বের গবেষণা প্রতিযোগিতায় অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ১০০-এর মধ্যে স্থান করে নেওয়া অনেক বড় অর্জন।

এদিকে আট হাজার সংস্থার ওপর জরিপ করে টিটিসিএসপি সেরা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে এবারও প্রথম স্থান দখলে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকিং ইনস্টিটিউট। দ্বিতীয় স্থানও দখলে রেখেছে যুক্তরাজ্যের চ্যাথাম হাউস। আর তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস, সিএসআইএস ও বেলজিয়ামের ব্রুগেল।

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠান থিংক ট্যাংক অ্যান্ড সিভিল সোসাইটিস প্রোগ্রামস (টিটিসিএসপি) ২০০৭ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ পরিচালনা করে একটি র‌্যাংকিং করে থাকে। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘গ্লোবাল গো টু থিংক ট্যাংক ইনডেক্স ২০১৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি একযোগে বিশ্বের ৮১টি সংস্থায়, ৬২টি শহরে ও ৫১টি দেশে প্রকাশ করা হয়। এ নিয়ে অষ্টমবারের মতো থিংক ট্যাংক সূচক প্রকাশ করল প্রতিষ্ঠানটি। এ বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আট হাজার স্বায়ত্তশাসিত, স্বাধীন ও সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ পরিচালনা করে টিটিসিএসপি। এতে ২০ হাজার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

গবেষণায় আবারও বিশ্বের শীর্ষ ১০০-তে বিআইডিএস

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল বিআইডিএস ও টিটিসিএসপি যৌথভাবে এক সংলাপের আয়োজন করে। বিআইডিএস কনফারেন্স হলে আয়োজিত ওই সংলাপে জরিপের ফল প্রকাশ করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মোস্তফা কে মুজেরি। এ সময় পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য সাত্তার মণ্ডলসহ বিআইডিএসের গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।

মোস্তফা কামাল মুজেরি বলেন, মোট পাঁচটি ক্যাটাগরিতে এ বছর জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য সব দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ পরিচালনা করে সেরা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে। সেই তালিকায় বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের অবস্থান ৯৭তম। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাদ দিয়ে অন্যান্য দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওপর আলাদা যে জরিপ করা হয় তাতে বিআইডিএসের অবস্থান ৯৯তম। এ ক্ষেত্রে দুই ধাপ পেছানোর কারণ হিসেবে বলা হয়, জরিপের ক্যাটাগরি ভিন্ন ছিল। যদিও ২০১৩ সালের প্রতিবেদনেও বাংলাদেশ এই দুই ক্যাটাগরিতে একই অবস্থানে ছিল।

এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিআইডিএসের অবস্থান ১৭তম। যদিও এর আগের বছর অবস্থান ছিল ১৫তম। সে হিসাবে দুই ধাপ অবনমন হয়েছে সংস্থাটির। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুজেরি বলেন, এ বছর নতুন করে আরো এক হাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেখান থেকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ বছর খুব ভালো করেছে। সে জন্য বিআইডিএসের অবনমন হয়েছে বলে জানান তিনি। মুজেরি জানান, বাংলাদেশের আরো ৩৫টি গবেষণা সংস্থা এ জরিপে অংশ নিয়েছে।

জরিপে সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত থিংক ট্যাংক যারা স্বাধীনভাবে গবেষণা করে বা সরকারের অর্থায়নে করে, এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিআইডিএস ৩৩তম স্থান দখল করেছে। সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত থিংক ট্যাংক ক্যাটাগরি ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো করা হয়েছে। এতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ গ্রুপ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে জাপানের এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ইনস্টিটিউট ও নরওয়ের নরওয়েজিয়ান ইনস্টিটিউট অ্যাফেয়ার্স।

এ ছাড়া সেরা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন চিন্তাকেন্দ্র বা থিংক ট্যাংক ক্যাটাগরিতে বিআইডিএসের অবস্থান ২৪তম। এর আগের বছর এই ক্যাটাগরিতে বিআইডিএস ছিল ২৭তম। সে হিসাবে দুই ধাপ এগিয়েছে সংস্থাটি।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে যে জরিপ করা হয়েছে সেখানে পাঁচ নম্বর অবস্থানে রয়েছে দুর্নীতি নিয়ে কাজ করা টিআই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সব গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে যে জরিপ করা হয়েছে সেখানে সেরা পাঁচে নেই টিআই।

জিইডি সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, বিশ্বে থিংক ট্যাংক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাংলাদেশে বেসরকারিভাবে যেসব গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের মতামত ও চিন্তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। তাদের অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। এ ছাড়া ওইসব প্রতিষ্ঠান ডোনারের অর্থায়নে চলে। সে জন্য ডোনারের চাহিদার আলোকে গবেষণা করতে হয়। বিআইডিএস মহাপরিচালক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ভবিষ্যতে বিআইডিএস আরো ভালো করবে। আগামী বছর যাতে আরো ভালো করতে পারে সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।